বেলতলা রোড । —রাস্তা আটকে মণ্ডপ।
দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই কালীপুজো। এবং ফের শহরজুড়ে যত্রতত্র রাস্তা আটকে মণ্ডপ। দুগার্পুজোর চেয়ে কালীপুজো সংখ্যায় অনেক বেশি। ফলে জটিলতার মাত্রাটাও অনেক বেশি।
পুজো খুব বড় মাপের না হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রতিমার মণ্ডপের মুখোমুখি আরও একটি মঞ্চ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। ফলে পায়ে-পায়ে প্যান্ডেলে শম্বুকগতি শহরের। দুর্গাপুজোর কলকাতায় বহু বিধিনিষেধ থাকে পুলিশ-পুরসভার তরফে। শহরের যান-শাসনকে সুষ্ঠু রাখাটা চ্যালেঞ্জও হয়ে ওঠে পুলিশের কাছে। তা হলে কালীপুজোয় এই হাল কেন? অনেকের মতে, দুর্গাপুজো পেরিয়ে সব কড়াকড়ি শিথিল হয়ে যাওয়া এবং প্রশাসনের গা-ছাড়া মনোভাবই রয়েছে এর নেপথ্যে।
পুলিশ বলছে অনুমতি নিয়েই তৈরি হয়েছে মণ্ডপ ও মঞ্চ। কিন্তু রাস্তা আটকে প্যান্ডেলেই বা অনুমতি থাকবে কেন? উদ্যোক্তাদের যুক্তি, বেশির ভাগই পুরনো পুজো। যার জেরে প্রশ্ন উঠছে সেই পুজোগুলিকে এখনও অনুমতি দেওয়া নিয়েও।
রাজা রামমোহন সরণি ।
ভবানীপুরের বেলতলা রোডে হাজরা বারোয়ারি সঙ্ঘ। মণ্ডপের উচ্চতা এতই বেশি যে সিগন্যাল দেখাই যাচ্ছে না। সঙ্গে দোসর রাস্তার অনেকখানি জুড়ে থাকা মণ্ডপের জেরে গাড়ি চলাচলে সমস্যা। এই মণ্ডপের প্রায় গায়ে গায়েই বেলতলা বারোয়ারি সঙ্ঘের পুজো। তার মণ্ডপও রাস্তা আটকে। ফলে দিনের বেশির ভাগ সময়েই যানজটে থমকে থাকছে গোটা তল্লাট।
প্রায় একই ছবি মনোহর পুকুর রোডে। রাস্তা জুড়ে থাকা মণ্ডপের পাশেই বিশাল মঞ্চ। রাস্তার দুশো মিটারের মধ্যে দশ মিটার খালি রেখে বাঁশের তোরণ। দু’পাশে বাঁশ পোঁতায় আরও সরু হয়ে গিয়েছে রাস্তা। লেক ভিড় রোডে আবার রাস্তার প্রায় ৮০ শতাংশ জুড়ে মণ্ডপ তৈরি চলছে। দু’জায়গাতেই অপরিসর হয়ে পড়া রাস্তায় সর্বক্ষণ গাড়ির লম্বা লাইন।
বৌবাজারে আমহার্স্ট স্ট্রিটেও ১০০ মিটার দূরত্বে তিনটি বড় মণ্ডপ। রাস্তার অর্ধেকটা দখল করে রাখা মণ্ডপের পাশে রাস্তার উপরেই বড় মঞ্চও। পথের দু’পাশে ইতিউতি বাঁশ ছড়িয়ে। আর তার জেরে? এলাকায় গাড়ির চাকা নড়ছে না। বৌবাজার থেকে ধর্মতলা যেতে আধ ঘণ্টা বাড়তি সময় লেগেছে মঙ্গলবারই।
শরৎ ব্যানার্জি রোড। ছবিগুলি তুলেছেন রণজিৎ নন্দী।
রাস্তা আটকে মণ্ডপ বা মঞ্চ তৈরির প্রসঙ্গে সব উদ্যোক্তারই যুক্তি এক— ‘‘সব পুজোই প্রাচীন পুজো। পুজোর ক’দিন একটু সমস্যা হবে। এ নিয়ে আপত্তি থাকার কথা নয়।’’ লেক ভিউ রোডের কালীপুজোর উদ্যোক্তা স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের পুজো ৬০ বছরের পুরনো। গাড়ি যাতায়াতের জন্য রাস্তা ছেড়েই মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। এতে যানজট হওয়ার কথা নয়।’’ আর ভবানীপুরের হাজরা বারোয়ারি সঙ্ঘের পুজো কমিটির তরফে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সন্দীপরঞ্জন বক্সীর কথায়, ‘’৪০ বছর ধরে এ ভাবেই পুজো হচ্ছে। আপনিই প্রথম আপত্তি করলেন। এর জন্য যানজট হওয়ার কথা নয়।’’
দুর্গাপুজোর মুখে যানজট ঠেকাতে পুলিশের কাছে কোনও দাওয়াই ছিল না। মহালয়ার আগে থেকেই যানজটে জেরবার হয়েছে শহর। আর কালীপুজো শুরু না হতেই শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে শহরবাসীকে। দুর্গাপুজোর আগে শহরে যানজটের কারণ হিসেবে পুলিশের কাছে নানা ব্যাখ্যা ছিল— শহরের বাইরে থেকে পুজোর বাজার করতে আসা মানুষের ভিড়, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ থেকে শুরু করে মিটিং-মিছিল। কিন্তু এখন দুর্গাপুজো পার হয়েছে, মিটিং-মিছিলও নেই। তা হলে যানজটে এই হাল কেন? সদুত্তর মেলেনি।
পুলিশের এক আধিকারিকের শুধু বলেন, ‘‘পুজোর দু’তিন দিন আগে এ রকম যানজট থাকবে। পুজো শুরু হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’’