Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মেডিক্যালে অগ্নিকাণ্ড: পোড়া ফার্মেসিতে মিলল মোবাইল, থালা-বাটিও

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পোড়া ওষুধের স্টোর ঘুরে বৃহস্পতিবার নমুনা সংগ্রহ করলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের ইঙ্গিত, শর্ট সার্কিট থেকেই যে আগুন লেগেছিল, তা এক রকম নিশ্চিত।

ফার্মেসির ভিতরে পোড়া গজ-তুলোর স্তূপ। নিজস্ব চিত্র

ফার্মেসির ভিতরে পোড়া গজ-তুলোর স্তূপ। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৩৩
Share: Save:

মেঝেয় পড়ে থাকা পোড়া গজ-তুলোর উপর হাঁটতে হাঁটতে দাঁড়িয়ে পড়লেন ফরেন্সিক ডিরেক্টর ওয়াসিম রাজা। সঙ্গীকে নির্দেশ দিলেন, ‘‘দেখুন, মোবাইল ফোন। তুলে রাখুন। পুলিশ নেবে। এভিডেন্স!’’ পুড়ে যাওয়া ওষুধ ভাণ্ডারের মধ্যে থেকে ফোন তুলে নিয়ে বাক্সে ভরে রাখলেন এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ। বললেন, ‘‘কেউ আগুন লাগার সময় নিশ্চয় এই ঘরে ছিলেন। ফোন ফেলে পালিয়েছেন!’’ কিছু ক্ষণ পরে সেখানেই মিলল স্টিলের থালা-বাটি।

বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টা থেকে টানা ৪০ মিনিট। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পোড়া ওষুধের স্টোর ঘুরে বৃহস্পতিবার নমুনা সংগ্রহ করলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের ইঙ্গিত, শর্ট সার্কিট থেকেই যে আগুন লেগেছিল, তা এক রকম নিশ্চিত। তবে কী থেকে আগুন লেগেছিল, তার বেশ কিছু সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দিন পোড়া ঘরে দাঁড়িয়ে রাজাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘মোটা কেবলের তার থেকে আগুন লাগতে পারে। মাঝের ঘরের কম্পিউটারও আগুনের উৎস হতে পারে। ঘরে রাখা ফ্রিজগুলোকেও বাদ দিতে পারবেন না। ল্যাবে টেস্ট করতে হবে।’’ রাজা এবং তাঁর ফরেন্সিক দলের সঙ্গে ছিলেন দমকল, পুলিশ এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কর্তারা। প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের ওই পোড়া স্টোরে ঢোকার মুখে সোজাসুজি লম্বা কুঠুরি। সেখানে ডাঁই করে রাখা পোড়া ওষুধ। ওই কুঠুরিতে না ঢুকলে বাঁ দিকে বারান্দা সোজাসুজি গিয়েছে পাঁচিল পর্যন্ত। বারান্দার দেওয়ালে ঝলসে যাওয়া বিদ্যুতের বক্স। পাশে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র। বারান্দার ডান দিকে গলিপথ। বাঁ দিকে ‘ডিপার্টমেন্ট অব ফার্মেসি’র পিছনের দিকের দরজা। গলি পথে এগোলে পরপর দু’টি ঘর, লোহার গরাদ দিয়ে আলাদা করা। প্রথম ঘরের মাঝে বড় টেবিল, তার পাশে বড় ‘মুভেবল’ চেয়ার। পিছনে তিনটি টেবিলে পোড়া কম্পিউটার। পরের ঘরে একটি টেবিল, পোড়া রেফ্রিজারেটর এবং লোহার দু’টি আলমারি। কিছুটা দূরেই পুড়ে যাওয়া কাঠের চেয়ার। এই ঘরের ছাদেই গর্ত করেছেন দমকলকর্মীরা। এই দু’টি ঘর পেরোলে স্টোরের সবচেয়ে বড় ঘর। সেখানে বাঁ দিকে এবং মাঝখানে ওষুধ রাখার লোহার র‌্যাক। একের পর এক রোগীর শয্যা। সেখানেও পোড়া ওষুধের স্তূপ। রাজা বলছিলেন, ‘‘তুলোগুলোর ওপরের অংশই পুড়েছে। গরম এখনও কমেনি।’’

এক সময় ছাদের পোড়া কেবলের অংশ কাটার নির্দেশ দেন রাজা। এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ওষুধের র‌্যাকে উঠেও সেই কেবল কাটতে পারেননি। রাজার যুক্তি, ‘‘ওই পোড়া তার থেকেও আগুন ছড়াতে পারে। একটা অংশ নিয়ে যাব।’’ এ-ও বলেন, ‘‘একেবারে মাঝখানের ঘর থেকে আগুন লাগলে প্লাইউড অক্ষত থাকত না। উড়ে যেত।’’

এর মধ্যেই পুলিশকর্মীরা রাজাকে ডেকে দেখালেন কালো ছাইয়ে ঢাকা অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তার মেয়াদ। তবে কোটি টাকার ওষুধ রাখার ঘরে এ ছাড়া কোনও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।

দুপুর ২টো ১০ মিনিটে বেরিয়ে আসার মুখে বেশ কয়েকটি আপৎকালীন পথও খুঁজে পান বিশেষজ্ঞেরা। সেগুলি ব্যবহার করতে পারেননি দমকলকর্মীরা। তবে রাজার কথায়, ‘‘পুরনো বাড়ির কাঠামোই বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে। আধুনিক ভবন হলে এসি ডাক্ট দিয়ে ধোঁয়া ঢুকে আমরির মতো বিপদ ঘটত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE