দু’জায়গায় দুই ব্যাখ্যা, পুর আইন ঘিরে সংশয়

পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিল্ডিং আইনের ১৪২ নম্বর ধারার মূল ভিত্তি হল বিপজ্জনক এবং পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন ভাবে তৈরিতে মালিকদের উৎসাহ দেওয়া।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩১
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

বিপজ্জনক এবং পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন ভাবে তৈরি করতে যাতে মালিকপক্ষ আগ্রহী হয়, সে জন্য পুরসভার বিল্ডিং আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু বিপজ্জনক বাড়ির বিপদ এড়ানোর জন্য সংশোধিত সেই আইনকেই যে ভাবে বাজেট-বইয়ে নিছক সৌন্দর্যায়নের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং দফতরের আধিকারিকদের একাংশ।

Advertisement

ধন্দের মূলে পুর বিল্ডিং আইনের ১৪২ নম্বর ধারা। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় শনিবার যে বাজেট-বই দেখে ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করেছেন, সেখানে ১৪২ নম্বর ধারা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ওই বিধি অনুসারে পুরনো, ভগ্নদশাগ্রস্ত বাড়িগুলির জায়গায় নতুন বাড়ি তৈরিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি। কিন্তু পুরসভার বিল্ডিং দফতরের আধিকারিকদের একাংশই জানাচ্ছেন, এই কারণের সঙ্গে ১৪২ নম্বর ধারার কোনও যোগই নেই। বরং এই ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়ার ফলে বিপজ্জনক বাড়ির বিপদকেই লঘু করে দেওয়া হয়েছে। বাজেট-বই তৈরির দায়িত্বে থাকা বাজেট সেলও ভুল স্বীকার করে জানিয়েছে, আইনের ওই ব্যাখ্যা উচিত হয়নি। সেলের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আইনের ব্যাখ্যায় একটা ভুল হয়ে গিয়েছে। বাজেট-বইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথিতে এই ধরনের ভুল হওয়া উচিত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সোমবার আমরা আলোচনা করব।’’

পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিল্ডিং আইনের ১৪২ নম্বর ধারার মূল ভিত্তি হল বিপজ্জনক এবং পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন ভাবে তৈরিতে মালিকদের উৎসাহ দেওয়া। কারণ দেখা গিয়েছে, ভাড়াটে সমস্যার কারণে বহু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক তা নতুন ভাবে তৈরিতে আগ্রহ বোধ করেন না। দীর্ঘ সংস্কার না হওয়ায় ভেঙে পড়ে বিপজ্জনক, পুরনো বাড়ি। এর জেরে একাধিক বার শহরে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, প্রাণহানি রুখতে ১৪২ নম্বর ধারায় সংশোধনী এনে আগের থেকে নির্মাণের ক্ষেত্রে বাড়তি ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ভাড়াটেদের সম্মতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক যদি তা নতুন ভাবে নির্মাণ করতে চান, তা হলে ভাড়াটে অধিকৃত জায়গার ১০০ শতাংশ অতিরিক্ত এফএআর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) দেওয়া হচ্ছে। আগে দেওয়া হত ৫০ শতাংশ। আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, নির্মাণে এই বাড়তি ছাড়ের সুবিধা নিতে যাতে বাড়ির মালিকেরা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এগিয়ে আসেন, সে কারণেই এই আইন সংশোধন করা হয়েছে। এখন ভগ্নপ্রায় বাড়ি নতুন করে তৈরি হলে তা দেখতে ভাল লাগে ঠিকই, কিন্তু সেটা মনে করে ওই আইন প্রণয়ন বা তার সংশোধন করা হয়নি।

এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘পুর বিল্ডিং আইনের ১৪২ নম্বর ধারার ভিত্তি হল নিরাপত্তা। বিপজ্জনক বাড়ি যাতে ভেঙে না পড়ে, মালিকেরা বাড়তি সুবিধা পাওয়ার জন্য যাতে নতুন ভাবে বাড়ি তৈরিতে এগিয়ে আসেন, সে কারণেই ওই আইন। সৌন্দর্যায়ন কখনওই এর ভিত্তি নয়।’’

আধিকারিকদের একাংশ মেনে নিয়েছেন, বাজেট-বই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি। সেখানে পুর বিল্ডিং আইনের এমন ব্যাখ্যা অনভিপ্রেত। পুর আইন এবং বাজেট-বইয়ে যে ভাবে ১৪২ নম্বর ধারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেই দুইয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক হয়ে যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন