জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো। — ফাইল চিত্র।
রায়গঞ্জে নয়, জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতোকে পোস্টিং দিতে হবে আরজি করেই! আরও এক বার এমনটা জানিয়ে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। মাসখানেক আগে হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চও একই নির্দেশ দিয়েছিল। বৃহস্পতিবারের শুনানিতে সেই নির্দেশে হস্তক্ষেপ করল না ডিভিশন বেঞ্চ।
গত সেপ্টেম্বর মাসে উচ্চ আদালতে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর সিঙ্গল বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, অনিকেতকে আরজি করের অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগেই পোস্টিং দিতে হবে। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, এ সব ক্ষেত্রে যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর বা এসওপি মেনে চলা হয়, অনিকেতের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এতে সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা অর্থাৎ সমানাধিকারের ধারা অমান্য করা হয়েছে। তবে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে রাজ্য সন্তুষ্ট ছিল না। রাজ্যের আইনজীবী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত রায় স্থগিত রাখার আর্জি জানালে তা-ও খারিজ করে দেন বিচারপতি। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতে রাজ্যের আর্জি ফের খারিজ হয়ে গিয়েছে। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই বহাল রেখেছে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ।
আরজি করে চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ-খুনের পর রাজ্য জুড়ে যে গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার অন্যতম মুখ ছিলেন অনিকেত। গত মে মাসে জানা যায়, এ হেন অনিকেতকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে রায়গঞ্জে। সঙ্গে আন্দোলনের আরও দুই মুখ দেবাশিস হালদার এবং আসফাকুল্লা নাইয়াকেও যথাক্রমে মালদহের গাজোল এবং হুগলির আরামবাগে পোস্টিং দেওয়া হয়। তা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। এর বিরোধিতা করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন অনিকেত। আলাদা করে মামলা করেন বাকিরাও। তাঁদের প্রশ্ন ছিল, যদি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পছন্দ মতো পোস্টিং না পাওয়া যায়, তা হলে কাউন্সেলিং-এর অর্থ কী? মেধাতালিকারই বা প্রয়োজন কী? শুধু তা-ই নয়, মেধাতালিকায় বেছে বেছে শুধুমাত্র তাঁদের তিন জনকেই দূরে পোস্টিং দেওয়ার বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক’ বলেও ব্যাখ্যা করেছিলেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবারের রায়ের পর অনিকেত বলেন, ‘‘এটা অবশ্যই ন্যায় ও স্বচ্ছতার জয়। ইতিমধ্যেই পোস্টিং বিতর্ক নিয়ে সাত মাস কেটে গিয়েছে। এত দিন ধরে পছন্দের পেশা থেকে দূরে রয়েছি। আশা করব এ বার অন্তত আদালতের নির্দেশ মেনে আমাকে আরজি করে পোস্টিং দেওয়া হবে এবং দ্রুত সেখানে চিকিৎসক হিসাবে কাজ শুরু করতে পারব। এই গোটা ঘটনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছুই না। ভবিষ্যতে নিয়ম মেনে নিয়োগপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে, সেই আশা রাখি।’’