সুরজিৎ মজুমদার।
ডান হাতের মুঠোয় ধরা মোবাইল। সেটি কানে লাগিয়েই চলছে কথাবার্তা। বাঁ হাতের আঙুলের ফাঁকে গোঁজা জ্বলন্ত বিড়ি। সেই হাতেই ধরা স্টিয়ারিং। মাঝেমধ্যেই বাঁ হাত ধোঁয়া টানতে উঠে যাচ্ছে ঠোঁটে। দু’হাত ছাড়াই তখন ফাঁকা স্টিয়ারিংয়ে ছুটছে বাস।
সেই বাসে ভর্তি তখন কলকাতার একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কচিকাঁচারা। গল্প করছে, হাসছে, খেলছে তারা। কিন্তু সে সব খেয়াল নেই চালকের। ফোনের কথাবার্তায় ব্যস্ত তখন। ঘটনাটি বুধবার বেলা পৌনে ১১টার। বারাসত থেকে বিমানবন্দরের দিকে এ ভাবেই ছুটছিল বাস। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ, ব্যস্ত রাস্তা ধরে।
ঘটনাচক্রে সেই সময়ে একই রাস্তা ধরে দোলতলা পুলিশ লাইনে অফিসের কাজে যাচ্ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। মধ্যমগ্রাম চৌমাথার কাছে সেই বাসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে গাড়ির লুকিং গ্লাসে দৃশ্যটি দেখে চমকে ওঠেন পুলিশ সুপার। সঙ্গে সঙ্গেই সোজা বাসের সামনে নিজের গাড়ি দাঁড় করান তিনি। থামতে বলেন বাসটিকে। অভিজিৎবাবু এক লাফে বাসে উঠে দেখেন, তখনও চালকের এক হাতে জ্বলন্ত বিড়ি আর অন্য হাতে ধরা মোবাইল।
সুরজিৎ মজুমদার নামে ওই চালককে বাস থেকে নামিয়ে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয় মোবাইল ফোনটিও। বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানোর দায়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭৯ ধারায় তাঁর নামে মামলাও দায়ের করে পুলিশ। আটক করা হয় গাড়ির কাগজপত্রও।
পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইল কানে বাস চালাতে গিয়ে মুর্শিদাবাদের করিমপুরে ৪২ জনের মৃত্যুর পরেও যে টনক নড়েনি কারও, এ দিনের ঘটনায় তারই প্রমাণ মিলল। অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘দুঃখের বিষয় হল, এত নিয়ম-সচেতনতা-জরিমানা সত্ত্বেও বিপজ্জনক এই প্রবণতা পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না।’’
এ দিকে, এ দিন এ সব টালবাহানায় দেরি হয়ে যায় বেশ খানিকটা। কিন্তু স্কুলে তো পৌঁছতে হবে পড়ুয়াদের। তাই দোলতলা পুলিশ লাইন থেকে এক চালককে ডেকে আনা হয়। তিনিই রাস্তার পাশ থেকে বাসটি চালিয়ে স্কুল পর্যন্ত নিয়ে যান পড়ুয়াদের। হঠাৎ এত পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে যায় কিছু পড়ুয়া। অভিজিৎবাবু অভয় দিয়ে তাদের বলেন, ‘‘ভয় পেও না, সকলকে চকলেট খাওয়াব। তবে ড্রাইভার কাকুরা কানে মোবাইল নিয়ে গাড়ি চালালে বারণ করতে হবে। বাড়িতেও জানিয়ে দেবে। কেমন?’’ পুলিশকাকুর কথায় ভয় কাটলে জোর গলায় সম্মতি জানায় স্কুলপড়ুয়ারাও।