Iftar

Festival: ধর্মের বেড়া ভেঙে পড়শিকে কাছে টানার ইফতার

রমজানি কলকাতায় বড়দিনের পার্ক স্ট্রিট বা পুজোর গড়িয়াহাটের মতোই সুখাদ্যের টানে জনজোয়ার আছড়ে পড়ে জ়াকারিয়া স্ট্রিট অথবা পার্ক সার্কাসে।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২২ ০৭:১১
Share:

ব্যতিক্রমী: নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদে ইফতারের ছক ভাঙা আসর। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

তরুণ ইমাম সাহেব খুরশিদ রেজা নিমতলার এ তল্লাটে রোজ আসেন হাওড়ার পিলখানার বাসা থেকে গঙ্গা পার হয়ে। মসজিদের কেয়ারটেকার, প্রবীণ ইন্তেজার আহমেদের বাড়ি বেলগাছিয়ায়।

Advertisement

প্রায় তিন শতকের পুরনো, সুদৃশ্য প্রাচীন নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদের ধারেকাছে কোনও মুসলিম পরিবারের বসবাস নেই বললেই চলে। অনেকের ধারণা, পাশেই নিমতলার ঘাটের নামের পিছনে নিয়ামাতুল্লার নামের যোগ থাকতেও পারে! শনিবার সন্ধ্যায় এই মসজিদেই ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ পরিচয়ের বেড়া ভেঙে ইফতারের এক ছক-ভাঙা মিলনমেলায় যেন মিশে গেল গোটা কলকাতাই।

এ কালের রমজানি কলকাতায় বড়দিনের পার্ক স্ট্রিট বা পুজোর গড়িয়াহাটের মতোই সুখাদ্যের টানে জনজোয়ার আছড়ে পড়ে জ়াকারিয়া স্ট্রিট অথবা পার্ক সার্কাসে। তবে নিমতলা ঘাটের অদূরে, ১৭৪০ সালের মসজিদের ইফতার সমাবেশ আরও অন্য কথা মনে করাল। সত্তরোর্ধ্ব ইন্তেজার সাহেব বলছিলেন, “আগে পাড়াতেও অনেক মুসলিম থাকতেন। দেশভাগের সময় থেকেই মুসলিমেরা কলকাতার কয়েকটি পাড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেলেন। বেনিয়াটোলাতেও একটি অতি প্রাচীন মসজিদ রয়েছে।”

Advertisement

বিদগ্ধ নাট্য সমালোচক ও প্রাবন্ধিক, অশীতিপর শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় এই আসরেই মনে করালেন, “আমাদের প্রজন্ম দাঙ্গা, দেশভাগ দেখেছে। আজও প্রতি মুহূর্তে সম্প্রীতিতে ফাটল ধরানোর রাজনীতি চলছে। এমন উদ্যোগ খুব বেশি করে দরকার।” এই উদ্যোগের নেপথ্যে ‘নো ইয়োর নেবার’ মঞ্চের আহ্বায়ক সাবির আহমেদকে অভিনন্দন জানালেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষক, ইতিহাসবিদ তথা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর-সচিব জয়ন্ত সেনগুপ্ত। আজকের ভারতের বহুত্বের ধারার নেপথ্যে নানা সংস্কৃতির আহরণের ইতিহাস তিনি মনে করিয়ে দিলেন।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহম্মদ রিয়াজ, সমাজকর্মী মহম্মদ আনোয়ারা দিনভর উপবাস ব্রত পালন করে অতিথিদের জন্য ফল, শরবত, হালিম আয়োজনে ব্যস্ত। জানা গেল, একেবারে অ-মুসলিম এলাকার এই মসজিদে ভাড়াটেরা এক জন বাদে সকলেই হিন্দু দোকানদার। এ দিনের ইফতারে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কানিজ সিদ্দিকী, সমাজকর্মী দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাঁতরাগাছির একটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শেখ হায়দর আলি, রাজ্য পুস্তক পর্ষদের আধিকারিক অপরাজিতা দাশগুপ্ত, স্কুলশিক্ষিকা মাধুরী কাট্টির মতো অনেকেই আড্ডার মেজাজে মিলে গেলেন।

একই দিনে ভবানীপুরেও ঐক্যের ইফতারের ডাক দিয়েছিল অন্য একটি মঞ্চ। তাদের সংগঠক, পার্ক সার্কাসের নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী প্রতিবাদ মঞ্চের অন্যতম মুখ নওশিন বাবা খান বলছিলেন, এখানেই কৃষি বিল-বিরোধী আন্দোলনের সময়ে শহরের বিভিন্ন ধর্মের মানুষজন নাগাড়ে অনশন করেন। হিমাদ্রি ও মেঘমালা মুখোপাধ্যায় নামে এক দম্পতি রোজাদারদের প্রতি সংহতি রক্ষায় এ দিন উপবাস পালন করেন। নারকেলডাঙার খালধারের সুবিধা-বঞ্চিত শিশু ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে সব ধর্মের মানুষের ইফতার আসরও চলতি মাসেই বসার কথা।

হিন্দু, মুসলিমের ফাটল অস্বীকার করে বাঙালির বহুত্বের সংস্কৃতির জন্য বার বার সওয়াল করে গিয়েছেন শঙ্খ ঘোষ বা নবনীতা দেবসেনের মতো বিগত প্রজন্মের বাঙালিরা। আজকের ভারতে কিন্তু ধর্মের নামে মানুষজনকে কোণঠাসা করার প্রবণতা বাড়ছে। এই রমজানে কলকাতার বিভিন্ন ইফতার আসর প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষার দায়ও মনে করিয়ে দিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন