উদ্যোগী সরকার

অবশেষে বাসে নির্ভয়া-শিক্ষা

দেরিতে হলেও ঘুম ভাঙল রাজ্য সরকারের। নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে গঠিত বিচারপতি ভার্মা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি বাসে মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হল পরিবহণ দফতর। সম্প্রতি রাজ্যের পরিবহণ নিগমগুলিকে এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা দিয়েছে সরকার।

Advertisement

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৫
Share:

দেরিতে হলেও ঘুম ভাঙল রাজ্য সরকারের। নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে গঠিত বিচারপতি ভার্মা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি বাসে মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হল পরিবহণ দফতর। সম্প্রতি রাজ্যের পরিবহণ নিগমগুলিকে এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা দিয়েছে সরকার। বলা হয়েছে, নিগম পরিচালিত সব বাসে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে। এখনই ওই ক্যামেরা অবশ্য কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা হচ্ছে না। তবে আইন মেনে তার ফুটেজ ৭২ ঘণ্টা সংরক্ষণ করা হবে। প্রয়োজনে বা কোনও অভিযোগ পেলে ওই ফুটেজ দেওয়া হবে পুলিশের হাতে। আচমকা কিছু ঘটলে মহিলাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রতিটি বাসে থাকছে আপৎকালীন বোতামও। যা টিপলেই বাসটি তৎক্ষণাৎ মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে যাবে। থাকছে ‘ভেহিক্‌ল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস’-বা জিপিএস পরিষেবার মাধ্যমে প্রতিটি বাসের গতিবিধি নজরে রাখার ব্যবস্থাও।

Advertisement

২০১২-র ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে পরিবহণ মাধ্যমে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নড়ে বসে কেন্দ্র। এর পরেই পরিবহণে মহিলা-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু সুপারিশ করে কেন্দ্রের গঠিত বিচারপতি ভার্মা কমিটি। সেই মতো বেসরকারি ও সরকারি বাসে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দেয় কেন্দ্র। কিন্তু ২০১৩ থেকে দফায় দফায় আসা ওই নির্দেশিকা নিয়ে মাথা ঘামায়নি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পরিবহণ দফতর। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্প শুরু করার পরেই বিচারপতি ভার্মা কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত করতে উদ্যোগী হয়েছে দফতর। এক কর্তার কথায়, ‘‘সম্প্রতি এ শহরেও বাস, ট্যাক্সি বা অটোয় মহিলা নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। তার পরেই এই সিদ্ধান্ত।’’

তবে পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, সরকারি বাসে তিন দফার সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিলেও বেসরকারি বাসে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দেশ পাঠাচ্ছে না সরকার। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমরা ধাপে ধাপে এই প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইছি। প্রথম ধাপে সরকারি বাসে সুরক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি বাসে হলে সেটাই উদাহরণ তৈরি করবে। তার দেখাদেখি বেসরকারি বাসের মালিকেরাও শুরু করবেন বলে আশা। না হলে বেসরকারি বাসেও এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।’’

Advertisement

বেসরকারি মালিকদের বক্তব্য, সরকার নির্দেশ না দিলে তাঁদের পক্ষে নিজেদের থেকে কিছু করা সম্ভব নয়। বাসমালিক সংগঠন ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস’-এর নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের বাসে ক’টা সিট থাকবে, সিঁড়ির উচ্চতা কত হবে থেকে শুরু করে ভাড়া— সব কিছুই সরকার ঠিক করে। এ ক্ষেত্রেও যদি সরকার আমাদের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা দিয়ে দেয়, আমরা নিশ্চয়ই তা মেনে চলব।’’

ভার্মা কমিটির সুপারিশে, শহরের বাসে সন্ধ্যার পরে এক জন পুরুষ এবং এক জন মহিলা পুলিশকর্মীকে মোতায়েন রাখার কথা বলা হয়েছে। শহরতলির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে এক জন করে পুলিশকর্মী রাখতে। অন্য দিকে, প্যানিক বাটন ‘অ্যাপ’-এর সুবিধা যাতে যাত্রীরা পান, তার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ‘‘সব বাসে পুলিশ দেওয়ার মতো কর্মী নেই! বাকি বিষয়গুলি আমাদের ভাবনায় আছে। প্রথমে এই নির্দেশ বাস্তবায়িত হলে বাকিগুলিও ধাপে ধাপে হবে।’’

পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, নতুন যে সব বাস কেনা হবে, তাতে এই সব ব্যবস্থা থাকবে। জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে কেনা পুরনো কিছু বাসেও এই ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা চলছে। সবটা করতে কতটা সময় লাগবে, তা এখনই বলতে পারছেন না পরিবহণকর্তারা। তাঁদের আশা, চলতি বছরের শেষে এই ব্যবস্থা-সহ বহু বাসই রাস্তায় নামানো যাবে। কারণ, এই কাজে
খুব বেশি খরচের চিন্তা নেই। যা প্রয়োজন, তা সরকার সহজেই ব্যয় করতে পারবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন