মাঝেমধ্যেই হঠাৎ বন্ধ ‘মা’ উড়ালপুল, কারণ জানে না কেউ

অফিসে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে বাইপাস থেকে মা উড়ালপুল ধরতে চেয়েছিলেন অমিত দাস। কিন্তু গাড়ি নিয়ে উড়ালপুলে উঠতে গিয়ে তিনি দেখেন, গার্ড রেল দিয়ে রাস্তা বন্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৭
Share:

গার্ড রেল দিয়ে আটকানো ‘মা’। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

অফিসে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে বাইপাস থেকে মা উড়ালপুল ধরতে চেয়েছিলেন অমিত দাস। কিন্তু গাড়ি নিয়ে উড়ালপুলে উঠতে গিয়ে তিনি দেখেন, গার্ড রেল দিয়ে রাস্তা বন্ধ। সেতু দিয়ে কোনও গাড়িকেই পার্ক সার্কাসের দিকে যেতে দিচ্ছেন না পুলিশকর্মীরা।

Advertisement

কেন? শুক্রবার শহরের বিভিন্ন দিকে অনুষ্ঠান ছিল রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। সাধারণত এই ধরনের ভিআইপি-দের কারণে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বা উড়ালপুল বন্ধ রাখার নজির শহরে এই প্রথম নয়।

কিন্তু শুধু এ দিনের সকালই নয়, বাইপাস থেকে পার্ক সার্কাসের দিকে যাওয়া গাড়িচালকদের এমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে মাঝেমধ্যেই। মাঝপথে গিয়ে তাঁরা দেখছেন, কোনও কারণ না দেখিয়েই হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মা উড়ালপুলের এক দিকের রাস্তা। কখনও কুড়ি মিনিট, কখনও আধঘণ্টা বন্ধ থাকছে সেই রাস্তা।

Advertisement

প্রধানত সময় বাঁচাতেই অনেকে এখন মা উড়ালপুল ব্যবহার করেন। যানজট না থাকলে বাইপাস থেকে ওই উড়ালপুল দিয়ে ধর্মতলা বা ময়দান পৌঁছতে সময় লাগে বড়জোর ২০ মিনিট। কিন্তু, দুম করে উড়ালপুল বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা। উড়ালপুল ধরার জন্য এতটা এগিয়ে এসে সেই উড়ালপুল ধরতে না পেরে বাধ্য হয়ে গাড়িগুলি নীচ দিয়ে পার্ক সার্কাস যাচ্ছে। উদ্দেশ্য, পার্ক সার্কাস থেকে এজেসি বোস রোড ফ্লাইওভার ধরা।

সল্টলেকের বাসিন্দা শুভ বসুর অভিযোগ, ‘‘উড়ালপুলে উঠতে না পেরে নীচ দিয়ে যাওয়ায় তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছনর বদলে আরও বেশি সময় লাগছে।’’

পুলিশের যুক্তি, বাইপাস থেকে উঠে উড়ালপুল যেখানে পার্ক সার্কাসে মিশেছে, সেখানে রাস্তা অনেকটা সরু। উড়ালপুল ধরে পার্ক সার্কাসে নামার মুখে যানজট হচ্ছে। পুলিশের আরও যুক্তি, যানজটে আটকে গাড়ির দীর্ঘ লাইনের ছবি লালবাজারে সিসিটিভি-তে দেখার পরেই বাইপাসের দিক থেকে মা উড়ালপুল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পরে গাড়ির চাপ কমলে খুলে দেওয়া হচ্ছে রাস্তা।

অথচ যে গাড়িগুলি উড়ালপুলে উঠতে পারছে না, সেই গাড়িগুলি তো নীচ দিয়ে গিয়ে পার্ক সার্কাসেই জমা হচ্ছে। তফাৎ শুধু এটুকুই, উড়ালপুলের বদলে তারা নীচ দিয়ে যাচ্ছে। তাতে সময়ও লাগছে বেশি। এর ফলে পার্ক সার্কাসে এক সময়ে অসংখ্য গাড়ি গিয়ে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা কার্যত লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে। উড়ালপুল দিয়ে এবং নীচ দিয়ে আসা সমস্ত গাড়িকেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তা হলে কেন গাড়িগুলিকে উড়ালপুল ধরতে দেওয়া হচ্ছে না? পার্ক সার্কাসের মুখের ওই যানজট থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়ই বা কী? উত্তর নেই পুলিশের কাছে।

অভিযোগ উঠেছে, পার্ক সার্কাস মোড়ের ট্র্যাফিক ব্যবস্থা যদি আরও মসৃণ ও সুষ্ঠু করা হয় তা হলে উড়ালপুল বন্ধ করার প্রয়োজনই হবে না। শুভবাবুদের আরও দাবি, বেলেঘাটার আগে থেকেই যদি জানা যায় উড়ালপুল বন্ধ, তা হলে বেলেঘাটা থেকেই ডান দিকে ঘুরে শিয়ালদহ, মৌলালি হয়ে ধর্মতলা চলে যাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে পার্ক সার্কাস দিয়ে ঘুরে যাবে না সিংহভাগ গাড়িই। তাতে সময় বাঁচবে। কারণ, উড়ালপুলে উঠতে না পারলেও গাড়ি নিয়ে কেউ আর পিছনে বেলেঘাটার দিকে আসেন না। সবাই পার্ক সার্কাসের দিক দিয়েই যেতে চান।

প্রশ্ন উঠেছে, বেলেঘাটার আগে থেকে কেন দক্ষিণমুখী গাড়িকে জানিয়ে দেওয়া হবে না উড়ালপুল বন্ধ? পুলিশকর্তাদের কাছে এ প্রশ্নের জবাব নেই। তবে, যখন-তখন উড়ালপুল বন্ধ করে দেওয়ার মতো ‘তুঘলকি’ সিদ্ধান্তের কথা মেনে নিয়েছেন তাঁরা। শুক্রবার দুপুরেই বাইপাসের দিক দুই দফায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল উড়ালপুল। লালবাজারের যুক্তি, রাষ্ট্রপতি রাজভবন থেকে বেরিয়ে এজেসি বসু উড়ালপুল এবং মা উড়ালপুল দিয়ে মিলন মেলায় একটি অনুষ্ঠানে যান। সেই পথেই ফেরেন।

কিন্তু সপ্তাহের অন্য দিনেও তো উড়ালপুল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘মা উড়ালপুল দিয়ে ময়দান থেকে বাইপাসে যাওয়ার সময়ে এখন পার্ক সার্কাস মোড়ে নামতে হয় না। একই ভাবে ফিরতি পথেও যদি এজেসি বসু উড়ালপুলের সঙ্গে মা উড়ালপুল জুড়ে দেওয়া যায়, তা হলে ময়দানমুখী গাড়িও পার্ক সার্কাস হয়ে যাবে না। ফলে, মা উড়ালপুলের ওই মুখে যানজটও হবে না।’’ ওই সংযুক্তির কাজ চলছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ভোগান্তি সইতে হবে বলেও পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন