হাওড়া ব্রিজের উপরে ঘটনাস্থলে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য প্রয়োজন ছিল হাজার তিনেক টাকা। এ দিকে, বাবা, মা ও দিদি— তিন জনই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে আগেই বাজারে প্রচুর ঋণ হয়ে গিয়েছিল। তাই ছেলেকে ভর্তির ওই সামান্য টাকাও জোগাড় করতে পারেননি মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা মহম্মদ ইরফান। সব মিলিয়ে তীব্র মানসিক অবসাদে ভোগা ওই যুবক কাকভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন কাউকে কিছু না জানিয়েই। দুপুরে এসে দাঁড়িয়েছিলেন হাওড়া ব্রিজের ফুটপাথে। তখনই আচমকাই শোনেন, তাঁর নাম ধরে কেউ ডাকছেন। তাকিয়ে দেখেন, তাঁরই ছোট ভাই। দাদাকে খুঁজতে বেরিয়েছেন। আর অপেক্ষা করেননি বছর ছত্রিশের ওই যুবক। ভাইকে এক ঝলক দেখেই সেতুর রেলিংয়ে উঠে ঝাঁপ দেন গঙ্গায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনই ঘটনা ঘটেছে হাওড়া ব্রিজের ৩০ নম্বর স্তম্ভের সামনে। পুলিশ জানিয়েছে, মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা মহম্মদ একলাকের সামনেই তাঁর দাদা মহম্মদ ইরফান গঙ্গায় ঝাঁপ দেন। এর পরে পুলিশ গঙ্গায় তল্লাশি চালাতে উদ্যোগী হলেও ওই সময়ে জোয়ার চলায় তল্লাশি শুরু করতেই কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। পরে কলকাতা পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জেট স্কি, স্পিড বোট ও লঞ্চ নিয়ে তল্লাশি শুরু করে। যদিও সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই যুবকের কোনও খোঁজ মেলেনি।
পুলিশ জানিয়েছে, মহম্মদ ইরফানরা চার ভাই। সকলেই বিবাহিত। প্রত্যেকেই বৃদ্ধ বাবা, মা ও দিদির জন্য সাধ্য মতো আর্থিক সাহায্য করতেন। বছর তিনেকের মধ্যে একে একে বাবা, দিদি ও মা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় চার ভাইয়ের সংসারে কার্যত ঝড় বয়ে যায়। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েন পরিবারের মেজ ছেলে ইরফান। তিনি পেশায় অটোচালক। পুলিশ জানিয়েছে, তিন জনের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে প্রচুর দেনা হয়ে গিয়েছিল ওই যুবকের। তার উপরে পাঁচ বছরের ছেলেকে ভর্তির জন্য টাকা জোগাড় করতে না পারায় তীব্র মানসিক অশান্তিতে ভুগছিলেন তিনি। সে কথা পরিবারের সকলেই জানতেন।
এ দিন সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে ইরফানের ভাই একলাক বলেন, ‘‘ভোরবেলা কাউকে কিছু না বলেই দাদা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল। আমরা সকলেই পাগলের মতো ওকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু যখন খুঁজে পেলাম, ওকে আটকাতে পারলাম না। আমি দাদা বলে চিৎকার করতেই ও আমার চোখের সামনে গঙ্গায় ঝাঁপ দিল।’’ ওই যুবকের আক্ষেপ, তিনি না চেঁচালে হয়তো দাদা ওই ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিতেন না।