সিসিটিভি নিয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। —নিজস্ব চিত্র।
নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই জরুরি। কিন্তু তার জন্য আলাদা করে সিসিটিভির দিকে তাঁর ঝোঁক নেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব নিয়েই নিজের পরিকল্পনার কথা জানালেন বুদ্ধদেব সাউ। মতামত প্রকাশ করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল ব্যবস্থা নিয়ে। পাশাপাশি, নবাগত পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে বিতর্কের আবহে নতুন উপাচার্যের আবেদন, ‘‘অকারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম করে এর ক্ষতি করবেন না। তা হলে মানুষেরই ক্ষতি হবে। আমি এ কথা বলছি না যে, দোষীরা শাস্তি পাবেন না। কোনটায় সকলের ভাল হবে, এই মুহূর্তে আমাদের সেটাই দেখা উচিত।’’
যাদবপুরকাণ্ড নিয়ে টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেই শনিবার বুদ্ধদেবকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস। বুদ্ধদেব যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই গণিতের অধ্যাপক। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর রবিবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে উপাচার্য হিসাবে নিজের পরিকল্পনার কথা জানালেন। বুদ্ধদেব বলেন, ‘‘কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে দেখতে হবে। সব জায়গাতেই উন্নতির পরিসর থাকে। আলাদা করে সিসিটিভি নিয়ে ভেবে লাভ নেই। সিকিউরিটি (নিরাপত্তা)-র বিষয়টি ভাল করে দেখতে হবে। সিসিটিভি তো প্রযুক্তি মাত্র। পরিবর্তে আরও অনেক ব্যবস্থা আছে। দেখতে হবে কোনটা করলে আমাদের সুস্থ মানের চিন্তাভাবনা ব্যাহত হবে না এবং সিকিউরিটিও বজায় থাকবে।’’
পড়ুয়ামৃত্যুর ঘটনায় বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল ব্যবস্থা। নবাগত ছাত্রকে র্যাগিং করা হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার। শুধু তা-ই নয়, হস্টেলের রাঁধুনি, নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে এককালে হস্টেলের আবাসিক থাকা বহু পড়ুয়াই সেখানে ‘র্যাগিংয়ের ইতিহাস’ নিয়ে মুখ খুলেছেন। এই পরিস্থিতিতে হস্টেল নিয়ে কী ভাবনা রয়েছে নতুন উপাচার্যের? বুদ্ধদেবের জবাব, ‘‘যাদবপুরের হস্টেলকে ফুল রেসিডেন্সিয়াল করার কথা ভাবা যেতে পারে। যদি রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্য করে।’’
গত ৩১ মে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সুরঞ্জন দাস। আচার্য বোসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন তিনি। পরে ওই পদে অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে যাদবপুরেরই ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অমিতাভ দত্তকে নিয়োগ করেছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু গত ৪ অগস্ট অমিতাভও ইস্তফা দেন। পরে জানা যায়, রাজ্যপাল বোসই তাঁকে বলেছিলেন ইস্তফা দিতে। এর পর আর নতুন করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে স্থায়ী বা অস্থায়ী ভাবে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। ফলত, উপাচার্যহীন হয়েই ছিল যাদবপুর। তার মধ্যেই গত ৯ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকের তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে প্রথম বর্ষের এক নবাগত পড়ুয়ার মৃত্যু হয়। সেই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় গোটা রাজ্য। সেই আবহে অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব নিলেন বুদ্ধদেব। এই পরিস্থিতিতে তাঁর ভূমিকা কী হবে, এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অস্থায়ী উপাচার্য বলেন, ‘‘আমি তো ২৪ ঘণ্টাই আছি। রেজিস্ট্রার ম্যাম (স্নেহমঞ্জু বসু)-এর সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি আসবেন বলেছেন। উনি এলে হয়তো কথা হবে।’’
বুদ্ধদেবের মত, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিনটি স্তম্ভ রয়েছে— প্রশাসন, ফ্যাকাল্টি (বিভিন্ন বিভাগ) এবং পড়ুয়ারা। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য প্রতিটি স্তম্ভেই সমান জোর দিতে হবে। এর মধ্যে একটি স্তম্ভ নড়ে গেলেই বিপদ। উন্নতির জন্য প্রতিটি স্তম্ভকে দায়িত্ব নিতে হবে। রিসোর্স ইউটিলাইজেশন অত্যন্ত জরুরি।’’
অন্য দিকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে চিঠি দিয়েছেন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশিই, তাঁর দাবি, বাম এব অতিবাম সংগঠনগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেআইনি কাজকর্ম করছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে পদক্ষেপেরও আর্জি জানিয়েছেন শঙ্কু।