কলকাতা পুরসভার বাজেট অধিবেশন। —ফাইল ছবি
অভব্য আচরণের অভিযোগে বাম কাউন্সিলরকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিলেন পুর চেয়ারপার্সন। কলকাতা পুর অধিবেশনের ইতিহাসে এমনটা হয়নি বলেই পুরসভা সূত্রের দাবি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তা আর কার্যকর হয়নি। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের আবেদনে বাম কাউন্সিলরের সেই ‘অশোভন’ আচরণও মাফ করে দেন চেয়ারপার্সন।
কেন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে হল? ঘটনার সূত্রপাত, চলতি সপ্তাহে নিমতলা শ্মশানে গণ্ডগোলের কারণে দাহকাজ তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকা নিয়ে। এ দিন অধিবেশনের শুরুতে শোকপ্রস্তাব ছিল। তা শেষ হতেই পুরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরএসপি কাউন্সিলর দেবাশিস মুখোপাধ্যায় নিমতলার শ্মশান বন্ধ থাকবে কেন তা নিয়ে মেয়রের বিবৃতি দাবি করেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, হরতাল থেকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কখনও শ্মশান বন্ধ থাকেনি। কিন্তু এক ঠিকাদার ও তার দলবলের হুজ্জুতিতে তিন ঘণ্টা শ্মশান বন্ধ থাকল! পুলিশ, পুর প্রশাসন কিছু করতে পারল না কেন, তা নিয়ে বিবৃতি দিতে হবে মেয়রকে। কথাগুলো বলতে বলতে চেয়ারপার্সন মালা রায়ের টেবিলের সামনে এসে পড়েন তিনি। এমনকি মালাদেবীর টেবিলে চাপড়ও মারেন। তাতে প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে ওই কাউন্সিলরকে সংযত হওয়ার কথা বলেন চেয়ারপার্সন। অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু করে দেন। তবে ওই কাউন্সিলর নিজের দাবি জানাতেই থাকেন।
এর পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন অন্য বাম কাউন্সলরেরাও। শুরু হয় তুমুল হইচই। মেয়র শোভনবাবু তখন চুপ করে নিজের চেয়ারেই বসেছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে শাসক দলের বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, তপন দাশগুপ্তেরা বাম কাউন্সিলরদের দিকে এগিয়ে যান। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। ঘটনাটি একটু দূর থেকে দেখতে থাকেন কংগ্রেসের প্রকাশ উপাধ্যায় এবং বিজেপির মীনাদেবী। এর পপরেই পুরসভার নিরাপত্তারক্ষীরা ঢোকেন অধিবেশন কক্ষে। কিন্তু হইচই না থামায় চেয়ারপার্সন মালা রায় দেবাশিসবাবুকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: মেডিক্যালে অগ্নিকাণ্ড: পোড়া ফার্মেসিতে মিলল মোবাইল, থালা-বাটিও
তাতেও অবশ্য চেঁচামেচি থামে না। এক সময়ে দেবাশিসবাবু অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। অনেকেই ভাবেন তিনি হয়তো বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু মিনিট কয়েকের মধ্যে ফের কক্ষে ঢোকেন দেবাশিসবাবু। তা নজরে আসতেই মালাদেবী ওই কাউন্সিলরের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘‘আপনাকে আজকের মতো বহিষ্কার করা হয়েছে।’’ এ দিকে চেয়ারপার্সনের বক্তব্য শুনে ফের বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বাম কাউন্সিলরেরা এবং মেয়রের বিবৃতি দাবি করেন। মেয়র শোভনবাবু বলেন, ‘‘বিরোধী কাউন্সিলরের ওই আচরণ ঠিক হয়নি। চেয়ারপার্সনের ক্ষমতা এখানে সবোর্চ্চ। তবে সকলের পক্ষ থেকে আমার অনুরোধ বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত চেয়ারপার্সন পুনর্বিবেচনা করলে ভাল হয়।’’ এর পরেই মালাদেবী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন। পরে মালাদেবী বলেন, ‘‘তিনি যে বিবৃতি চেয়েছিলেন, তা পুর আইন মেনে করলেই পারতেন। তা না করে চেয়ারপার্সনের টেবিল চাপড়ে অসভ্যতা করেছেন। এটা ঠিক নয়।’’ মেয়র শোভনবাবুও বলেন, ‘‘তিনি বলেছেন বিবৃতি না পেলে অধিবেশনে কাজ চলতে দেবেন না। এটা অসাংবিধানিক আচরণ।’’ যদিও অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘ওই অভিযোগ মিথ্যা।’’
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হতেই বাগড়ি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস, বিজেপি এবং বাম কাউন্সিলরেরা পুর প্রশাসন এবং দমকলের দায় নিয়ে প্রস্তাব তোলেন। কেন বাগড়ি মার্কেটে লাইসেন্স দেওয়ার আগে অগ্নিসুরক্ষার বিষয়টি দেখা হয়নি, তা নিয়েও বিবৃতি চান। ভবিষ্যতে পুরসভার নিজস্ব বাজার এবং শহরের অন্য বাজারগুলিকে অগ্নিসুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে কী করছে, পুরসভা তা জানতে চান। শোভনবাবুর সাফ কথা, ‘‘অতীতে বাম আমলে স্টিফেন কোর্ট এবং নন্দরাম মার্কেটেও আগুন লেগেছিল। পুরনো প্রসঙ্গ তুলে কাউকে ছোট করতে চাই না। তবে এটা বলতে পারি, বাগড়ি থেকে মেডিক্যালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা চোখ খুলে দিয়েছে। প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে আরও কঠোর হতে হবে। রক্তের রং লাল না নীল, তা দেখা হবে না।’’