ববির ক্ষমতা কেন অতীনের হাতে, বিতর্ক

পুর প্রশাসনের একাংশ বলছে, মেয়রের ক্ষমতা তো নির্দিষ্ট করে বলা রয়েছে। মেয়র শুধু নির্দিষ্ট করে বলা সেই ক্ষমতাই হস্তান্তর করতে পারেন। কিন্তু মেয়র-ইন-কাউন্সিল তাঁকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, সেই ক্ষমতা একটি নির্দেশিকা জারি করে কী ভাবে তিনি হস্তান্তর করে দিতে পারেন?

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১৪
Share:

ফাইল চিত্র।

ফের ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে বিতর্ক কলকাতা পুরসভায়!

Advertisement

বকেয়া সম্পত্তিকরের উপরে জমা সুদ ও জরিমানা মকুবের ক্ষমতা এত দিন মেয়রের হাতে ছিল। প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি দেখভাল করতেন। বছর তিনেক আগে মেয়র পরিষদের এক বৈঠকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল মেয়রের হাতে। কিন্তু গত বুধবার এক নির্দেশিকা জারি করে সেই ক্ষমতা বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিমের (ববি) হাত থেকে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের হাতে হস্তান্তরিত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ফিরহাদের পুরবোর্ডে অ্যাসেসমেন্ট-কালেকশন দফতরটি রয়েছে অতীনের হাতে। প্রশ্ন উঠেছে, মেয়র পরিষদের দেওয়া ক্ষমতা মেয়র পরিষদের বৈঠক ছাড়াই মেয়র কী ভাবে অন্য কারও হাতে দিতে পারেন।

পুর প্রশাসনের একাংশ বলছে, মেয়রের ক্ষমতা তো নির্দিষ্ট করে বলা রয়েছে। মেয়র শুধু নির্দিষ্ট করে বলা সেই ক্ষমতাই হস্তান্তর করতে পারেন। কিন্তু মেয়র-ইন-কাউন্সিল তাঁকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, সেই ক্ষমতা একটি নির্দেশিকা জারি করে কী ভাবে তিনি হস্তান্তর করে দিতে পারেন?

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, গত বুধবার জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পুর আইনের ৪৮(৩) ধারা অনুযায়ী মেয়র বকেয়া সম্পত্তিকরের উপরে জমা সুদ ও জরিমানা মকুবের ক্ষমতা ডেপুটি মেয়রকে হস্তান্তর করেছেন। প্রসঙ্গত, কলকাতা পুর (স‌ংশোধনী) আইন, ২০১৪ সালের ২১৭ (৬) ধারা অনুযায়ী, কোনও করদাতা বকেয়া কর জমা দেওয়ার অক্ষমতার কথা লিখিত ভাবে জানালে তা বিবেচনা করে বকেয়া করের উপরে জমা সুদের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মকুবের ক্ষমতা মেয়র-ইন-কাউন্সিলের রয়েছে। পুর প্রশাসনের যুক্তি, বিষয়টি অর্থ সংক্রান্ত হওয়ায় কারও একার হাতে দায়িত্ব না রেখে মেয়র পরিষদকে সমবেত ভাবে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন: এলাকায় ‘নাম’ ছড়াতেই কি খুন দোকানের কর্মীকে

এই নির্দেশিকাতেই বলা হয়েছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা। নিজস্ব চিত্র

কিন্তু ২০১৫ সালে মেয়র পরিষদের এক বৈঠকে তাতে সংশোধন করা হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বকেয়া করের উপরে জমা সুদের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মকুবের সিদ্ধান্ত নেবেন মেয়র। ওই বছরই মেয়র পরিষদের বৈঠকে আরও একটি সিদ্ধান্ত হয়, বকেয়া করদাতার ৯৯ শতাংশ জরিমানা মকুবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নেবেন মেয়রই। অর্থাৎ, দু’টি ক্ষেত্রেই এই ক্ষমতা মেয়রকে দেয় মেয়র-ইন-কাউন্সিল।

কিন্তু তাতে হঠাৎ পরিবর্তন হয় গত বুধবার। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘মেয়র নিজের ক্ষমতা অবশ্যই দিতে পারেন ডেপুটি মেয়র বা কমিশনারকে। কিন্তু সেটা তাঁর নিজের ক্ষমতা। মেয়র-ইন-কাউন্সিল তাঁকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, সেই ক্ষমতা নয়। এ ক্ষেত্রে তেমনটাই করা হয়েছে।’’ প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘কখনওই মেয়র-ইন-কাউন্সিলের দেওয়া ক্ষমতা মেয়র শুধুমাত্র একটি নির্দেশিকা জারি করে কাউকে দিতে পারেন না। সেক্ষেত্রে বিষয়টি ফের মেয়র পরিষদের বৈঠকে তুলতে হবে। নইলে তা আইনসিদ্ধ নয়।’’

আরও পড়ুন: বর্ষবরণে কড়া নজরদারি মহানগর জুড়ে

পুর কর্তৃপক্ষ প্রথমে অবশ্য যুক্তি দিয়েছিলেন, পুর আইনেই মেয়র নিজের ক্ষমতা ডেপুটি মেয়র বা পুর কমিশনারকে দিতে পারবেন, তেমনটা বলা হয়েছে। কিন্তু মেয়র-ইন-কাউন্সিলের দেওয়া ক্ষমতা যে এ ভাবে হস্তান্তর করা যায় না, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই সতর্ক হয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। তাই শনিবার বিষয়টি মেয়র পরিষদের বৈঠকেও তোলা হয়। তবে কোনও লিখিত প্রস্তাব নয়, মৌখিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে একটা সমস্যা রয়েছে। শনিবার মেয়র পরিষদের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সব নিয়ম মেনেই করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন