Salap

অন্য এলাকার পরিবার কেন কোয়রান্টিনে, তুলকালাম

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’মাসের একটি শিশুকে নিয়ে ওই পরিবারটি সোমবার সকালে ঝাড়খণ্ড থেকে সলপ এক নম্বর পঞ্চায়েত এলাকায় নিজেদের বাড়িতে পৌঁছয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২০ ০১:৪১
Share:

প্রতীকী ছবি।

লকডাউন শিথিল হতেই দু’মাসের শিশুকে নিয়ে ঝাড়খণ্ড থেকে হাওড়ার সলপে ফিরে এসেছিল একটি পরিবার। সংক্রমণের আশঙ্কায় এলাকার লোকজন নিজেদের বাড়িতে থাকতে দেননি ওই পরিবারের কাউকে। শেষমেশ স্থানীয় একটি স্কুলে তৈরি হওয়া কোয়রান্টিন কেন্দ্রে তাঁদের রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন পাশের পাড়ার লোকজন। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সোমবার বেশি রাতে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি ও সিপিএমের সংঘর্ষ বেধে যায় সলপের বটতলায়। ভাঙচুর করা হয় স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি। পুলিশ এলে আক্রান্ত হয় তারাও। অভিযোগ, তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠি চালায় পুলিশ। এই ঘটনায় সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’মাসের একটি শিশুকে নিয়ে ওই পরিবারটি সোমবার সকালে ঝাড়খণ্ড থেকে সলপ এক নম্বর পঞ্চায়েত এলাকায় নিজেদের বাড়িতে পৌঁছয়। লকডাউনের আগে পড়শি রাজ্যে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন ওই পরিবারের সকলে। কিন্তু ফিরে আসার পরেও এলাকার বাসিন্দাদের আপত্তিতে নিজেদের বাড়িতে ঢুকতে পারেননি তাঁরা। তাই দু’মাসের শিশুকে নিয়ে রাস্তার ধারেই বসে ছিলেন।

পুলিশ জানায়, পরিবারটির ওই অবস্থা দেখে পাশের পাড়ার বাসিন্দারা প্রশাসনের সাহায্যে দু’নম্বর পঞ্চায়েত এলাকার কোয়রান্টিন কেন্দ্রে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবারটিকে সেখানে আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা নেন দু’নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, তৃণমূলের কেয়া নস্করের স্বামী গৌতম নস্কর।

Advertisement

খবর পেয়েই বিজেপি ও সিপিএমের স্থানীয় নেতারা প্রশ্ন তোলেন, এক নম্বর পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা কেন দু’নম্বর পঞ্চায়েতের কোয়রান্টিনে জায়গা পাবেন? কেন তাঁরা এলাকায় ঘুরে সংক্রমণ ছড়াবেন? এই নিয়েই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। অভিযোগ, রাতেই বিজেপি ও সিপিএমের সমর্থকেরা ওই স্কুলে হানা দেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব তার প্রতিবাদ করলে দু’পক্ষের সংঘর্ষ বেধে যায়। তৃণমূলের অভিযোগ, বিরোধীরাই সংখ্যায় বেশি ছিলেন। তাঁরাই আক্রমণ করেন, ভাঙচুর চালান পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে।

দু’নম্বর পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী গৌতমবাবু মঙ্গলবার বলেন, ‘‘বিজেপি ও সিপিএমের লোকজন একজোট হয়ে বাড়িতে হামলা করেছিল।’’ পুলিশ জানায়, মারধর করা ও গোলমাল পাকানোর অভিযোগে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উত্তম বেরা-সহ দু’জ‌নকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কোয়রান্টিন কেন্দ্র থেকে ওই পরিবারের লোকজনকে উৎখাতের চেষ্টা, পুলিশকে মারধর এবং পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো-সহ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিপিএম ও বিজেপি নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘এলাকায় কোয়রান্টিন কেন্দ্র হবে কি না, তা নিয়ে তৃণমূলেরই দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ চলছে। পুলিশ অকারণে আমাদের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যকে তাঁর বাড়িতে ঢুকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে গিয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনও যোগই নেই।’’

বিজেপি-র স্থানীয় নেতা জয়ন্ত দাসের দাবি, ‘‘এলাকার একটি কোয়রান্টিন কেন্দ্রে পাশের পঞ্চায়েতের কিছু লোকজনকে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে গ্রামবাসী প্রতিবাদ করছিলেন। তখন পুলিশ লাঠি চালায়।’’

পুলিশ অবশ্য লাঠি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশকে লাঠি ও বাঁশ নিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল। তাই দু’জনকে ধরা হয়েছে। লাঠি চালানো হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন