জগতের আনন্দসভায় বাড়ছে উদ্‌যাপন

এ ভাবেই বদলাচ্ছে আনন্দ-উৎসব উদ্‌যাপনের রীতি। পাশে দাঁড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষ দিনগুলো ঘরের বাইরে বেরিয়ে অন্য ভাবে পালন করার কথা হামেশাই ভাবছেন শহরবাসী।

Advertisement

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৩০
Share:

প্রাপ্তি: এ ভাবেই চলছে বিশেষ দিনের উদ্‌যাপন। নিজস্ব চিত্র

ছোট্ট শুভরূপের এক বছরের জন্মদিনটা চার দেওয়ালের মধ্যে চিরাচরিত কেক-পায়েসে চাননি বাবা-মা। চেয়েছিলেন, এ শহরেরই ফুটপাথে বাস করা আরও অনেক শুভরূপের সঙ্গে দিনটা কাটাতে। ভাবনা সফল করতে হাত মিলিয়েছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শুভরূপের জন্মদিনে পরিবার এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে একদল পথশিশুর হাসিতে ঝলমল হয়ে উঠেছিল কলেজ স্কোয়ার এলাকা। শুভরূপের বাবা সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘আমার চাই, আমাদের সন্তান ছোট থেকে এ ভাবেই আপন করে নিক সমাজের সব স্তরের মানুষকে।’’

Advertisement

বেহালার সৌপর্ণবাবু আবার বাবার মৃত্যুর পরে প্রথাগত শ্রাদ্ধে বিশ্বাস রাখেননি। গরিব মানুষদের এক বেলা পেট ভরে খাওয়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ‘কাঙালি ভোজন’-এর মাধ্যমে দায় সেরে ফেলতেও মন চায়নি। সাহায্য চেয়েছিলেন এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে। মহাত্মা গাঁধী রোড এলাকার ফুটপাথবাসীদের নিয়ে উদ্‌যাপিত হয়েছিল শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। ‘‘বাবা চিরকাল মানুষের কথা ভেবেছেন, তাই এ ভাবেই শান্তি পাবে ওঁর আত্মা,’’ বলেছিলেন সৌপর্ণ।

সোদপুরের মৃত্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার ছেলের জন্মদিন পালন করেছিলেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের স্কুলে। হাসি-গান-কেক-আনন্দে ভাগ হয়ে গিয়েছিল খুশির বিশেষ মুহূর্ত। ব্যক্তিগত শুভ দিন নিমেষে বদলে গিয়েছিল মানুষকে পাশে নিয়ে চলার অঙ্গীকারে। মৃত্তিকা বলেন, ‘‘শুভ মুহূর্তটা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিলে আনন্দ বাড়ে।’’

Advertisement

এ ভাবেই বদলাচ্ছে আনন্দ-উৎসব উদ্‌যাপনের রীতি। পাশে দাঁড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষ দিনগুলো ঘরের বাইরে বেরিয়ে অন্য ভাবে পালন করার কথা হামেশাই ভাবছেন শহরবাসী। কখনও ফুটপাথবাসীদের নিয়ে, কখনও বা অনাথ আশ্রমে, কখনও আবার হাসপাতালের শিশু বিভাগে। অনেকেই বলছেন, সাধারণ মানুষের মানসিকতার এই পরিবর্তনে বড়ই ইতিবাচক বার্তা যাচ্ছে সমাজের নানা প্রান্তে।

এই সুন্দর ইচ্ছেগুলো পূর্ণ করা হয়তো এতটা সহজ হতো না, একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পাশে না দাঁড়ালে। ইতিমধ্যে শহরে বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই কাজে এগিয়ে এসেছে। এমনই একটি সংগঠনের সভাপতি মালিনী বসু বলেন, ‘‘এই প্রজন্মকে নিয়ে অনেকের অনেক নালিশ। কিন্তু আমরা তো দেখতে পাই, মানুষের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য সর্বদা চেষ্টা করে চলছেন এই সময়েরই একদল মানুষ।’’ কিন্তু সেই কাজ হবে কোন পথে, তা অনেকেই খুঁজে পান না। তার ব্যবস্থা করতে সাহায্য করে তাঁদের সংগঠন, জানালেন মালিনী।

আর একটি সংগঠনের তরফে চন্দ্রশেখর কুণ্ডু বলছিলেন, ‘‘প্রায় ফি সপ্তাহে একটা করে আবেদন পাই আমরা। জন্মদিন হোক বা মৃত্যুবার্ষিকী, বিবাহবার্ষিকী কিংবা সন্তানের ভাল রেজাল্ট। অনেকেই অন্যদের সঙ্গে কাটাতে চান দিনটা।’’ তিনি জানালেন, সেই কাজে এই সব পরিবারকে সাহায্য করে তাঁদের সংগঠন।

অন্য একটি সংগঠনের তরফে হিমাংশু কামদার জানালেন, পরিবার যত ছোট হয়ে যাচ্ছে, মানুষের ছোট ছোট আনন্দগুলো ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ কমছে ক্রমেই। তিনি বলেন, ‘‘এই ভাবনা থেকেই কাজ শুরু করি। শুধু বিশেষ দিন পালনই নয়, কোনও পরিবারে সামাজিক উৎসবে খাবার উদ্বৃত্ত হলেও তা গরিবদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব নিই আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন