Eviction of Hawkers

শংসাপত্র আটকে, তবু হকার ‘উচ্ছেদের চেষ্টা’ বড়বাজারে

সূত্রের খবর, বড়বাজারের সত্যনারায়ণ পার্ক লাগোয়া ফুটপাত দখলমুক্ত করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে ওই এলাকার বেশ কয়েকটি মহলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৩ ০৬:৪৬
Share:

হকার দিবসের দিনই উচ্ছেদ প্রক্রিয়া। প্রতীকী চিত্র।

আন্তর্জাতিক হকার দিবসেই পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে বড়বাজার থেকে হকার উচ্ছেদের চেষ্টার অভিযোগ উঠল কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে। শুক্রবার দুপুরে সত্যনারায়ণ পার্ক লাগোয়া এলাকায় এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। শেষে পুলিশের বড় বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হকার আন্দোলনে যুক্ত নেতাদের দাবি, টাউন ভেন্ডিং কমিটির অনুমতি না নিয়ে এ ভাবে শহরের কোথাও হকার উচ্ছেদ করা যায় না। টাউন ভেন্ডিং কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনাই হয়নি। এ দিকে, পুরসভার হকার বিষয়ক দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্তেরা জানিয়েছেন, তাঁরা গোটা বিষয়টির কিছুই জানেন না।

Advertisement

সূত্রের খবর, বড়বাজারের সত্যনারায়ণ পার্ক লাগোয়া ফুটপাত দখলমুক্ত করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে ওই এলাকার বেশ কয়েকটি মহলে। অভিযোগ, সেখানে ফুটপাত দখল করে থাকা হকারদের দাপটে এলাকার দোকানগুলিতে লোকজন ঢুকতে পারেন না। এ নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক বিবেক গুপ্তের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। এর পরে শুক্রবার হঠাৎই সেখানে হাজির হন পুরসভার লোকজন। তাঁদের সঙ্গে ছিল পুলিশ। রীতিমতো ক্রেন নিয়ে সেখানে হকার উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। এর পরেই হকার এবং উচ্ছেদ করতে যাওয়া লোকজনের মধ্যে বচসা শুরু হয়। এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, ‘‘এক সময়ে হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়। পোস্তা থানা থেকে বিশাল বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’’

‘বড়বাজার সত্যনারায়ণ হকার্স কল্যাণ সমিতি’র সদস্য কিষাণ সোনকার নামে এক যুবক বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক হকার দিবসের অনুষ্ঠান থাকায় বহু হকার এলাকায় ছিলেন না। সেই সুযোগেই সম্ভবত ওই অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের কিছুই না জানিয়ে এ ভাবে কী করে তুলে দেওয়া হতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলি আমরা। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরাও শেষ পর্যন্ত উচ্ছেদের কোনও কাগজ দেখাতে পারেননি।’’ ‘বড়বাজার হকার্স কল্যাণ সমিতি’র সভাপতি প্রদীপ সোনকারের আবার অভিযোগ স্থানীয় বিধায়ক বিবেকের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘‘বিবেক গুপ্ত লোক লাগিয়ে এই উচ্ছেদের চেষ্টা করেছেন।’’ এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিবেক বলেন, ‘‘ওই জায়গায় হকারদের দাপটে রাস্তা দখল হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি চলতে পারছে না। মন্দিরের দরজাতেও দোকান দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই কারণেই সম্ভবত পুরসভা থেকে গিয়েছিল। কিন্তু ঠিক কী কারণে, আমি নিজেও বলতে পারব না। তবে, মেয়র কলকাতার জন্য যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই মেনে চলা হবে।’’

Advertisement

কলকাতা শহরের বহু রাস্তা বা ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যাওয়া নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে একাধিক বার উষ্মা প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে সেই সঙ্গেই সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে একাধিক বার এ-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, হকার উচ্ছেদের পক্ষে নয় সরকার। বরং আইন মেনে হকারদের শংসাপত্র দিয়ে কাজ করানোর পক্ষে তারা। সেই কারণেই সম্প্রতি শহর জুড়ে হকার-সমীক্ষা করা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, ফুটপাতের এক-তৃতীয়াংশে হকারেরা বসবেন। বাকিটা ছেড়ে রাখতে হবে পথচারীদের জন্য। এই নিয়ম মেনে সব কিছু ঠিক থাকবে যাঁদের, তাঁদের দেওয়া হবে হকার শংসাপত্র। এই শংসাপত্রের জন্য পুরসভা কোনও টাকা নেবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত আপাতত ঝুলে রয়েছে। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর মতামত জানতে তাঁর দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই ঘটল এই ঘটনা।

‘হকার সংগ্রাম কমিটি’র যুগ্ম সম্পাদক তথা টাউন ভেন্ডিং কমিটির সদস্য দেবাশিস দাস বললেন, ‘‘এমনটা কখনওই করা যায় না। কী করে পুরসভার কর্তাদের অনুমতি না নিয়ে এই কাজ করার চেষ্টা হল, সেটা জানা দরকার। টাউন ভেন্ডিং কমিটির আগামী বৈঠকেই বিষয়টি তোলা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন