যানজটে স্তব্ধ রাস্তা। সোমবার রাজাবাজারে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিশু পড়ুয়াদের হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে কলকাতা কার্যত অচল করে দিলেন এক দল বিক্ষোভকারী। অবরোধ-বিক্ষোভের জেরে পথেঘাটে নাকাল হলেন প্রচুর মানুষ। সোমবার দুপুরে রাজাবাজার মোড়ে শুরু হওয়া ওই বিক্ষোভ চলে প্রায় ছ’ঘণ্টা ধরে। রাত সাড়ে ৮টার পরে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। রেল সূত্রের খবর, এ দিন রাজধানী ও দুরন্ত এক্সপ্রেস-সহ বেশ কিছু ট্রেন ধরার জন্য বহু যাত্রী শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছতেই পারেননি। অফিসফেরত বহু মানুষকেও এ দিন কর্মস্থল থেকে হেঁটে শিয়ালদহ স্টেশনে যেতে হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘লেখাপড়া করানোর জন্য ৫২টি শিশুকে পূর্ণিয়া থেকে কলকাতা হয়ে সাতারায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পুলিশ জানতে পেরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। রাজ্য প্রশাসনের কাছে খবর আসে। যেখান থেকে ওদের নিয়ে আসা হয়েছিল, আমরা শিশু কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে তাদের সেখানে ফিরিয়ে দেব।’’ প্রশাসন শিশুদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করেছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
পুলিশ জানায়, ওই জিজ্ঞাসাবাদের প্রতিবাদেই বেলা আড়াইটে নাগাদ জনা পঞ্চাশ লোক রাজাবাজার মোড়ে এসে এপিসি রোড অবরোধ করেন। গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের সময় শিশু এবং তাদের শিক্ষককে হেনস্থা করেছে।
অবরোধের জেরে যানবাহনের জট পাকিয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি সামলাতে শ্যামবাজারের দিক থেকে আসা শিয়ালদহমুখী গাড়িগুলি সুকিয়া স্ট্রিট দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। শিয়ালদহের দিক থেকে উত্তরমুখী গাড়িগুলি রাজাবাজারের আগে থেকেই ঘুরিয়ে দিতে শুরু করে পুলিশ। বিক্ষোভ চলার সময়েই আরও শ’খানেক লোক তাতে যোগ দেন। বিকেলে এক দল লোক শিয়ালদহ উড়ালপুলের উপরে অবরোধ শুরু করে দেন। তার জেরে শিয়ালদহ স্টেশনের দিকে আর কোনও গাড়ি আসতে পারেনি।
সন্ধ্যায় দেখা যায়, সারি দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। লোকজন উড়ালপুলের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্টেশনের দিকে যাচ্ছেন। পুলিশি সূত্রের খবর, শিয়ালদহের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অবরুদ্ধ হওয়ায় যানজট ছড়াতে শুরু করে। গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়ার ফলে কনভেন্ট রোড, সিআইটি রোড, সুকিয়া স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়। শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ প্রথম দফার অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তার পরে পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। কিন্তু দীর্ঘ ক্ষণের অবরোধে বিস্তীর্ণ এলাকায় যানবাহন তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল। পুলিশের চেষ্টা সত্ত্বেও সেই যানজট চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এর মধ্যে বিক্ষোভ-অবরোধ ছড়িয়ে পড়ে বেশ কয়েকটি জায়গায়।
রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে এপিসি রোডে ফের অবরোধ শুরু হয়। রাত ১১টা নাগাদ সেই অবরোধ ওঠে। রাতে অবরোধ হয় মল্লিকবাজার, পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়েও। মল্লিকবাজারে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বিক্ষোভকারীরা উঠে গেলেও পার্ক সার্কাস মোড়ের অবরোধ চলে গভীর রাত পর্যন্ত।