মামণি সরকার
বিয়ে হয়েছে বহু বছর। কিন্তু সন্তান হয়নি। তা নিয়ে বাড়ির বৌয়ের কপালে নিয়মিত জুটত শাশুড়ির গঞ্জনা। স্বামী, ভাসুর, ননদ— গায়ে হাত তুলতে বাকি রাখেননি কেউই। শহরে আরও একটি বধূ-মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উঠে এল এমনই সব অভিযোগ।
এ বারের ঘটনাটি ঘটেছে কসবায়। মৃতার নাম মামণি সরকার (৩৭)। পুলিশ জানায়, কসবা থানা এলাকার এন কে ঘোষাল রোডের বাসিন্দা সুদীপ সরকারের সঙ্গে মামণির বিয়ে হয় ২০০৩ সালে। শ্বশুরবাড়ির দাবি, ২৪ অগস্ট রাত আটটায় দরজা বন্ধ করে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন মামণি। পুলিশ জানায়, শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই দরজা ভেঙে উদ্ধার করেন তাঁকে। এর পরে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় মামণিকে। পরদিন দুপুর ১২টা নাগাদ সেখানেই মৃত্যু হয় ওই বধূর। পুলিশ জানায়, ময়না-তদন্তের জন্য তাঁর দেহটি এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার, মর্গের বাইরে মামণির মা লীলাবতী দাস বলেন, ‘‘বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই মেয়েটার উপরে অত্যাচার শুরু করেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। নানা কারণে অশান্তি করা হতো ওর সঙ্গে। গত বৃহস্পতিবার শাশুড়ি বলেছিলেন, ‘তুই কোনও দিনও বাচ্চার মুখ দেখবি না।’ এর পরেই ফোন করে সে কথা জানায় মেয়ে। আমি বলেছিলাম, কটা দিন সহ্য কর। দিন কয়েকের মধ্যেই তোর দাদা গিয়ে নিয়ে আসবে।’’
বৃহস্পতিবার রাতেই জামাই সুদীপ ফোন করে শাশুড়িকে সব জানিয়ে, দ্রুত তাঁদের বাড়িতে চলে আসতে বলেন। মামণির মা ও বোন পশ্চিম মেদিনীপুরের বল্লভপুর থেকে ছুটে আসেন কসবায়। মামণির বোন কৃষ্ণা দাশ শিট বলেন, ‘‘যৌথ পরিবার। বনিবনার সমস্যা হচ্ছিল। মাঝেমধ্যেই স্বামী, ভাসুর, ননদ দিদির গায়ে হাত তুলতেন। এই ঘটনার তিন-চার দিন আগেও মারধর করা হয়েছিল ওকে। সন্তান না হওয়ায় স্বামীকে চিকিৎসা করানোর জন্য বলত দিদি। তা নিয়েও খুব সমস্যা হচ্ছিল।’’
পুলিশ জানায়, অগ্নিদগ্ধ স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে জখম হয়েছেন স্বামী সুদীপও। বর্তমানে নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন সুদীপ। মামণির মায়ের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে মামণির ভাসুর, জা এবং ননদকে। এ দিন মামণির শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।