থানায় পড়ে থাকা গাড়ি মশার আস্তানা

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী ও  নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫২
Share:

অবহেলা: প্রগতি ময়দান থানায় পড়ে থাকা গা়ড়িতে গজিয়েছে গাছ। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য ও বিশ্বনাথ বণিক

বারবার বলেও কাজ হয়নি। বছরের পর বছর থানার সামনে পড়ে থাকছে পুরনো গাড়ির স্তূপ। তাতেই বর্ষার জল জমে ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশার আঁতু়ড়ঘর হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে পুরোমাত্রায়। কার্যত প্রাণভয়ে দিন কাটাচ্ছেন পুলিশকর্মী থেকে থানা সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। যদিও নাজেহাল পুরসভার দাবি, ‘কী করব? পুলিশকে তো জেলে ভরা যায় না!’

Advertisement

উত্তর থেকে দক্ষিণ— শহরের বিভিন্ন থানা ঘুরে রবিবার দেখা গেল, থানার বাইরের চিত্রটা একেবারেই বদলায়নি। পুরনো গাড়ির ভগ্নস্তূপেই ঘর করছেন পুলিশকর্মী এবং থানা লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা। ভয়াবহ অবস্থা ইএম বাইপাস সংলগ্ন প্রগতি ময়দান থানার। বছরভর ওই থানার সামনেই দাঁড় করানো থাকে মোটরবাইক এবং পুরনো ভাঙা গাড়ি। এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘থানায় আসার সময়ে বাড়ির লোকজন মশার ক্রিম মেখে বেরোতে বলেন। থানায় সর্বক্ষণ মশার কয়েল জ্বালানো হয়। তাতেও কাজ হয় না।’’ ওই থানারই এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘থানায় দু’মিনিট দাঁড়ালেই হাত ফুলিয়ে চাকা চাকা করে দেবে। গুলিতে নয়, মশায় খুব ভয়!’’ পুরনো গাড়ির স্তূপ থেকে সাপ বেরোতেও দেখেছেন বলে দাবি কয়েক জন পুলিশকর্মীর। প্রগতি ময়দান থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক অবশ্য বলছেন, ‘‘থানার পিছনেই মুলো খেত। সাপ তো থাকবেই। পুরনো গাড়ি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’

একই ভয় তাড়া করছে কড়েয়া থানা এলাকার বাসিন্দাদেরও। এক বাসিন্দার বক্তব্য, ‘‘ওই গা়ড়িগুলো থেকেই সাপ বেরোচ্ছে, মশা ছড়াচ্ছে। পুলিশকে বললে বলে, আপনারাই গাড়ির ব্যবস্থা করে আমাদের বাঁচান!’’ ময়দান থানার সামনে আবার পুরনো গাড়ির দোসর টায়ার। তাতেই অবাধে জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। ভাঙাচোরা গাড়ির পাশাপাশি তালতলা থানার মাথাব্যথা বন্ধ হয়ে থাকা ফোয়ারা। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘থানার ব্যারাকে চলতি মরসুমে তিন জনের ম্যালেরিয়া হয়েছিল। আমাদের বন্ধ ফোয়ারায় জল জমে থাকছে।’’ তালতলা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকের দাবি, ‘‘ফোয়ারার জল নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। গাড়িও সরানো হবে।’’ একই অবস্থা উত্তরের মানিকতলা, উল্টোডাঙা এবং শ্যামপুকুর থানারও।

Advertisement

তালতলা থানায় পুরনো গাড়ির চারপাশে রয়েছে আবর্জনা।ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য ও বিশ্বনাথ বণিক

প্রসঙ্গত গত বছরেও পুরসভার বক্তব্য ছিল, পুলিশকে থানার সামনে থেকে পুরনো গাড়ি সরিয়ে ফেলতে বারবার বলা হয়। কিন্তু পুলিশ কিছুই করে না। পুরকর্মীরা ওই সব গাড়ির মশক-নিধনে গেলে তাঁদের গাড়ি ছুঁয়েও দেখতে দেওয়া হয় না। পুলিশের অবশ্য দাবি, শয়ে শয়ে মামলাগ্রস্ত গাড়ি ধরে রাখতে হয় তাদের। কয়েকটি ডাম্পিং গ্রাউন্ড থাকলেও সেগুলি পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে থানার সামনেই ফেলে রাখতে হয় গাড়িগুলি। বর্ষার জল জমছে জেনেও মামলার ভয়ে সেগুলিতে হাত দেওয়া যায় না। এমনকী, গত বছরের সেপ্টেম্বরে টালিগঞ্জ থানার বাইরে রাখা অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ি নিয়ে পুরসভা এবং কলকাতা পুলিশের দ্বৈরথ তুঙ্গে উঠেছিল। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গা়ড়ির চাকায় মশার লার্ভা গিজগিজ করছে দেখেও পুরকর্মীদের গাড়িটির কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে।

থানার বাইরের চিত্রটা বদলায় না কেন? কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘বারবার থানাগুলির সঙ্গে বৈঠক করছি। পুলিশকে তো আর জেলে ভরতে পারি না!’’ লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘থানার সামনে প়ড়ে থাকা গাড়ি ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন ডাম্পিং গ্রাউন্ডে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বাকি গাড়িগুলিও সরিয়ে ফেলা হবে।’’

যত দিন না সেই কাজ সম্পূর্ণ হচ্ছে, তত দিন কী উপায়? উত্তর নেই কোনও মহলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন