ভয়াবহ আগুন কার্ডবোর্ড কারখানায়

ভোর সবে সাড়ে চারটে। বাড়ির লাগোয়া মন্দিরে পুজোর জোগাড়ের জন্য ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি। তখনও আলো ফোটেনি। কিন্তু পাখির ডাকে কান পাতা দায়। রোজই এমন সময়ে ওঠেন, কিন্তু এত পাখি তো কোনও দিন ডাকে না!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৪০
Share:

ভস্মীভূত কারখানা।— নিজস্ব চিত্র।

ভোর সবে সাড়ে চারটে। বাড়ির লাগোয়া মন্দিরে পুজোর জোগাড়ের জন্য ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি। তখনও আলো ফোটেনি। কিন্তু পাখির ডাকে কান পাতা দায়। রোজই এমন সময়ে ওঠেন, কিন্তু এত পাখি তো কোনও দিন ডাকে না! সন্দেহ হওয়ায় একটু এগিয়ে গিয়েই দেখেন, কার্ডবোর্ডের প্যাকেট তৈরির কারখানার এক পাশ দিয়ে আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে। ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে চারপাশ। লোকজন জড়ো হতে না হতেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা কারখানা এবং সংলগ্ন গুদামে। মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই পুড়ে ছাই কার্ডবোর্ডের কারখানা এবং গুদামটি।

Advertisement

পুলিশ জানায়, রবিবার ভোর চারটে নাগাদ উল্টোডাঙা খাল সংলগ্ন গুরুদাস দত্ত গার্ডেন লেনের একটি কার্ডবোর্ডের কারখানায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ১১টি ইঞ্জিন। কিন্তু কাজ করে ৬টি ইঞ্জিন। ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কারখানাটি দীর্ঘদিনের। রবিবার প্রায় সারারাত ধরেই কয়েক জন শ্রমিক কাজ করছিলেন কারখানার ভিতরে। ভোরে কাজ শেষ করে চলে যান তাঁরা। এরই কিছুক্ষণ পরে আগুনের শিখা এবং ধোঁয়া দেখা যায়। প্রথমে স্থানীয় লোকেরাই খাল থেকে বালতিতে করে জল নিয়ে এসে ঢালতে শুরু করেন। কিন্তু গুদামভর্তি কাগজের প্যাকেট থাকায় আগুন হু-হু করে বাড়তে থাকে। একটা সময়ে আগুনের শিখা এতটাই উঁচু হয়ে ওঠে যে পাশে একটি বটগাছের খানিকটা অংশ পুড়ে যায়। প্রচণ্ড গরমে তেতে ওঠে টিনের চাল। একপাশের দেওয়ালের খানিকটা অংশও ভেঙে পড়ে। যথারীতি আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। আশপাশের কয়েকটি কারখানায় আরও কয়েক জন শ্রমিক শুয়েছিলেন। তাঁরাও বেরিয়ে আসেন। ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছয় দমকলের দু’টি ইঞ্জিন। সে দু’টি কাজ শুরু করার পরে পৌঁছয় বাকি ইঞ্জিনগুলি।

Advertisement

দমকল জানাচ্ছে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে যেমন জল পাওয়াটাই প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, এখানে তেমনটা হয়নি। বরং কাছেই উল্টোডাঙা খাল থাকায় সেখান থেকে সরাসরি জল নেওয়া হয়। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয়েছে। ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যেই আগুন আয়ত্তে আসে। যদিও পুরোপুরি আগুন নিভতে গড়িয়ে গিয়েছে দুপুর। দমকলের এক কর্মী বলেন, ‘‘ভিতরে প্রচুর বস্তা ডাঁই করে রাখা ছিল। জলে ভিজে যাওয়ার পরেও সেগুলোর মধ্যে ধিকধিক করে আগুন জ্বলছিল। সে কারণেই পুরো আগুন নিভতে এতটা সময় লাগল।’’

পুলিশ জানিয়েছে, গুরুদাস দত্ত লেনের এই অঞ্চলটিতে পরপর বেশ কয়েকটি গুদাম এবং কারখানা রয়েছে। আগুন সময় মতো নিয়ন্ত্রণে না এলে বড় ধরন‌ের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। দমকল এবং স্থানীয় লোকেদের তৎপরতায় সেই বিপদ এড়ানো গিয়েছে। এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। তবে আগুন লাগার কারণ এখনও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন