দুর্ঘটনার পরে দু’ঘণ্টা আটকে চালকের পা

দুর্ঘটনায় মিনিবাসের ১৪ জন যাত্রী এবং বেসরকারি বাসটির চালক ও কন্ডাক্টর জখম হন। পুলিশ জানায়, আলমগির-সহ ন’জনকে আহত অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৫
Share:

অঘটন: দু’টি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আটকে পড়েছিলেন বেসরকারি বাসের চালক। উদ্ধার করা হচ্ছে তাঁকে (ডান দিকে)। শনিবার, স্ট্র্যান্ড রোডে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

দুমড়ে যাওয়া গিয়ার বক্সে আটকে রয়েছে পা। তা বার করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বছর বত্রিশের বাসচালক। কিন্তু কোনও ভাবেই পা বার করতে না পেরে এক সময়ে হাল ছেড়ে দিলেও মন শক্ত রেখেছিলেন তিনি। দু’ঘণ্টা পরে অবশ্য আটকে থাকা পা যখন বার করে আনা সম্ভব হল, তখন সেটি অসাড় হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

শনিবার সন্ধ্যায় স্ট্র্যান্ড রোডে একটি মিনিবাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে এ ভাবেই পায়ে গুরুতর চোট পেলেন একটি বেসরকারি বাসের চালক। ঘটনার দু’ঘণ্টা পরে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা তাঁর পা বার করতে সক্ষম হন। পুলিশ জানায়, ওই চালকের নাম সৈয়দ আলমগির কবীর। এ দিনের ওই দুর্ঘটনায় মিনিবাসের ১৪ জন যাত্রী এবং বেসরকারি বাসটির চালক ও কন্ডাক্টর জখম হন। পুলিশ জানায়, আলমগির-সহ ন’জনকে আহত অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ছ’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও চালক সৈয়দ আলমগির কবীর, কন্ডাক্টর হিমাংশু জানা ও হুগলির কুমিরমোড়ার বাসিন্দা শেখ আলফাজ হুসেনকে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল

সূত্রের খবর, ডান পা জখম হয়েছে আলফাজ হুসেনেরও। আর হিমাংশুর মুখে চোট লেগেছে। বাকি যাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের কারও মাথা ফেটেছে, কারও হাত ভেঙেছে, কারও বা কাঁধে চোট লেগেছে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ স্ট্র্যান্ড রোড ধরে হাওড়ার দিকে যাচ্ছিল যাত্রী-বোঝাই ধর্মতলা-সালকিয়া রুটের একটি মিনিবাস। সেই সময়ে উল্টো দিক থেকে স্ট্যান্ডে ফিরছিল পিকনিক গার্ডেন-বাবুঘাট রুটের বেসরকারি বাসটি। তাতে অবশ্য কোনও যাত্রী ছিলেন না। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, মিনিবাসটি নিয়ম মেনে রাস্তার বাঁ দিক ঘেঁষেই যাচ্ছিল। স্টেট ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যালয়ের সামনে আচমকাই উল্টো দিক থেকে আসা বেসরকারি বাসটি রাস্তার মাঝখানে চলে আসে। তখনই দু’টি বাসের মধ্যে ধাক্কা লাগে।

মুখোমুখি ধাক্কা লাগায় দু’টি বাসেরই চালকের কেবিন একটি আর একটির ভিতরে ঢুকে যায়। তবে মিনিবাসের চালক কোনও মতে পালিয়ে গেলেও বেসরকারি বাসটির চালক আলমগির তা পারেননি। চালকের আসনেই তিনি আটকে যান। তাঁর দু’টি পা-ই গিয়ার বক্সে আটকে যায়। দুর্ঘটনার পরেই ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটে এসে উদ্ধারকাজে হাত লাগান। অনেক চেষ্টার পরে তাঁরা ওই চালকের বাঁ পা বার করতে পারলেও ডান পা আটকেই থাকে। অন্য দিকে, তীব্র ঝাঁকুনিতে মিনিবাসের যাত্রীরাও ছিটকে পড়েন। মহিলা, পুরুষ, শিশু-সহ বেশ কয়েক জন জখম হন। ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদেরও উদ্ধার করেন। তবে ওই ঘটনার পরে মিনিবাসের চালক ও কন্ডাক্টর বাস ফেলেই চম্পট দেন।

খবর পেয়ে হেয়ার স্ট্রিট থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পুলিশ ও ব্যাঙ্কের কর্মীরা মিলে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু কোনও ভাবেই বার করা যাচ্ছিল না আলমগিরকে। পায়ে তীব্র যন্ত্রণা হলেও সকলের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। মাঝেমধ্যে একটু করে জল খেয়ে খানিকটা দম নিয়ে চোয়াল শক্ত করে যন্ত্রণা সহ্য করে বসেছিলেন। পরে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা গ্যাস কাটার এনে গিয়ার বক্স কেটে ওই চালকের পা বার করেন। চাঁদনি চকের একটি দোকানের কর্মী শেখ আলফাজ হুসেন বলেন, ‘‘প্রতি শনিবারই বাড়ি যাই। এ দিনও ধর্মতলা থেকে বাসে উঠেছিলাম। আচমকাই সামনে থেকে একটা বাস এসে এমন জোরে ধাক্কা মারল যে, আমরা সবাই ছিটকে পড়লাম।’’ ঘটনার পরে স্ট্র্যান্ড রোডের খানিকটা অংশে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন