এই দোকানের সামনেই খুন হন গণেশ কুন্ডু।—ফাইল চিত্র।
ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই খুন। দমদমের গোরাবাজারে একটি দোকানের কর্মীকে খুনের তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে এমনই তথ্য পাচ্ছে পুলিশ। শুক্রবার ওই ঘটনা ঘটার ২৪ ঘণ্টা পরেও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। পুলিশ জানায়, সি সি ক্যামেরার ফুটেজ এবং স্থানীয় সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে আরও দুই দুষ্কৃতী সম্পর্কে এখনও অন্ধকারে তদন্তকারীরা।
ওই সন্ধ্যায় আর বি সি রোডের ধারের ওই দোকানের কর্মচারী গণেশ কুন্ডুকে গুলি করে খুন করে তিন দুষ্কৃতী। গণেশের পরিবারের পক্ষ থেকে বাচ্চু দাস নামে স্থানীয় এক যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ঘটনার পর থেকে বাচ্চু পলাতক। বাচ্চুর ঘনিষ্ঠ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গণেশের দু’টি পরিবার। প্রথম পক্ষের স্ত্রী দীপালি কুন্ডু ও মেয়ে তমা থাকেন মছলন্দপুরে। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী রেখা কুন্ডু ও মেয়ে মাম্পিকে নিয়ে গণেশ থাকতেন দমদমে। মাম্পির অভিযোগ, তিন মাস আগে গণেশের দোকানে গিয়ে একটি বড় ছাতা চান বাচ্চু। গণেশ দিতে আপত্তি জানালে শুরু হয় বচসা। বাচ্চুর সঙ্গে ছিল আলাদিন নামের এক যুবকও। বচসা চলাকালীন সে একটি চেয়ার তুলে গণেশকে মারলে তাঁর মাথা ফেটে যায়। স্থানীয় সূত্রের দাবি, পরদিনই রয়্যাল ব্যারাক এলাকায় নর্দমা পরিষ্কারের কাজ করাচ্ছিলেন স্থানীয় ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর উত্তম রায়চৌধুরী। তখন বাচ্চু তাঁকে অশ্লীল গালিগালাজ করছিল বলে অভিযোগ। কাউন্সিলর প্রতিবাদ জানালে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বাচ্চু। এর পরে দমদম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন কাউন্সিলর। মাম্পির দাবি, ওই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন গণেশ। সেই কথা জানতে পেরে ফোনে হুমকি দিয়ে বাচ্চু গণেশকে বলেছিল, ‘কী রে, তুই আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিস? টেবিলের উপরে বন্দুক রেখে দেব। গুলি চলে যাবে। বুঝতেও পারবি না।’ শনিবার মাম্পি বলেন, ‘‘বাচ্চু যা বলেছিল, সেটাই করে দেখাল।’’ উত্তমবাবু বলেন, ‘‘শুনেছি ব্যারাকপুর কোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যায় বাচ্চু।’’ তাঁর বক্তব্য, তখন যদি বাচ্চুর বাড়বাড়ন্ত আটকানো যেত, তা হলে এমন ঘটত না।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বাচ্চু রয়্যাল ব্যারাক এলাকার বাসিন্দা। কিছু গোলমাল ছাড়া কোনও বড় অপরাধের ঘটনায় তাঁকে কখনও দেখা যায়নি। তার বেশি আনাগোনা ছিল বরাহনগর, পানিহাটি, সোদপুর, খড়দহে। যদিও বাচ্চুর মা সুমিতা দাসের দাবি, কাউন্সিলরের সঙ্গে গোলমালের পর থেকে বাচ্চু বাড়িতে থাকে না। কোনও যোগাযোগও নেই বাড়ির সঙ্গে। এই দাবি অবশ্য মানতে নারাজ পুলিশ।
স্থানীয়দের অনুমান, সমাজবিরোধী হিসেবে এলাকায় স্বীকৃতি পেতেই এই ঘটনা। স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের মতে, গণেশকে মেরে কাউন্সিলরকেই বার্তা দিতে চায় বাচ্চু।
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক শীর্ষ কর্তা অবশ্য শনিবার জানান, নিহতের পরিবারের অভিযোগে নির্দিষ্ট এক জনের কথা উঠে এলেও এখনও খুনির পরিচয় নিয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ। কে এই ঘটনার মূলে, তা জানতে তদন্ত চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy