চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল

আগুনের পরে খুলল বহুতল, সুরক্ষা-প্রশ্নে শুরু চাপান-উতোর

পাঁচটি লিফ্টের মধ্যে তিনটিই বন্ধ। অনেক তলাতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেই অন্ধকারে, ভ্যাপসা গরমেই বসে রয়েছেন বিভিন্ন অফিসের কর্মীরা! ছবিটা জওহরলাল নেহরু রোডে চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের। গত মঙ্গলবার সকালে আগুন লেগেছিল এই বহুতলে। সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল বহুতলটি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০৯
Share:

অফিসের কর্মচারীরাই নেমেছেন সাফাইয়ে। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র

পাঁচটি লিফ্টের মধ্যে তিনটিই বন্ধ। অনেক তলাতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেই অন্ধকারে, ভ্যাপসা গরমেই বসে রয়েছেন বিভিন্ন অফিসের কর্মীরা!

Advertisement

ছবিটা জওহরলাল নেহরু রোডে চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের। গত মঙ্গলবার সকালে আগুন লেগেছিল এই বহুতলে। সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল বহুতলটি। পাঁচ দিনের মাথায় ফের খুলে দেওয়া হল শহরের পুরনো এই অফিসবাড়ি। কিন্তু অফিস চালানোর পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল খোলার অনুমতি কী ভাবে দিল প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর, সেখানকার বিভিন্ন অফিসকর্মীরাই প্রশ্ন তুলছেন তা নিয়ে। বহু কর্মী জানান, অফিস চালানোর পরিষেবাই মিলছে না ওই বহুতলে। উপরন্তু, বহু জায়গায় বিদ্যুৎ লাইনে ত্রুটি ধরা পড়েছে। এই অবস্থায় ওই বহুতলের এক অফিস-মালিকের প্রশ্ন, “যেখানে পরিষেবা নেই, সেখানে অফিস চালু করতে বলার অর্থটা কী?” ওই বহুতলে এ সব পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব কার, উঠেছে সে প্রশ্নও। চাপান-উতোর শুরু হয়েছে দমকল, বহুতল কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন অফিসের মালিকের মধ্যে।

গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালের ১৬ ও ১৭ তলার ১২ নম্বর অফিসে আগুন লাগে। পরের দিন বুধবার চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার সোসাইটির পক্ষ থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বহুতল বন্ধ রাখার নোটিস দেওয়া হয়। সেখানে অবশ্য উল্লেখ ছিল, দমকল ও সিইএসসি-র ছাড়পত্র পেলে তবেই খোলা হবে অফিস। কিন্তু এই নোটিসের কিছু পরেই নবান্নে দমকলমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি তলা ছাড়া অন্যত্র অফিস খোলা যেতে পারে। শুক্রবার দুপুরে বিদ্যুৎ, দমকল, পুরসভা ও পুলিশের আধিকারিকেরা চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল পরিদর্শনে যান। এর পরে সিইএসসি-র তরফে ১৪তলা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় বলে দমকল সূত্রে খবর। শুক্রবার রাতেই চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ কমিটি শনিবার থেকে অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নেন।

Advertisement

শনিবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বহুতলের সব ক’টি লিফ্ট ঠিক মতো কাজ করছে না। নয় এবং এগারোতলার বহু অফিসে আলো নেই। পুরো বাড়ি ঘুরে দেখা গেল, অন্তত ১৭টি অফিসে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ওই বহুতলের বিদ্যুৎ পরিষেবার দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক জানান, ওই অফিসগুলির ‘ফেজ’ ও ‘আর্থিং’-এর সমস্যা আছে। দ্রুত এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

ওই অফিসারের দাবি, আগে থেকেই বিভিন্ন অফিসে এই সমস্যা ছিল। তা হলে মেরামত করা হয়নি কেন? তাঁর বক্তব্য, “কোনও অফিসের ভিতরে বিদ্যুতের লাইন খারাপ থাকলে দায়িত্ব আমাদের নয়।” যদিও বহুতলটির বিভিন্ন অফিসের মালিক বলছেন, অফিসের ভিতরে ও বাইরে, যাবতীয় কাজ বহুতল কর্তৃপক্ষ করেন। অনেকেই বলছেন, বিদ্যুৎ লাইন খারাপ থাকলে ফের অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা থাকে। যদিও সে কথা মানতে চাননি ওই ভবনের বিদ্যুৎ পরিষেবার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা।

তাঁদের এক আধিকারিক বলেন, “দুর্ঘটনার কোনও আশঙ্কা নেই। ঝুঁকি নিতে চাইছি না বলে কিছু লাইন বন্ধ করে রাখা হয়েছে।”

প্রশ্ন উঠেছে, এই অবস্থায় সিইএসসি-কর্তৃপক্ষ কী ভাবে বহুতলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিলেন?

সিইএসসি-র বক্তব্য, তারা বহুতলের মূল মিটার পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ দেন। ভিতরের অয়্যারিংয়ে সমস্যা আছে কি না, দেখার দায়িত্ব তাদের নয়। একই সুর দমকলেরও। রাজ্যের ডিজি (দমকল) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিদ্যুতের লাইন ঠিক আছে কি না, দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। বাড়িটি বিপজ্জনক কি না, তা দেখেই অনুমতি দিয়েছি।” তবে দমকল সূত্রের দাবি, অনুমতি দেওয়ার আগে ওই বহুতল সোসাইটিকে বেশ কয়েকটি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে সব তলায় সিসিটিভি লাগাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, আগুন নেভানোর তালিমপ্রাপ্ত অন্তত ২০ জন কর্মী নিয়োগ, প্রতিটি তলায় অন্তত ২০টি আগুন নেভানোর যন্ত্র এবং বিপদঘণ্টি ও স্প্রিঙ্কলারের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

বহুতলের বহু অফিসের কর্মীই বলছেন, বাকি ব্যবস্থা দূরের কথা। কিন্তু বিপজ্জনক বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়ে রোজ অফিস করার বিষয়ে খুবই চিন্তিত তাঁরা। যদিও চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার সোসাইটির আইনি পরামর্শদাতা সুরজ কুমার পোদ্দার বলেন, “দু’বছর আগেই বহুতলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ হয়েছিল। এই ঘটনার পরে সব কিছু খতিয়ে দেখেই সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। বিপদের আশঙ্কা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন