ঘোষণার পর থেকে ২০ মাস কেটে গেলেও তৈরি করা যায়নি নিজস্ব ব্যাটালিয়ন। তাই উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে এখনও ভরসা অনেকটাই দূরের লালবাজার থেকে নিয়ে যাওয়া বাহিনী। পরিকাঠামো এবং বাহিনীর অপ্রতুলতার কারণে সরকারি বিজ্ঞপ্তি থাকলেও চালু করা যায়নি চারটি থানা। পাশের অন্য থানা থেকেই এখনও কাজ চলছে সেগুলির। এই পরিস্থিতিতে ভাঙড়ে পুলিশের কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক খোলা নিয়ে নানা মহলেই প্রশ্ন উঠেছিল। বাহিনীর অন্দরের অনেকেও বলেছেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে এখনও যেখানে কলকাতা থেকে পুলিশ নিয়ে গিয়ে সামাল দিতে হয়, সেখানে ব্যাটালিয়ন তৈরি বা থানার কাজ না বাড়িয়ে ব্যাঙ্ক তৈরির তোড়জোড় কেন? সদ্য তৈরি হওয়া এই ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা নিয়েই এ বার প্রশ্ন উঠছে। পরিস্থিতি এমন যে, নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশকেই চিঠি দিতে চলেছে ভাঙড় ১ বিডিও অফিস।
গত ৭ নভেম্বর ভাঙড় ১ বিডিও অফিস প্রাঙ্গণে কলকাতা পুলিশের এই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কটির উদ্বোধন হয়। এর আগে লালবাজার, পিটিএস-সহ কলকাতা শহরের চারটি জায়গায় এই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক ছিল। ভাঙড় কলকাতা পুলিশের অধীনে আসার পরে শহরের বাইরে এ বার এই পঞ্চম কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কটি খোলা হল। এর আগে যে সমস্ত ব্যাঙ্ক খোলা হয়েছে, সবই পুলিশের নিজস্ব ভবনে বা বাহিনীর ঘেরাটোপের মধ্যে। এই প্রথম পুলিশের নিজস্ব বাড়ির বাইরের কোনও ঘর ভাড়া নিয়ে কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক খোলা হয়েছে। সূত্রের খবর, আর এখানেই জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিডিও অফিসের মধ্যে পুলিশের ব্যাঙ্কের জন্য ঘর ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের একাংশের মত নেওয়াই হয়নি বলে অভিযোগ। উল্টে রাতারাতি পঞ্চায়েত বৈঠকে ঠিক করে মাসিক প্রায় সাত হাজার টাকায় বিডিও অফিস বিল্ডিংয়ের একতলার একটি ঘর ব্যাঙ্ক তৈরির জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিডিও ১ অফিস থেকে কলকাতা পুলিশের কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়ে পদক্ষেপ করার অনুরোধ জানানোর তোড়জোড় চলছে বলে খবর।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাঙড়ের ১ নম্বর ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের কার্যালয় যে ভবনে রয়েছে, সেখানেই আছে বিভিন্ন কো-অপারেটিভ অফিস, ফিশারিজ়, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্টের মতো একাধিক বিভাগের কার্যালয়। এর পরে যুক্ত হয়েছে পুলিশের কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক। বিডিও অফিসের এক কর্মীর দাবি, ‘‘গোটা চত্বরে নজরদারির জন্য এক জনই নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। তিনিই ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করেন। নানা সময়ে এমন সব গন্ডগোল হয়, যে এক জন নিরাপত্তাকর্মীর পক্ষে সামলানো সম্ভব নয়।’’ আরও এক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘এত লোক প্রতিদিন এখানে কাজে আসেন যে, অফিসের কর্মীরা পর্যন্ত মোটরবাইক রাখার জায়গা পান না। এর মধ্যেই ভোটের সময়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার নামে চলে রাজনৈতিক গন্ডগোল। গুলি, বোমার সেই পরিবেশে ব্যাঙ্ক চালানোর ক্ষেত্রে আলাদা নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি হয়ে যায়।’’ এই সবটা নিয়েই কলকাতার নগরপালকে বিডিও অফিসের তরফে চিঠি দেওয়ার ভাবনা চলছে বলে খবর। সেই চিঠিতে ব্যাঙ্ক অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধও থাকছে বলে জানাচ্ছেন এক পদস্থ কর্মী। পুলিশের যদিও দাবি, যেখানে এখনও থানা তৈরির জন্য ভবন সাজিয়ে তোলা যায়নি, সেখানে ব্যাঙ্কের জন্য এখন ভবন খোঁজা বাড়তি চাপ। ঘটনাস্থল ভাঙড় থানার অন্তর্গত। সেখানকার এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘আগে বাহিনীর জন্য আলাদা ব্যাটালিয়ন হোক, তার পরে তো ব্যাঙ্ক! তা ছাড়া, এখানে ডিউটিতে থাকা প্রায় সমস্ত অফিসারেরই কলকাতায় পুলিশ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এখানে ব্যাঙ্ক খোলায় সাধারণ মানুষের সুবিধা হতে পারে, বাহিনীর কারও তেমন লাভ নেই।’’
ভাঙড় ১ ব্লকের বিডিও প্রিয়ঙ্কা বালা যদিও বললেন, ‘‘চিঠি দেওয়ার ব্যাপারে প্রকাশ্যে বলতে চাই না। পঞ্চায়েত সমিতির আয় বাড়াতে ঘরটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।ব্যাঙ্কের নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশকেই নিতে হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)