দালাল, দুর্নীতি দমনে পুরসভায় নজর ক্যামেরা

পুর পরিষেবা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে দালালি ও ঘুষের কারবার রুখতে এ বার বিল্ডিং ও লাইসেন্স দফতরে নজরদারি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পুর প্রশাসন।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩১
Share:

পুর পরিষেবা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে দালালি ও ঘুষের কারবার রুখতে এ বার বিল্ডিং ও লাইসেন্স দফতরে নজরদারি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পুর প্রশাসন। একই সঙ্গে এ বার থেকে পুরসভার প্রতিটি বরো অফিসে হানা দেবে পুর ভিজিল্যান্স দল। পুরসভা সূত্রের খবর, মেয়র ফিরহাদ হাকিম পুরসভায় কর্মরত ভিজিল্যান্সের আইজি-কে নিয়ে সম্প্রতি একটি বৈঠক করেন। আইজি-র প্রতি তাঁর নির্দেশ, বরোগুলিতে অফিসারদের পাঠাতে হবে। পুর ভবনের যে সমস্ত দফতরে দালালদের আনাগোনা বেশি, সেই সমস্ত জায়গায় নজরদারি জোরালো করতে হবে। তেমন কাউকে পেলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতারও করতে হবে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, কলকাতা পুর প্রশাসনে ভিজিল্যান্স দফতর থাকলেও এতকাল তাঁদের নজরদারির কাজে সে ভাবে ব্যবহার করা হয়নি। কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের অফিসারদের নিয়ে তৈরি ওই ভিজিল্যান্স দফতর। নতুন এই নির্দেশে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে পুর মহলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরকর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, পুর ভবন এখন কার্যত দালালদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এক শ্রেণির দালাল বিল্ডিং, লাইসেন্স, কর মূল্যায়ন-সহ বিভিন্ন দফতরের কাজ করে দেওয়ার টোপ দিয়ে মোটা টাকা দালালি তুলে চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই এ নিয়ে নানা অভিযোগ জমা পড়ছে পুরসভায়। বছরখানেক আগে স্বাস্থ্য দফতরে দালালি করা এক ব্যক্তিকে তাড়া করে হাতেনাতে ধরেছিলেন মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ। তার পর থেকে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের যে ঘর থেকে জন্ম ও মৃত্যুর সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, সেখানে নজরদারি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তাতে ওই দফতরে দালালদের দাপট কিছুটা কমানো গেলেও অন্যান্য দফতরে তা বহাল তবিয়তেই চলছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

মেয়র জানিয়েছিলেন, পুরসভার প্রত্যেক কর্মী, অফিসার, এমনকি মেয়র ও মেয়র পরিষদ সদস্যদেরও গলায় পরিচয়পত্র ঝোলাতে হবে। সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। সোমবার মেয়র বলেন, ‘‘বাইরে থেকে যাঁরা পুর ভবনে বা অন্য কোনও পুর অফিসে আসবেন, তাঁরা পরিচয়পত্র দেখে কে পুরসভার কর্মী আর কে নন, তা সহজেই বুঝতে পারবেন। দালালদের চেনাও সহজ হবে।’’ মেয়র ও মেয়র পারিষদদের কেউ কেউ সেই পরিচয়পত্র গলায় ঝোলালেও এখনও অনেকেই তা পরছেন না।

ভিজিল্যান্সের আইজি-র সঙ্গে কথা বলেছেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদও। পুরসভা সূত্রের খবর, যে সব অফিস থেকে টাকা নিয়ে কাজ করার অভিযোগ এসেছে, সেখানে দু’-এক দিনের মধ্যেই নজরদারি চালানো শুরু করবে ভিজিল্যান্সের দল। তবে সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে বিল্ডিং এবং লাইসেন্স দফতরে। পুর ভবনে ওই দু’টি দফতরে ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া, এ বার থেকে প্রতিদিনই পুর ভবন ও বরো অফিসগুলিতে ঘোরাঘুরি শুরু করবেন ভিজিল্যান্সের অফিসারেরা। সন্দেহজনক কাউকে পেলে গ্রেফতারও করা হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। আর ওই বেআইনি কাজে পুরসভার কোনও কর্মী, অফিসার জড়িত থাকলে তাঁকে বা তাঁদেরও রেয়াত করা হবে না। সাসপেন্ড করা হবে। পুরসভা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই পুরসভার একাধিক কর্মী ও অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। তাঁদের উপরে নজরদারি শুরু করছে ভিজিল্যান্স অফিসারেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন