কারমেলের সেই পড়ুয়াকে ব্যঙ্গ করার অভিযোগ

মেয়ের সহপাঠীদের একাংশের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ আনলেন কারমেল প্রাইমারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রীর মা। এর পিছনে অভিভাবকদের একাংশের মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০২:৩৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

স্কুলে ফিরে শান্তিতে পড়াশোনা করতে পারছে না মেয়ে। সহপাঠীদের টিপ্পনীতে জেরবার সে। বিনা দোষে নাচের শিক্ষককে হেনস্থা করা হয়েছে বলে দোষারোপ করা হচ্ছে তাকে।

Advertisement

মেয়ের সহপাঠীদের একাংশের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ আনলেন কারমেল প্রাইমারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রীর মা। এর পিছনে অভিভাবকদের একাংশের মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

দ্বিতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রীর যৌন নিগ্রহের অভিযোগকে কেন্দ্র করে গত ৯ ফেব্রুয়ারি স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকেরা। সেই বিক্ষোভ এমনই ভয়াবহ আকার নেয় যে, মার খেতে হয় পুলিশকেও। অভিযুক্ত নাচের শিক্ষক সৌমেন রানাকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও চলে। ঘটনা গড়ায় আরও বহু দূর। এক দল অভিভাবকের অভিযোগ, মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে নাচের শিক্ষককে। তা নিয়ে চলে পাল্টা প্রতিবাদ। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ায় আতঙ্ক কাটিয়ে দু’সপ্তাহ পরে স্কুলে ফেরে ওই শিশু। কিন্তু স্কুলের শিক্ষিকাদের থেকে উপযুক্ত পরিবেশ পেলেও তাঁর মেয়ের কয়েক জন সহপাঠী অনবরত উত্ত্যক্ত করছে বলে অভিযোগ মায়ের।

Advertisement

ওই মায়ের অভিযোগ, ‘‘আমার মেয়েকে বলা হচ্ছে, তুই নাচতে পারিস না। তাই স্যারকে খারাপ বলেছেন তোর মা।’’ তাঁর বক্তব্য, শিশুরা এ কথা বলতে পারে না। অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের এই সব কথা শেখাচ্ছেন। সে কারণেই তারা স্কুলে এসে সেগুলিই বলছে। তিনি বলেন, ‘‘অনেক আশা নিয়ে এই স্কুলে মেয়েকে ফিরিয়ে এনেছিলাম। স্কুল কর্তৃপক্ষ যথেষ্টই সাহায্য করছেন। কিন্তু কিছু ছাত্রী আমার মেয়েকে বলছে তোর মা দুষ্টু।’’ এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি খুঁজতে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন বলে জানান তিনি।

গত ডিসেম্বর থেকে শহরে একের পর এক স্কুলে এই ধরনের অভিযোগ উঠছে। জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন, এম পি বিড়়লা, কারমেল প্রাইমারি স্কুল, কমলা গার্লস স্কুল এবং সম্প্রতি আলিপুর মাল্টিপারপাস গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলেও এই ধরনের অভিযোগ ওঠে। সব ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে পড়ুয়াদের। যেমন বৃহস্পতিবার আলিপুরের ওই স্কুলে নিরাপত্তারক্ষীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে গোলমাল প্রসঙ্গে সেখানকার প্রধান শিক্ষিকা তুষ্টি নাথ জানান, পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে সব অভিভাবক মেয়েদের স্কুল থেকে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানান। নিয়ম মতে, খাতায় সই করার পরে অভিভাবকের হাতে ছাড়া হয় ছাত্রীদের। কিন্তু বিক্ষোভের সময়ে জোর করে ছাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার দাবি জানান অভিভাবকেরা। তিনি বলেন, ‘‘সে সময়ে স্কুল অভিভাবকদের দাবি মেনে নিলে আখেরে ক্ষতি হতে পারত ছাত্রীদেরই। কারণ কে কার অভিভাবক, সেই সময়ে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না।’’ একই ভাবে কারমেল স্কুল থেকেও গোলমালের সময়ে পুলিশি ঘেরাটোপে যখন পড়ুয়াদের বাইরে বার করা হচ্ছিল, তখন তাদের চোখ-মুখে আতঙ্কের ছাপ ছিল স্পষ্ট। ফলে গোটা ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই পড়ুয়ারাই।

গোটা পরিস্থিতির কথা জেনে মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেল বলেন, ‘‘যে শিশুকে এ রকম কথা শুনতে হচ্ছে সেটা যেমন ক্ষতিকারক, যারা বলছে তাদের ক্ষেত্রেও ক্ষতিকারক। অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন