দুষ্কৃতী তাণ্ডব চিনা দম্পতির বাড়িতে

বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে বিরোধের জেরে এক প্রৌঢ় চিনা দম্পতির বাড়ি লণ্ডভণ্ড করে দু’ঘণ্টা ধরে লুঠপাট ও তাণ্ডব চালাল একদল দুষ্কৃতী। অভিযোগ, তারা সংখ্যায় ছিল প্রায় শ’খানেক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৬ ০০:৩২
Share:

লণ্ডভণ্ড ঘর। — নিজস্ব চিত্র

অনেকটা সিনেমায় দেখা দৃশ্যের মতোই সাংঘাতিক।

Advertisement

বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে বিরোধের জেরে এক প্রৌঢ় চিনা দম্পতির বাড়ি লণ্ডভণ্ড করে দু’ঘণ্টা ধরে লুঠপাট ও তাণ্ডব চালাল একদল দুষ্কৃতী। অভিযোগ, তারা সংখ্যায় ছিল প্রায় শ’খানেক। দম্পতির খাট, বিছানা-সহ গেরস্থালির বিভিন্ন জিনিসপত্র দোতলা থেকে নীচে ফেলে দেওয়া হয়। দু’ঘণ্টা ধরে চলে ভাঙচুর। শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে সাউথ ট্যাংরা রোডে। ওই ঘটনায় প্রগতি ময়দান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন চিনা দম্পতি। তাঁদের দাবি, বাড়িতে ওই হামলার ঘটনার পরে নগদ বেশ কিছু টাকাও
খোয়া গিয়েছে।

ট্যাংরার যে বাড়িতে ওই ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে সস্ত্রীক ভাড়া থাকেন লিয়াও সি অন নামে ওই চিনা ব্যক্তি।

Advertisement

বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে বিরোধ কলকাতা শহরে নতুন কিছু নয়। ভাড়াটেকে ওঠাতে না পেরে বাড়িওয়ালা তাঁর ঘরে গুন্ডা-মস্তান পাঠিয়ে গণ্ডগোল করেছে, এমন ঘটনাও অনেক সময়ে ঘটে। কিন্তু এক জন ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করতে একশো লোকের বাহিনী হামলা চালিয়েছে, এমনটা বিরল। আর এখানেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ‘জমি মাফিয়া’-র দিকে আঙুল তুলেছেন। সাধারণ কোনও বাড়িওয়ালা তাঁর ভাড়াটেকে হটাতে এই মাপের কাজ যে করতে পারবেন না, সে কথা তদন্তকারীদের একাংশও স্বীকার করে নিচ্ছেন।

চায়না টাউন তল্লাটে, ৪৭ নম্বর সাউথ ট্যাংরা রোডে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়াটে হিসেবে রয়েছেন লিয়াও সি অন। তাঁর অভিযোগ, এ দিন সকালে স্ত্রীকে নিয়ে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে যাওয়ার পরে শ’খানেক দুষ্কৃতী তাঁদের বাড়িতে ঢুকে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে ভাঙচুর চালায়। বাড়ির মধ্যে আলমারি, বিছানা তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাইরে বার করা হয়। লিয়াও অভিযোগ দায়ের করেছেন বাড়ির বর্তমান মালিক নগেন্দ্র রামের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত এই ব্যক্তি চায়না টাউনের বেশ কিছু জমি কিনে প্রোমোটিং করছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য।

তবে নগেন্দ্র রাম বলছেন, ‘‘ওই বাড়িটা আমি ২০১১-তে কিনেছি। চিনা পরিবারটি আমার সম্পত্তি জোর করে দখল করে রেখেছে।’’ ভাড়াটে লিয়াওয়ের দাবি, ‘‘আমরা ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বাস করছি। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে অন্যায় ভাবে আমাদের জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তারক্ষীকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে।’’

নিরাপত্তারক্ষী তাপস মণ্ডলের কথায়, ‘‘সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ প্রায় একশো জন দুষ্কৃতী বাড়িতে ঢোকে। দোতলায় লোহার গেটের তালা রড দিয়ে ভাঙার শব্দ শুনে আমার ঘুম ভেঙে যায়। বাধা দিতে গেলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ওরা।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, সাউথ ট্যাংরা রোডের দোতলার বাড়িটিতে আগে ভাড়াটে হিসেবে ছিলেন লিয়াও-এর দাদা। তিনি মারা যাওয়ার পরে লিয়াও দোতলায় থাকতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি বাড়িওয়ালার সঙ্গে কোনও চুক্তি করেননি। বাড়িটি কিনে নেওয়ার পরে সে কথা জানিয়ে আদালতে মামলা করেন নগেন্দ্র রাম। সেই মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। তা হলে এই ভাবে হামলা চালানো হল কেন?

নগ্রেন্দ্র রামের দাবি, ‘‘আমাকে ফাঁসানোর জন্যই লিয়াও ও তাঁর লোকজনই সকালে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। আমি এতে জড়িত নই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন