শুভঙ্কর সরকার। ছবি: সংগৃহীত।
কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতরে তাণ্ডব চালানোর ঘটনার প্রতিবাদে বিধানভবন থেকে কলেজ স্ট্রিট মোড় পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছিল কংগ্রেস। সেই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে ফের বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি সৃষ্টি হল।
শুক্রবার বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহের নেতৃত্বে একদল সমর্থক বিজেপির পতাকা হাতে প্রদেশ কংগ্রেসের দফতর বিধানভবনে ঢুকে তাণ্ডব চালান বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবারই মৌলালি মোড়ে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা। শনিবারও প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, কংগ্রেসের এক দল সমর্থক বিজেপির দফতরের সামনে পাল্টা বিক্ষোভ দেখাতে চেয়েছিলেন। পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য তৈরি ছিলেন বিজেপির সমর্থকেরাও। অন্য দিকে, এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে ভেবে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল পুলিশ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার নিজেও দলীয় কর্মীদের নিরস্ত করেন। ফলে শেষমেশ আশপাশের এলাকা পর্যন্ত পৌঁছোলেও বিজেপি-র দফতরের গেটের কাছাকাছি ঘেঁষতে পারেননি কেউই।
বিজেপি সূত্রের খবর, কংগ্রেস যে তাদের দফতরের সামনে পাল্টা বিক্ষোভ দেখাতে পারে, তা আগে থেকেই দলের কাছে খবর ছিল। সে কারণে বিজেপির যুবমোর্চার কিছু কর্মী-সমর্থক প্রস্তুত হয়ে বিজেপির দফতরের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে রকম কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। দু'পক্ষ মুখোমুখিও হয়নি বলে খবর।
অন্য দিকে, শুক্রবারের ওই ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাকেশ-ঘনিষ্ঠ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। অস্ত্র আইন-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে এন্টালি থানায়। শনিবার দুপুরে রাকেশের খোঁজে তাঁর বাড়িতেও যান তদন্তকারীরা। কিন্তু রাকেশ বাড়িতে ছিলেন না।
ঘটনার সূত্রপাত গত বুধবার। ওই দিন বিহারের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়। সে দিন ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’য় বিহারের দ্বারভাঙা থেকে মুজফ্ফরপুর যাচ্ছিলেন রাহুল, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী, তেজস্বী যাদবেরা। অভিযোগ, দ্বারভাঙায় কংগ্রেসের একটি মঞ্চ থেকে বছর কুড়ির এক তরুণ প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তাঁর প্রয়াত মাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। পরে দ্বারভাঙা থেকেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর তীব্র সমালোচনা শুরু করে বিজেপি। শুক্রবার সকাল সওয়া ১১টা নাগাদ প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে রাকেশের নেতৃত্বে একদল সমর্থক বিজেপির পতাকা হাতে ঢুকে পড়েন। অভিযোগ, রাকেশ ছাড়াও সেখানে ছিলেন বিজেপি নেতা প্রতীক পান্ডে। ঘটনাচক্রে, এর আগেই সমাজমাধ্যমে লাইভে এসে রাকেশ ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘আজ যা হবে, এর পর গোটা দেশে কংগ্রেসিদের বিরুদ্ধে এই রকম বিরোধিতা দেখা যাবে।’’ বিধান ভবনের বাইরে ঝোলানো কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ছবিতে কালি লেপে দেন বিজেপির লোকজন। তার পর ঢুকে পড়েন ভিতরে। সে সময়ে কংগ্রেসের দফতরে বিশেষ কেউ ছিলেন না। অভিযোগ, সেই সুযোগ নিয়ে তাণ্ডব চালানো হয় দফতরে। গেটের বাইরে কংগ্রেস নেতাদের ছবিতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পোড়ানো হয় পতাকাও।
ঘটনায় পুলিশ ও তৃণমূলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী। অধীর বলেন, ''থানা থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে এই হামলা হল, কিন্তু পুলিশ ঠেকাতে পারল না? কালকের ঘটনার পর এত ক্ষণ হয়ে গেল, এখনও মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার হল না! আসলে দিদি মোদীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।''