হাওড়া সেতুতে পিচ গলানো নিয়ে বিতর্ক

নিয়মের তোয়াক্কা না করেই এ বার হাওড়া সেতুর উপরে ‘হট মিক্সিং মেশিন’ ব্যবহার করার অভিযোগ উঠল সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১৮
Share:

দূষণ: প্রকাশ্যেই গলানো হচ্ছে পিচ। মঙ্গলবার রাতে, হাওড়া সেতুর উপরে। ছবি:দীপঙ্কর মজুমদার

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ ছিল, কলকাতা এবং হাওড়ায় রাস্তা তৈরির জন্য আগুন জ্বালিয়ে পিচ গলানোর পদ্ধতিতে বদল আনতে হবে। কারণ ওই যন্ত্র থেকে যে কালো ধোঁয়া বেরোয় তাতে ভয়াবহ বায়ুদূষণ হয়, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর।

Advertisement

অথচ নিয়মের তোয়াক্কা না করেই এ বার হাওড়া সেতুর উপরে ‘হট মিক্সিং মেশিন’ ব্যবহার করার অভিযোগ উঠল সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে শুধু পরিবেশকর্মীরাই আপত্তি তোলেননি, সেতু বিশেষ়জ্ঞেরাও দেশের ঐতিহ্যশালী সেতুটির কাঠামোয় ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তাঁদের দাবি, রাস্তা মেরামতি সঠিক পদ্ধতি মেনেই হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই কাজ হচ্ছে।

কয়েক সপ্তাহ আগেই হাওড়া সেতুর রাস্তা মেরামতের জন্য এক পাশে স্টোনচিপস্, বালি, কয়েক টন কাঠ ও পিচের ড্রাম রাখা হয়। অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরেই সন্ধ্যা ৭টা বাজলেই শুরু হচ্ছিল হট মিক্সিং মেশিনে কাঠ জ্বালিয়ে পিচ ও স্টোনচিপস্ মেশানোর কাজ। এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই মশলা মেশানো চলছে ভোর পর্যন্ত। যানবাহনে বসে থাকা যাত্রী বা পথচলতি মানুষের অভিযোগ, এর ফলে কালো ধোঁয়া আর দুর্গন্ধে ভরে যাচ্ছে গোটা এলাকা। চোখ জ্বালা করছে। এমনকি, অনেকেরই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।

Advertisement

কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে ইতিমধ্যে জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় শাখায় অভিযোগ জানিয়েছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায় ছিল কলকাতা, হাওড়া, দুর্গাপুর, আসানসোল, শিলিগুড়ি প্রভৃতি জায়গায় প্রকাশ্য স্থানে আগুন জ্বালিয়ে পিচ গলানোর কাজ করা যাবে না। এমন কিছু করা হলে অভিযুক্ত সংস্থার বিরুদ্ধে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সংস্থা নির্দেশ অমান্য করে কী করে?’’

শুধু পরিবেশগত দিকে নয়, অত্যধিক তাপমাত্রার ফলে ৭৫ বছরের পুরনো সেতুটির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সেতু বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ সোম। তিনি বলেন, ‘‘ওই সেতুর প্রতিটি জোড়ে ব্যবহার করা হয়েছে রিভেট। তাপমাত্রার কারণে সেতুর সেই জোড়মুখের ধাতুর পরিবর্ধন ঘটলে রিভেটগুলি ঢিলে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী দিনে সেতুর ক্ষতিরও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।’’ বিশ্বজিৎবাবু মনে করেন, ঐতিহ্যশালী এই সেতুর যত্ন যে সঠিক ভাবে হচ্ছে না এই ঘটনা সেটাই প্রমাণ করছে।

কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘সেতুর উপরে রাস্তা সারাইয়ের যে কাজ হচ্ছে তা সাবধানতার সঙ্গেই হচ্ছে। আইআইটি-র অধ্যাপকদের থেকে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেই কাজ হচ্ছে। এ ভাবে কাজ করলে সেতুর কোনও ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন