RG Kar Medical College Hospital

আরজি করে মৃত তরুণী চিকিৎসকের বাবাকে ফোন মুখ্যমন্ত্রীর! ‘মেরে ফেলা হয়েছে’, দাবি পরিবারের

চিকিৎসকের মৃত্যুর পর হাসপাতালে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে মৃতার মা জানিয়েছেন, হাসপাতালে নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর মেয়ে কখনও কিছু বলেননি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৪ ১৭:৪৫
Share:

আরজি কর হাসপাতাল থেকে উদ্ধার চিকিৎসকের দেহ। তাঁর বাবাকে ফোন মুখ্যমন্ত্রীর। — নিজস্ব চিত্র।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ। তবে চিকিৎসকের মায়ের দাবি, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। ‘অর্ধনগ্ন’ অবস্থায় জুনিয়র ডাক্তারের দেহ পড়েছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি। চিকিৎসকের বাবা জানিয়েছেন, তাঁদের ফোন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছেন, যতটা সম্ভব, তিনি ‘চেষ্টা’ করবেন।

Advertisement

শুক্রবার সকালে আরজি করের ইমার্জেন্সি বিভাগের চার তলায় সেমিনার হল থেকে ওই তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতেও অন ডিউটি ছিলেন তিনি। দুই চিকিৎসকের সঙ্গে খাওয়ার পরে রাত ২টো নাগাদ সেমিনার হলে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকের মা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে শেষ বার কথা হয়েছিল মেয়ের সঙ্গে। মহিলা বলেন, ‘‘রাত ১১টায় কথা হয়েছে। তখন ওরা খাবার অর্ডার করেছিল। আমায় বলল, তোমরাও খেয়ে নাও। তার পর কোনও কথা হয়নি। ওই শেষ।’’ এর পরেই চিকিৎসকের মা দাবি করেন, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মেয়েটাকে খুন করে ফেলেছে এরা। আমার এই একটা মাত্র মেয়ে। অনেক কষ্ট করে ডাক্তার করেছিলাম। লোকের সেবা করতে এসে নিজে খুন হয়ে গেল।’’

চিকিৎসকের মৃত্যুর পর হাসপাতালে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জুনিয়র ডাক্তারেরা মৃত্যুর প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মৃতার মা জানিয়েছেন, হাসপাতালে নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর মেয়ে কখনও কিছু বলেননি। অভিযোগ, চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ এই নিয়ে মন্তব্য করেননি। এই প্রসঙ্গে মৃতার মা বলেন, ‘‘আমার মেয়েকে খুন করেছে। ওর মতো ভাল মেয়ে হয় না। অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে ছিল দেহ। গায়ে কাপড় ছিল না। চশমাটা ভেঙে গিয়েছিল। মুখে আঘাতের চিহ্ন ছিল। রাতে ও একাই ছিল সেমিনার হলে। ভিতরে কোনও সিসি ক্যামেরা নেই।’’

Advertisement

তরুণীর বাবা জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কথা বলেছেন তাঁদের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীও ফোন করে কথা বলেছেন। কী বলেছেন তিনি? মৃতার বাবার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেছেন। তিনি বলেছেন, যতটা পারেন, চেষ্টা করবেন।’’ যদিও এই আশ্বাসে চিকিৎসকের বাবা এবং মা আপাতত স্বস্তি পাচ্ছেন না। তাঁর মায়ের কথায়, ‘‘আমার মেয়েটাকে কেউ ফেরত দিতে পারবেন না। খুশি কী করে হব? আগে বিচার হোক। মেয়ে চলে গেছে। জীবনে খুশি হতে পারব না।’’ চিকিৎসকের খুড়তুতো ভাই জানিয়েছেন, তিনি পড়াশোনায় বরাবর খুব ভাল ছিলেন। তবে কম মিশতেন। নিজের মতো থাকতেন। পরিবার এই মৃত্যুর বিচার চেয়েছেন।

চিকিৎসকের মৃত্যুতে উত্তাল আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ। মৃত্যুর প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন। সদস্যেরা জানিয়েছেন, বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে তদন্ত-সহ তাঁদের বাকি দাবি যত ক্ষণ পর্যন্ত মানা হবে না, তত ক্ষণ বন্ধ থাকবে কাজ। শুধু হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে। হাসপাতালের ভিতরে বিক্ষোভ দেখায় চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন। তারা ময়নাতদন্তের জন্য চিকিৎসকের দেহ নিয়ে যেতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত তাঁর দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্য হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়ারাও আরজি করে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন। হাসপাতালের সুপার ‘সত্য প্রকাশ্যে’ আনার দাবি তুলেছেন। ঘটনার তদন্তে গিয়েছেন খোদ কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। হাসপাতালে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিজেপি এবং বাম সংগঠন এআইডিএসও। এই ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ দাবি করেছে এপিডিআর (অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ ডেমোক্র্যাটিক রাইটস)। বিচারবিভাগীয় তদন্তেরও দাবি করেছে তারা। হাসপাতালের ঘরে-বাইরে এই বিক্ষোভের জেরে বিঘ্নিত চিকিৎসা পরিষেবা। বিপাকে পড়েছেন বহু রোগী এবং তাঁদের পরিবার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement