শুরু হয়ে গিয়েছে ছোটদের নানা সামার ক্যাম্প। খুদেদের এই ধরনের ক্যাম্প জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এরই ঠিক উল্টো চিত্র কলকাতা পুলিশ আয়োজিত সামার ক্যাম্পে। ১০০ জনের জন্য ব্যবস্থা হলেও এখনও আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ৪২ জনের।
যোগব্যায়াম থেকে পাহাড়ে চড়ার কৌশল, ঘোড়ায় চড়া থেকে স্কোয়াশ খেলা, সিমুলেটরে বন্দুকে লক্ষ্যভেদের অনুশীলন, নাচের কায়দা শেখার সুযোগ। সঙ্গে রোজ স্বাস্থ্যকর প্রাতরাশ ও দুপুরের খাবার। একটা গোটা দিন ইকো পার্কে ঘোরাও আছে। এমন সব ব্যবস্থা রয়েছে এই সামার ক্যাম্পে। পুলিশের ৫ থেকে ১৫ বছরের ছেলেমেয়েদের জন্য পয়লা থেকে ১০ জুন পর্যন্ত হবে এই ক্যাম্প। সময় সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা। তার পরে রোজ যে যার বাড়ি ফিরবে।
সব পদমর্যাদার পুলিশের সন্তানেরা ক্যাম্পে যোগ দিতে পারবে। বাহিনীতে পুলিশের সংখ্যা ২৬ হাজারের বেশি। অথচ হেস্টিংসের পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে ওই সামার ক্যাম্পের আয়োজকরা ব্যবস্থা রাখছেন মাত্র ১০০ জনের কথা ভেবে!
কেন এমন ভাবনা? গত বছর প্রথম ক্যাম্প হয়েছিল। সে বার ছিল সাত দিনের। যোগ দিয়েছিল মাত্র ৩৭ জন। লালবাজার সূত্রে খবর, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) বিনীত গোয়েল, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (৫) বিশাল গর্গের সন্তানেরা অংশ নেয়। কিন্তু যোগদাতার সংখ্যা হতাশ করেছিল আয়োজকদের। এ বার তাই ১০০ জনের চেয়ে বেশি ছেলেমেয়ে যোগ দেবে, এমনটা তাঁরা ভাবতে ভরসা পাননি। নাম জমা দেওয়ার শেষ দিন ৩০ মে।
এই ক্যাম্পে অংশ নিতে খরচ ৫০০ টাকা। লালবাজারের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘মাথাপিছু আমাদের খরচ হয় হাজার টাকা। ৫০০ টাকা ভর্তুকি। তার পরেও এই অবস্থা।’’ ওই অফিসার জানান, শিবিরে পুলিশের সন্তানেরা এমন কিছু অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাবে, যা এমনিতে তাদের পাওয়ার সুযোগ নেই। ঘোড়সওয়ার বাহিনী ঘোড়ায় চড়াবে, ট্রেনিং স্কুলের অস্ত্রাগার দেখা যাবে, ছাদে দড়ি বেয়ে কম্যান্ডোদের নামার প্রশিক্ষণ দেখবে। পুলিশ কুকুর নানা কসরতও দেখাবে।
এ বার কলকাতা পুলিশের প্রতিটি অফিসে ক্যাম্পের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল বলে লালবাজারের দাবি। ফর্ম পাওয়া যাচ্ছে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে। বাবা-মা ফর্ম পূরণ করে তাঁদের সন্তান যে সুস্থ, সেই মর্মে ডাক্তারের শংসাপত্র-সহ জমা দেবেন।
কিন্তু অন্য সামার ক্যাম্পে ভিড় হলেও কেন তাঁদের সামার ক্যাম্প ফাঁকা যাচ্ছে? এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। যদিও এক শীর্ষ পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘বহু অভিভাবক গ্রীষ্মের ছুটিতে টানা ১০ দিন রোজ এতটা সময় ধরে সন্তানকে সম্ভবত ছাড়তে চান না। শিবিরের গুরুত্বও তাঁরা বুঝে উঠতে পারেননি। অনীহা হয়তো সেই জন্যই।’’ এ ভাবে টানা কয়েক দিনের জন্য বাচ্চা ছাড়তে হলেও অন্য সামার ক্যাম্পগুলিতে কিন্তু ভিড় হচ্ছে ভালই। এ প্রসঙ্গে পুলিশের বেশ কয়েকটি থানার ওসিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা জানান, এমন ক্যাম্প হচ্ছে বলে তাঁরা জানেনই না। অতএব প্রচারের যে খামতি রয়েছে সেটা পরিষ্কার। কিন্তু দু’বছর ধরে এই অবস্থা কেন? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি।