পড়ুয়া কি সংখ্যালঘু, প্রশ্ন স্কুলের ফর্মে

শিক্ষামহলের একটা বড় অংশের মত, সংখ্যালঘুর অর্থই হল সমাজে তারা সংখ্যায় কম, অর্থাৎ, দুর্বল। পড়ুয়ার মনে এ ধরনের ভাবনা বাসা বাঁধতে দিলে সে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা ও দুর্বল ভাবতে শুরু করতে পারে। যার ফলে তার স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৫৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

নবম শ্রেণির পড়ুয়াকে আধার নম্বর এবং ছবি জমা দিয়ে পূরণ করতে হয়েছে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম। লিখতে হয়েছে বাবা-মায়ের বার্ষিক আয়ের পরিমাণ। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু তাল কাটে যখন ওই ফর্মে জানতে চাওয়া হয়, পড়ুয়া ‘মাইনরিটি’ বা ‘সংখ্যালঘু’ কি না। স্কুলে পড়ুয়ার রেজিস্ট্রেশন ফর্মে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু শব্দের এ হেন প্রয়োগের তীব্র বিরোধিতা করছে শিক্ষামহল।

Advertisement

জাতি, ধর্ম নিয়ে যখন দেশে অসহিষ্ণুতার অভিযোগ উঠছে, সেই সময়ে কলকাতার সাউথ
পয়েন্ট স্কুলে এই ধরনের ফর্ম পূরণে বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ‘সংখ্যালঘু’ শব্দটির মাধ্যমে কী বোঝাতে চাইছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ? কী কারণে পড়ুয়ার মনে সংখ্যাগুরু ও লঘুর মধ্যের ভেদাভেদ তুলে ধরা হচ্ছে? স্কুলের অবশ্য দাবি, সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)-র তরফ থেকে যে ফরম্যাট চাওয়া হয়, তার ভিত্তিতেই অনেক বছর ধরে এই সব তথ্য চাওয়া হয়ে থাকে।

শিক্ষামহলের একটা বড় অংশের মত, সংখ্যালঘুর অর্থই হল সমাজে তারা সংখ্যায় কম, অর্থাৎ, দুর্বল। পড়ুয়ার মনে এ ধরনের ভাবনা বাসা বাঁধতে দিলে সে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা ও দুর্বল ভাবতে শুরু করতে পারে। যার ফলে তার স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হবে। অন্য দিকে কোনও পড়ুয়ার মধ্যে সংখ্যাগুরু অর্থাৎ, সংখ্যায় বেশি থাকার মনোভাব জাগলে নিজেকে শক্তিশালী মনে করে অপরকে দুর্বল ভাবতে পারে সে। দু’টি ক্ষেত্রেই সামাজের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। যদিও সম্প্রতি কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন মনে করিয়ে দিয়েছেন, আবহমান ভারতে সংখ্যালঘু মানেই দুর্বল নয়। তবু স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে গুরু-লঘুর সংঘাতের কুপ্রভাবই পড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই।

Advertisement

সাউথ পয়েন্ট স্কুলের তরফে কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘স্কুলে ভর্তির সময়ে কোনও ফর্মে এমন শব্দের
ব্যবহার করা হয় না। যেহেতু রেজিস্ট্রেশনের সময়ে সিবিএসই নির্দিষ্ট ফরম্যাট দেয়, তাই বাধ্য হয়ে ওই শব্দ়টি উল্লেখ করতে হয়।’’ তাঁর দাবি, কলকাতার বহু স্কুল রেজিস্ট্রেশন ফর্মে ‘সংখ্যালঘু’ শব্দটির উল্লেখ করে। সেটা সিবিএসই-র নিয়ম মেনেই করা হয়ে থাকে।

তবে সিবিএসই-তে এ রকম কোনও নিয়ম নেই বলেই দাবি সল্টলেকের সিবিএসই বোর্ডের অন্য একটি স্কুলের অধ্যক্ষার। তিনি বলেন, ‘‘ফর্মে তফসিলি ও জনজাতির কথা উল্লেখ করতেই হয়। একই ভাবে ‘অন্যান্য’ গোষ্ঠীর কি না, সেটাও জানাতে হয়। কিন্তু সংখ্যালঘু বলে কোনও শব্দের উল্লেখ থাকে না। সিবিএসই-র এ রকম কোনও নির্দেশিকাও নেই।’’ শ্রী শিক্ষায়তন স্কুলের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সিবিএসই-র রেজিস্ট্রেশন ফর্মে সংখ্যালঘু শব্দের উল্লেখ থাকে না।’’ অশোক হল গার্লস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র বলেন, ‘‘আমাদের স্কুল থেকে এ রকম কিছু জানতে চাওয়া হয় না। কিন্তু সিবিএসই-র আদৌ এ ধরনের কোনও শর্ত থাকে কিনা সেটা বলতে পারব না। আমরা কোনও দিন এরকম পরিস্থিতিতে পরিনি।’’

মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রের খবর, কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দ্বারা পরিচালিত কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু কোনও পড়ুয়া সংখ্যালঘু কি না, সে তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে নিশ্চিত নয় মন্ত্রক। মন্ত্রকের তরফে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

আইসিএসই বোর্ডের স্কুল সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নবারুণ দে জানান, তাঁদের বোর্ডের স্কুলে এমন কিছুর উল্লেখ থাকে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক তথা প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা স্কুল বা বোর্ড যেই করে থাকুক, কাজটা অন্যায়। এই ফর্ম পূরণ বন্ধ হওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন