ন’ঘণ্টায় ২২ জনকে পেসমেকার এসএসকেএমে

কিন্তু তাতেও কাজটি সহজ ছিল না। এক দিনে এত অস্ত্রোপচারের ধকলও তো রয়েছে। সেখানেই অসাধ্য সাধন করেছেন কার্ডিয়োলজি বিভাগের চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৫৬
Share:

এসএসকেএম হাসপাতাল। ফাইল চিত্র

এক দিনে বাইশ জনের বুকে পেসমেকার বসিয়ে নজির গড়ল এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিয়োলজি বিভাগ।

Advertisement

কারও বাড়ি সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে। কেউ হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের বাসিন্দা। হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকুনি অস্বাভাবিক আচরণ করায় সকলেরই পেসমেকার বসানোর প্রয়োজন ছিল। বাইশ জনের মধ্যে দু’জনের আবার প্রয়োজন ছিল জীবনদায়ী যন্ত্র আইসিডি-র (ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিওভার্টার ডেফিব্রিলেটর)। কিন্তু এত পেসমেকার আসবে কোথা থেকে? এসএসকেএম সূত্রের খবর, একযোগে এতগুলি যন্ত্র কিনতে আনুমানিক ৬০ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুমোদন মিলবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন কার্ডিয়োলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা। এই পরিস্থিতিতে অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানানো হয়। তাঁর তৎপরতায় স্বাস্থ্য দফতরের সবুজ সঙ্কেত আসতে দেরি হয়নি।

কিন্তু তাতেও কাজটি সহজ ছিল না। এক দিনে এত অস্ত্রোপচারের ধকলও তো রয়েছে। সেখানেই অসাধ্য সাধন করেছেন কার্ডিয়োলজি বিভাগের চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল। তাঁর সহযোগীর ভূমিকায় ছিলেন চিকিৎসক কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, শিবনাথ সিংহ, আদিত্য বর্মা এবং আর ভিগনেশ। সোমবার সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত টানা চলে বাইশ জনের অস্ত্রোপচার।

Advertisement

চিকিৎসকেরা জানান, শুধু পেসমেকার বসানো নয়। বাইশ জনের মধ্যে তিন জনের শারীরিক পরিস্থিতি জটিল ছিল। কুড়ি জনের হৃৎপিণ্ড পুরোপুরি ব্লক ছিল। সেই মাপকাঠিতেও সাফল্যের গুরুত্ব বেড়েছে।

জগৎবল্লভপুরের বাসিন্দা ৪২ বছরের যুবক সৈয়দ মইনুল হক সপ্তাহ দুয়েক আগে হাঁটার সময়ে আচমকা মাথা ঘুরে পড়ে যান। এসএসকেএমের কার্ডিয়োলজি বিভাগে দেখালে পেসমেকার বসানোর কথা জানান চিকিৎসকেরা। কিন্তু শারীরিক পরীক্ষার সময়ে দেখা যায়, মইনুলের দেহে হৃৎপিণ্ড বাঁ দিকের পরিবর্তে ডান দিকে রয়েছে। সুন্দরবনের বাসিন্দা শুকদেব বৈরাগী ‘ব্রুগোডা সিনড্রোমে’ ভুগছিলেন। আচমকা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন তিনি। বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ়ের শরীরে বসেছে আইসিডি। ওই যন্ত্র বসেছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক রেণুকা গুপ্তর শরীরেও।

কার্ডিয়োলজি বিভাগের চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল বলেন, ‘‘বাইশ জনের মধ্যে ডাবল চেম্বার ছিল ১৪ জনের। দু’জনের আইসিডি এবং বাকিদের সিঙ্গল চেম্বার পেসমেকার বসেছে। এটি কার্ডিয়োলজি বিভাগ, এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের দলগত সাফল্য।’’

বেসরকারি হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ চিকিৎসক রবীন চক্রবর্তী জানান, মাত্র ন’ঘণ্টায় বাইশ জনের শরীরে পেসমেকার বসানো সত্যিই দক্ষতার পরিচয়। যে কোনও চিকিৎসকের কাছে এটা গর্বের বিষয়। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু বলব, অস্ত্রোপচারের ঘরে এত ক্ষণ থাকার জন্য রেডিয়েশনের যে ঝুঁকি থাকে সে সম্পর্কে যেন সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।’’

এসএসকেএমের সুপার রঘুনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘এসএসকেএমের মুখ হল কার্ডিয়োলজি বিভাগ। ভাল কাজ করার একটা সংস্কৃতি এসএসকেএমে আছে। কার্ডিয়োলজি বিভাগের হাত ধরে আরও একবার সেই ঐতিহ্য বজায় থাকল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন