খালে পড়ে ইমরান খানের (ইনসেটে) দেহ। সোমবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ
খালের পাশে রাস্তার উপরে দাঁড় করানো সাদা একটি গতিধারার গাড়ি। জয় হিন্দ জল প্রকল্পের পাশে গাড়িটি দেখে পথচারীদের মনে হয়েছিল, সাত সকালে কেউ পাইপের জল দিয়ে গাড়ি ধুচ্ছেন।
ভুল ভাঙে খালের ধারে যেতেই। উপুড় হয়ে পড়ে একটি দেহ। বাঁ কানের পাশে মাথার পিছনে গভীর ক্ষত। পরনে কালো রঙের জিন্স, জামা বুক পর্যন্ত তোলা, এক হাতে গলানো নীল রঙের জ্যাকেট। সোমবার সকালে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস লাগোয়া প্রগতি ময়দান থানার পিছনেই আড়ুপোতা রোডের খাল থেকে এ ভাবেই উদ্ধার হল এক যুবকের দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম ইমরান খান (৩২)। বাড়ি সিআইটি রো়ড এলাকায়।
মৃতের পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে, এন্টালি বাজারে কাপড়ের দোকান থাকলেও রাতে মেজ ভাইয়ের গাড়িটি নিয়ে শাট্ল খাটতেন ইমরান। স্ত্রী এবং বছর ছয়েকের ছেলে ছাড়াও ইমরানের বাড়িতে আছেন বাবা-মা ও দুই ভাই। রবিবারও রাত ১২টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোন তিনি। রাত ২টো নাগাদ তিনি খুড়তুতো ভাই পারভেজকে ফোন করে চৌবাগার পথ জানতে চান। ওই সময়ে ইমরান জানান, শিয়ালদহ থেকে যাত্রী নিয়ে চৌবাগায় যেতে হবে। কিন্তু রাস্তা চেনেন না। রাস্তা জেনে নিয়ে ইমরান ফোন কেটে দেন। সোমবার সকালে তিনি বাড়ি না ফেরায় বাড়ির লোকেরা ফোন করে দেখেন মোবাইল বন্ধ।
এরই মধ্যে আড়ুপোতার এক ব্যক্তি দেখেন, খালের মধ্যে পড়ে একটি দেহ। প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে দাঁড় করানো গাড়ির নম্বর দেখে যুবকের পরিচয় জানতে গিয়ে দেখেন, সেটি সিআইটি রোডের বাসিন্দা এক যুবকের। খবর যায় বেনিয়াপুকুর থানায়। সেখান থেকেই খবর যায় ইমরানের বাড়িতে। পরে ইমরানের বাবা এবং দুই ভাই এসে দেহ শনাক্ত করেন।
ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ফরেন্সিক এবং লাল বাজারের হোমিসাইডের অফিসারেরা। পরীক্ষা করেন ঘটনাস্থলে দাঁড় করানো গাড়ি এবং আশপাশের এলাকা। পরে ফরেন্সিকের ডিরেক্টর ওয়াসিম রাজা জানান, ইমরানের মাথার পিছনে গভীর ক্ষত রয়েছে। ডান কান নেই। কিছু দিয়ে কাটা হয়েছে। গাড়ির চালকের আসনেও মিলেছে রক্তের ছোপ। গাড়িতে মিলেছে কিছু বোতল এবং প্লাস্টিকের গ্লাস। তরলগুলি পরীক্ষা করেই বলা যাবে সেটি কী।
যেখানে দেহ পড়েছিল, সেই খালের গাছগুলি ভেঙে গিয়েছে। তা দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, ধস্তাধস্তি হয়েছে। রাস্তা থেকে খাল পর্যন্ত দেহ টেনে নিয়ে যাওয়ার চিহ্নও আছে। কারণ, রাস্তায় পড়েছিল চাপ চাপ রক্ত। তবে ইমরানের পকেটে মানিব্যাগ থাকলেও মোবাইল ফোনটি পাননি তদন্তকারীরা।
কিন্তু কেন খুন হতে হল ইমরানকে? পরিবারের লোকজন কোনও শত্রুতার কথা স্বীকার না করলেও পুলিশের একটি সূত্রের খবর, বাজারে মোটা অঙ্কের টাকা ধার ছিল ইমরানের। তবে
পুলিশকর্তারা নিশ্চিত, খুন হয়েছে পরিকল্পনা করে। কারণ ঘটনাস্থল রাতের দিকে নির্জন থাকে ও আশপাশে সিসি ক্যামেরাও নেই। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, সহজেই খুন করে বেরিয়ে যাওয়া যাবে জেনে ওই এলাকা বেছেছিল খুনিরা।