সংঘর্ষের পরে: ভাঙা জানলা দেখাচ্ছেন এক এলাকাবাসী। শনিবার জগৎপুরের চড়কতলায়। ফাইল চিত্র
উৎসবের মধ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের আকার নিল বাগুইআটির জগৎপুরের চড়কতলা এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিজয়া দশমীর রাতে গুলিচালনা, বাড়ি-গাড়ি ভাঙচুর, তাণ্ডবের কিছুই বাদ রাখেনি শাসকদলের অভ্যন্তরীণ লড়াই। সেই লড়াইয়ে সঙ্কটজনক অবস্থায় এক সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন জন। যদিও গুলিচালনার অভিযোগ পুলিশ অস্বীকার করেছে।
গত কয়েক মাস ধরে বাগুইআটি এলাকায় ক্ষমতার রাশ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক পূর্ণেন্দু বসু এবং সাংসদ দোলা সেন ও যুব তৃণমূলের নেতা তথা কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তীর অনুগামীদের মধ্যে লড়াই চলছে। তারই রেশ ধরে শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ চড়কতলা মন্দিরের কাছে বেঞ্চে বসা নিয়ে দু’পক্ষের অনুগামীদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। স্থানীয় যুবক পীযূষের দাবি, বিষয়টি সেখানেই মিটে যায়। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরে অভিজিৎ কালে (টুকলাই) আরও তিন জনকে সঙ্গে নিয়ে বাইকে করে এলাকায় ঢোকে। খবর পেয়ে সেখানে যান দেবরাজ ‘ঘনিষ্ঠ’ ওই এলাকার তৃণমূলকর্মী মলয় চক্রবর্তী। প্রথম দফায় দেবরাজের ‘অনুগামী’রা আক্রমণাত্মক অবস্থান নিলে টুকলাইরা পিছু হটেন। এর পর সুরজিৎ আমিনের (ছোটু) নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি দল এলাকায় চড়াও হয়ে মলয়কে বেধড়ক মারধর করলে তিনি মাথায় আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে মলয়ের ছেলে ধ্রুবজ্যোতির পাশাপাশি প্রতিবেশী বিশ্বজিৎ কুণ্ডু এবং স্থানীয় বাসিন্দা তথা থানার সিভিক কর্মী সোমনাথ দাস রক্তাক্ত হন।
মলয়ের স্ত্রী রূপা বলেন, ‘‘বাধা দিলে ছোটু আগ্নেয়াস্ত্রের বাট দিয়ে আমার চোখে মারে।’’ এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙচুরের পরে মলয়ের সারা বাড়িতে কাচ এবং সিমেন্টের চাঁই পড়ে রয়েছে। শুক্রবার রাতের তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়িও। রাত সওয়া ১২টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ততক্ষণে আতঙ্ক গ্রাস করেছে এলাকাবাসীদের।
সোমনাথের ভাই মৃন্ময় দাস বলেন, ‘‘দাদার মুখের চোয়াল ভেঙে গিয়েছে। মাথায় ছ’টি সেলাই পড়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টা না পেরোলে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’ সোমনাথের কাকিমা বলেন, ‘‘প্রকাশ্য রাস্তায় বেপরোয়া ভাবে গুলি ছুড়ছে। শান্ত পাড়ায় এ রকম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কেন হবে!’’ মলয়ের স্ত্রী বলেন, ‘‘কিছুদিন আগে আমার স্বামী দেবরাজ চক্রবর্তীর হয়ে বস্ত্রপ্রদান করেছিল। সেই রাগে ছোটু, উজ্জ্বল বিশ্বাস (খটাস বুড়ো), বোম বাপ্পা, সাধন সরকারেরা এটা করল।’’ দেবরাজ বলেন, ‘‘বারবার কয়েক জনকে চিহ্নিত করে একই ঘটনা ঘটাচ্ছে স্থানীয় দুষ্কৃতীরা। আক্রান্তদের জন্য যেখানে যেতে হবে, যাব।’’ প্রতিক্রিয়া জানতে দোলা সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে শুভ বিজয়া বলেই তিনি ফোন কেটে দেন। এর পরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সারা দিনে দু’হাজার শুভ বিজয়া বলেছি। একটা মিটিংয়ে আছি। কথা বলতে পারব না।’’ যোগাযোগের কারণ জানিয়ে টেক্সট মেসেজ এবং হোয়াটসঅ্যাপ করা হলে রাত পর্যন্ত কোনও জবাব আসেনি। প্রতিক্রিয়া মেলেনি স্থানীয় বিধায়কেরও। দোলা শিবিরের বক্তব্য, অপর পক্ষের প্ররোচনাতেই ঘটনা বড় আকার ধারণ করে।
পুলিশ জানিয়েছে, রাতের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।