Coronavirus Third Wave

মায়ের সঙ্গেই থাকবে শিশু, যুদ্ধের প্রস্তুতি তেমনই

তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুরা বেশি সংক্রমিত হতে পারে বলে আশঙ্কা। যার প্রস্তুতিতে রাজ্যে যাবতীয় পরিকল্পনা হচ্ছে।

Advertisement

অজয় চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২১ ০৬:৫৬
Share:

ফাইল চিত্র।

বড়দের অনেকেই ইতিমধ্যে সংক্রমিত হয়ে গিয়েছেন। কিংবা তাঁদের প্রতিষেধক নেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু শিশুরা এখনও প্রতিষেধক পায়নি। তাই তাদের ঝুঁকি এখন অনেক বেশি। সে জন্যই তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুরা বেশি সংক্রমিত হতে পারে বলে আশঙ্কা। যার প্রস্তুতিতে রাজ্যে যাবতীয় পরিকল্পনা হচ্ছে।

Advertisement

সংক্রমণের গত দু’টি ঢেউয়ে পর্যবেক্ষণ, বড়দের তুলনায় শিশুদের (এ দেশে ১২ বছর পর্যন্ত) আক্রান্তের হার ৩ শতাংশ। কানাডায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে অল্প বয়সের যত জন (২০ বছর পর্যন্ত) সংক্রমিত হয়েছেন, তৃতীয় ঢেউয়ে তার দ্বিগুণ হয়েছেন। সেই নিরিখে এখানেও যদি তাই হয়, তা হলে ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে সেটি ৫-৭ শতাংশ হবে। এ রাজ্যে দ্বিতীয় ঢেউয়ে দৈনিক সর্বমোট ২০ হাজার আক্রান্তের মধ্যে ২০০ জনের বেশি শিশু কখনওই হাসপাতালে ভর্তি ছিল না। সেই হিসেব ধরলে, তৃতীয় ঢেউয়ে শিশু সংক্রমিতের দ্বিগুণ সংখ্যাটি হবে ৪০০। অর্থাৎ, ৪০০-৫০০ জন মতো শিশুর ভর্তির প্রয়োজন পড়তে পারে। তাতে শিশুদের চিকিৎসায় ৫ শতাংশ সিসিইউ এবং ১০ শতাংশ এইচডিইউ লাগার কথা। প্রশ্ন হল, শতাংশের হিসেবে শিশু সংক্রমিত কম কেন? এর একটি কারণ, ওদের নাকের মিউকাস মেমব্রেন অনেক মোটা। সেই সঙ্গে ওদের নাক দিয়ে জল বেশি বেরোয়। তাই ভাইরাস তার ‘টার্গেট সেল’-এ পৌঁছতে পারে না। ঢুকলেও নাকের জলের সঙ্গে ধুয়ে বেরিয়ে যেতে পারে।

যুক্তি যাই বলুক, তবুও সব প্রস্তুতি সরকারের থাকবেই। অনুমান, চলতি জুনের শেষ বা জুলাইয়ের শুরুতে দ্বিতীয় ঢেউ থামবে। তৃতীয় ঢেউ আসার আগে ২-৩ মাসের ব্যবধান পাওয়া যাবে। ওই সময়ে শিশুদের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিকু), এইচডিইউ বাড়ানোর পরিকল্পনা হয়েছে। পিকু-র ২৫০-৩০০ শয্যা আলাদা থাকবে করোনা আক্রান্তের জন্য। দরকারে সেটা ৫০০ পর্যন্ত বাড়ানো হবে। প্রাথমিক স্তরে ৫০০ এইচডিইউ রাখা হচ্ছে। সেটিও ১০০০ অবধি বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তা হলে করোনা আক্রান্ত সঙ্কটজনক শিশুদের জন্য মোট ৮০০ শয্যা রাখা হচ্ছে। পরে প্রয়োজনে সেটি দেড় হাজার অবধি বাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারব। সরকারি ব্যবস্থায় সদ্যোজাত বা এক মাসের কমবয়সি শিশুদের জন্য মোট ৬৯টি এসএনসিইউ-এ (সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট) ২৫৪৩টি শয্যা আছে। অতিসঙ্কটজনকের জন্য কিছু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (নিকু) রয়েছে। সেখানেও কিছু শয্যা আলাদা থাকবে। নিকু-তেও শয্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

Advertisement

মূল পরিকল্পনাই হল করোনা আক্রান্ত সাধারণ শিশুর জন্য সরকারি হাসপাতালে শয্যার ব্যবস্থা করা। কারণ, কোনও শিশুই মা ছাড়া থাকবে না। দ্বিতীয় ঢেউয়ে রাজ্যে সরকারি শয্যা বাড়িয়ে ২৬ হাজার করা হয়। তার মধ্যে ৪০ শতাংশ মহিলা শয্যা। তৃতীয় ঢেউয়ে তা ৬০ শতাংশ করা হবে, যাতে শিশুর সঙ্গে তার মা থাকতে পারেন।

দেখা যাচ্ছে, পরিবারে এক জন পজ়িটিভ হলে বাকিরাও সংক্রমিত হচ্ছেন। তাই শিশুর সঙ্গে তার মা-ও আক্রান্ত হয়ে আসার আশঙ্কা রয়েছে। তা হলে দু’জনের একই সঙ্গে চিকিৎসা চলবে। কিন্তু মা যদি নন-কোভিড বা আগে সংক্রমিত হয়ে থাকেন? তখন তাঁকেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। শিশুদের জন্য আলাদা করে ৮০টি ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা হচ্ছে। এ ছাড়াও নিকু ও এসএনসিইউ-তে নিওনেটাল ভেন্টিলেটর রয়েছে। বড়দের জন্য যে ভেন্টিলেটর রয়েছে, তা থেকে কয়েকটিকে রূপান্তর করছি দু’বছরের বেশি বয়সি শিশুর চিকিৎসার জন্য। পরীক্ষামূলক ভাবে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেগুলি দেখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৩০০-৫০০টি পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর রাখা হচ্ছে।

ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির দিকেও নজর থাকছে। যেমন, শিশুদের আঙুল ছোট হওয়ায় বড়দের পালস অক্সিমিটার কাজে আসে না। তাই রাজ্যের সর্বত্র পাঠানোর জন্য পেডিয়াট্রিক পালস অক্সিমিটার কেনা হচ্ছে। জেলায় একটি করে পেডিয়াট্রিক ইউনিট ব্যবস্থা করাটাই এখন লক্ষ্য। পেডিয়াট্রিক ইউনিটের কাছাকাছি এইচডিইউ রাখার পরিকল্পনা হচ্ছে। যেখানে বাইপ্যাপ, হাই-ফ্লো অক্সিজেন থাকবে।

মানব সম্পদ অর্থাৎ পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীর প্রসঙ্গে এ বার আসছি। ইতিমধ্যেই সংক্রমিত শিশুদের চিকিৎসায় নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়েছে। প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তুও দ্রুত তৈরি হচ্ছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক শিশুরোগ চিকিৎসক থাকলেও সমস্ত চিকিৎসকেরা যাতে শিশুদের বিষয়গুলি সামলাতে পারেন, সে জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভাবনা আছে। জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসারদেরও সেই কাজে লাগানো হবে। এ ছাড়াও নিকু, পিকু-সহ অন্যান্য শিশু ওয়ার্ডে প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ নার্স রয়েছেন। সব কিছু যথাযথ কাজে লাগিয়ে তৃতীয় যুদ্ধ জয়-ই লক্ষ্য।

(লেখক স্বাস্থ্য অধিকর্তা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন