গ্যাস-মামলায় ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

রান্নাঘরে গ্যাস লাগানোর দু’দিনের মধ্যেই গ্যাস শেষ। সিলিন্ডার থেকে বেরোতে শুরু করেছিল নোংরা জল। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছিলেন হালতুর বাসিন্দা মলয় মজুমদার। প্রায় আড়াই বছর পরে মলয়বাবুকে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মলয়বাবুকে ক্ষতিপুরণ দেওয়ার পাশাপাশি ওই গ্যাস প্রস্তুতকারক সংস্থাকে আরও একটি নির্দেশ দিয়েছেন ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১
Share:

রান্নাঘরে গ্যাস লাগানোর দু’দিনের মধ্যেই গ্যাস শেষ। সিলিন্ডার থেকে বেরোতে শুরু করেছিল নোংরা জল।

Advertisement

ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছিলেন হালতুর বাসিন্দা মলয় মজুমদার। প্রায় আড়াই বছর পরে মলয়বাবুকে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মলয়বাবুকে ক্ষতিপুরণ দেওয়ার পাশাপাশি ওই গ্যাস প্রস্তুতকারক সংস্থাকে আরও একটি নির্দেশ দিয়েছেন ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক। বলা হয়েছে, বিজ্ঞাপন দিয়ে সিলিন্ডার পরীক্ষার দিনক্ষণ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে গ্রাহকদের।

জানা গিয়েছে, প্রতিটি খালি সিলিন্ডার নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরীক্ষা করার কথা প্রস্তুতকারক সংস্থার। যদি দেখা যায় সেই সিলিন্ডার ঠিক অবস্থায় রয়েছে, তবেই তাতে গ্যাস ভরে গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা। সিলিন্ডার ঠিক না থাকলে তা আর ব্যবহার করা যাবে না, নষ্ট করে ফেলতে হবে সেটি। নিয়ম অনুযায়ী, খালি সিলিন্ডার পরীক্ষার পরে পরবর্তী পরীক্ষার দিনক্ষণ (এক সময় যা ছিল পাঁচ বছর পরে) প্রতিটি সিলিন্ডারের গায়ে উল্লেখ থাকার কথা। যাতে সেই দিনক্ষণ দেখে পাঁচ বছর পরে আবার নতুন করে সিলিন্ডার পরীক্ষা করা যায়। আর গ্রাহকেওরাও সিলিন্ডারের গায়ের ওই দিনক্ষণ দেখে বুঝতে পারেন যে সিলিন্ডারটি ব্যবহারযোগ্য রয়েছে।

Advertisement

দিনক্ষণ লেখা থাকে এ-১৫, বি-১৬ -- এই ভাবে। বছরের ১২ মাসকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। এখানে এ-১৫-র অর্থ ওই সিলিন্ডারটি ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসের মধ্যে আবার পরীক্ষা করতে হবে। কোনও গ্রাহকের কাছে যদি এমন সিলিন্ডার যায়, যেখানে সি-১৩ লেখা থাকে, তার অর্থ সেই সিলিন্ডারটি পরীক্ষা করার কথা ছিল ২০১৩ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে। যা না করেই গ্রাহকের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মলয়বাবু ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি যে সিলিন্ডারটি পান সেখানে লেখা ছিল ডি-১০। মানে সেই সিলিন্ডারটি ২০১০ সালের শেষ তিন মাসের মধ্যে পরীক্ষা করার কথা ছিল, যা হয়নি।

মলয়বাবুর আইনজীবী আসিফ হুসেন জানাচ্ছেন, আদালতে সওয়ালের সময়ে গ্যাস প্রস্তুতকারক সংস্থার পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, সিলিন্ডার পরীক্ষা সংক্রান্ত এই আইনটির সংশোধন করা হয়েছে। এখন পাঁচ বছরের বদলে ১০ বছর অন্তর পরীক্ষা করলেও চলবে। কিন্তু, আসিফ হুসেনের যুক্তি, সেই সংশোধন যদি ২০১০ সালে হয়ে থাকে তবে তার পর থেকে যে নতুন সিলিন্ডার বাজারে ছাড়া হয়েছে সেটি সেই সব সিলিন্ডারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হওয়ার কথা। কিন্তু, যে সিলিন্ডার মলয়বাবু পেয়েছিলেন, সেই ধরনের পুরনো সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর অন্তর পরীক্ষার নিয়মই বলবৎ থাকার কথা।

মলয়বাবুর ঘটনায় আদালত মনে করেছে সেই নির্দিষ্ট সময় অন্তর সিলিন্ডার পরীক্ষার কাজটি ঠিক মতো করা হচ্ছে না। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক ওই গ্যাস প্রস্তুতকারক সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে এ সম্পর্কে গ্রাহকদের অবহিত করতে। প্রতিটি সিলিন্ডার নেওয়ার সময়ে তার গায়ে সেই দিনক্ষণ কী ভাবে লেখা থাকে তা যাতে গ্রাহক বুঝতে পারেন এবং গ্যাস নেওয়ার সময়ে তা দেখে নেন, তার জন্য প্রস্তুতকারক সংস্থাকেই বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের সচেতন করতে বলেছে আদালত।

গ্যাসপ্রস্তুতকারক সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, পাঁচ বছরের ওই নিয়ম অনেক আগেই বদলে সাত বছর করা হয়েছিল। এখন সেটা ১০ বছর হয়েছে। পুরনো সমস্ত সিলিন্ডারের ক্ষেত্রেই সেই নিয়ম প্রযোজ্য। যে সিলিন্ডার সাত বছর পরে পরীক্ষার জন্য বি-১৩ লেখা হয়েছিল, সেটি এখন সি-১৬ লেখা হচ্ছে। কারণ, পরীক্ষার সময় বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে।

লক্ষ লক্ষ সিলিন্ডারে এ ভাবে হাতে লিখে দিনক্ষণ বদলানোর কাজ চলছে। এক কর্তার কথায়, “এর পরেও কোনও একটি সিলিন্ডারে ভুল বশত পুরনো দিনক্ষণ পরিবর্তন না হয়ে থাকলে এবং তা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে গেলে গ্রাহক সঙ্গে সঙ্গে তা বদলে ফেলতে পারবেন।”

সংস্থার অভিযোগ, মলয়বাবুকেও ওই সিলিন্ডার বদলে ফেলার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা না করে দু’বছর ধরে সেটি নিজের বাড়িতে রেখে মামলা লড়েছেন। সংস্থা জানিয়েছে, ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে। কিন্তু, কেন নোংরা জল? উত্তর পাওয়া যায়নি। বলা হয়েছে, সেই সিলিন্ডার মলয়বাবুর কাছে থাকার ফলে তা পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন