বাসে পিষ্ট বৃদ্ধা, আধ ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থাকল দেহ

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম রীতি আম্বালি (৭০)। ঠাকুরপুকুরের পাঁচকড়ি ঘোষ রোডে তাঁর বাড়ি। আজ, বুধবার ময়না-তদন্তের পরে বৃদ্ধার মৃতদেহ আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়ার কথা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫৮
Share:

অসচেতন: দুর্ঘটনার পরেও চলছে ঝঁুকি নিয়ে বাস থেকে ওঠানামা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের কাছে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ট্রায়াঙ্গুলার পার্কে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক পথ-দুর্ঘটনায় পুলিশের তরফে গাফিলতির অভিযোগ উঠল। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, একটি সরকারি বাস থেকে নামতে গিয়ে ওই বাসের চাকায় পিষ্ট হওয়া বৃদ্ধাকে এ দিন রাস্তাতেই পড়ে থাকতে হয় দীর্ঘ ক্ষণ। সে সময়ে ঘটনাস্থলে দেখা মেলেনি কোনও পুলিশকর্মীর। শেষে আশপাশের লোকজন বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম রীতি আম্বালি (৭০)। ঠাকুরপুকুরের পাঁচকড়ি ঘোষ রোডে তাঁর বাড়ি। আজ, বুধবার ময়না-তদন্তের পরে বৃদ্ধার মৃতদেহ আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়ার কথা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ দিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে, ট্র্যাঙ্গুলার পার্কের কাছে একটি কাপড়ের বিপণির সামনে। সরকারি বাস থেকে নামতে গিয়ে পড়ে যান রীতিদেবী। বাসের চাকা তাঁর পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। ওই অবস্থাতেই তিনি রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ পড়ে ছিলেন। তবে বাসচালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে না গিয়ে বৃদ্ধাকে বাসের নীচ থেকে টেনে বার করার চেষ্টা করেন। রঞ্জিত আদক নামে এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘তখন ওই মোড়ে কোনও পুলিশ ছিল না। আধ ঘণ্টারও বেশি ওই অবস্থায় পড়ে ছিলেন বৃদ্ধা। বাসের চালক আর আমরা কোনওমতে তাঁকে টেনে বার করি।’’ আর এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে বৃদ্ধাকে সেখানে ভর্তির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হাসপাতালেই পৌঁছয় স্থানীয় রবীন্দ্র সরোবর থানার পুলিশ। তারাই রীতিদেবীকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা বৃদ্ধাকে মৃত ঘোষণা করেন।

Advertisement

এম আর বাঙুর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রীতিদেবীর বাঁ পায়ের গোড়ালি বলতে আর কিছু নেই। পাশাপাশি বুকেও চোট ছিল। হাসপাতাল থেকেই বৃদ্ধার বাড়ির লোকজনকে খবর দেওয়া হয়। ফোন পেয়ে হাসপাতালে আসা রীতিদেবীর এক প্রতিবেশী তাপসী ঘোষ বলেন, ‘‘রীতি বিয়ে করেননি। বাড়িতেই বাচ্চাদের পড়াতেন। বাবার পেনশনের টাকায় সংসার চলত তাঁর। সেই সঙ্গে কালীঘাটের একটি ইনস্টিটিউটেও তিনি প্রায়ই যেতেন। এ দিনও সেখানে যাওয়ার জন্যই বেরিয়েছিলেন।’’

সোমবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের ভূমিকায় প্রত্যক্ষদর্শীদের ক্ষোভ স্পষ্ট। তাঁদের অনেকেই অভিযোগ করেন, সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে ওই মোড়ে কোনও পুলিশকর্মী থাকেন না। দুর্ঘটনার পরেও পুলিশকে দেখা যায়নি। আগের মতোই মাঝরাস্তায় বাস থেকে ওঠানামা করছেন যাত্রীরা। যদিও এ দিনের ঘটনায় তাদের গাফিলতি ছিল বলে মানতে নারাজ পুলিশ। এলাকাটি রবীন্দ্র সরোবর থানার অন্তর্গত। সেখানকার কর্তব্যরত এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ঘটনার পরেই বাসটিকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশকর্মী না থাকা প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওই রাস্তার প্রতি মোড়ে আমাদের লোক থাকে। এ দিন পুলিশ না থাকার যে অভিযোগ উঠছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ রবীন্দ্র সরোবর থানা কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পূর্ব ডিভিশনের অন্তর্গত। সেখানকার পুলিশকর্তারাও স্রেফ বিষয়টি খতিয়ে দেখারই আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন