State Medical Council

ভোটের রাজনীতির কেচ্ছা কেন স্বাস্থ্যেও, প্রশ্ন জনগণের

গত মার্চে ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর কলকাতা শাখার নির্বাচন ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড হয়েছিল। রাস্তায় নেমে চিকিৎসকদের হাতাহাতিতে জড়াতেও দেখা গিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৫৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

লোকসভা, বিধানসভা, এমনকি পুরভোটেও দেদার ছাপ্পা ভোট। সে সব ঘিরে চরম অশান্তির ছবি রাজ্যবাসীর চেনা। কিন্তু সেই ছবি চিকিৎসকদের নির্বাচনেও দেখা গেলে সমাজে তার কেমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে? রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচন ঘিরে বিতর্ক, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের আবহে এই প্রশ্নটাই আরও বেশি করে সামনে আসছে।

Advertisement

গত মার্চে ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর কলকাতা শাখার নির্বাচন ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড হয়েছিল। রাস্তায় নেমে চিকিৎসকদের হাতাহাতিতে জড়াতেও দেখা গিয়েছিল। যুযুধান দুই শিবির একে অপরের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট এবং নকল ভোটারের অভিযোগ তুলেছিল। যা দেখেশুনে সমাজের সব স্তরের মানুষ প্রশ্ন তুলেছিলেন, ভোট-রাজনীতির কেচ্ছা কেন স্বাস্থ্যেও?

আবারও যেন সেই একই ছবি মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচন ঘিরে। যেখানে ব্যালট জমা দেওয়ার সময়ে হাতেনাতে ধরা হচ্ছে ভুয়ো ভোটারকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশের এক ব্যবসায়ীকে ব্যালট জমার বাক্সের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। অন্য দিকে কাউন্সিলের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, অফিসের বাইরে বেসরকারি সংস্থার লোকজন দাঁড়িয়ে থাকছেন। ব্যালট জমা দিতে আসা লোকের ছবি তোলা ও ভিডিয়ো করা হচ্ছে। শাসকদলের অভিযোগ, বিরোধী শিবির বেসরকারি সংস্থার গোয়েন্দাদের কাজে লাগিয়েছে।

Advertisement

উল্লেখ্য, চার বছর নির্বাচন হয়নি রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে স্বাস্থ্য ভবন কাউন্সিল চালানোর জন্য অ্যাড-হক কমিটি গঠন করে। তাদেরই দায়িত্ব ছিল নির্বাচন পরিচালনা করার। বিরোধী শিবিরের দাবি, কমিটির বেশির ভাগ সদস্যই শাসকদলের প্রার্থী হয়ে যাওয়ায় নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

পাঁচটি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের তরফে চিকিৎসক কৌশিক চাকী বলেন, “হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির নির্দেশ ছিল শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। সিসি ক্যামেরার আওতায় নির্বাচন প্রক্রিয়া করার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু অ্যাড-হক কমিটির সভাপতি ও অন্য সদস্যেরা মিলে কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার তথা নির্বাচন আধিকারিককে দিয়ে সেটি নস্যাৎ করে দিয়েছেন।”

কৌশিক জানান, সিসি ক্যামেরা ও আলাদা পর্যবেক্ষক না থাকায় বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিরা কাউন্সিলের অফিসের সামনে বুধবার উপস্থিত হয়েছিলেন। তখনই কয়েক জনকে ড্রপ বক্সে গোছা গোছা ব্যালট ফেলতে দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে দীনেশ সিংহ নামে এক ব্যক্তিও ছিলেন। আইএমএ-র কলকাতা শাখার নির্বাচনে ওই ব্যক্তিকেই ভুয়ো ভোটার হিসাবে ধরেন চিকিৎসক-সাংসদ শান্তনু সেন। বৃহস্পতিবারও কাউন্সিলের সামনে হাজির ছিলেন বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধি এবং পুলিশ।

বিরোধী শিবিরের আরও দাবি, ব্যাগ ভর্তি করে কয়েক হাজার ব্যালট নিয়ে আসা এক তরুণ আদতে এক ইন্টার্ন। তাঁর সঙ্গে শাসকদলের চিকিৎসক-প্রার্থী সুদীপ্ত রায়ের ছবিও রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ‘মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার’-এর সম্পাদক অংশুমান মিত্র ও ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের অভিযোগ, “ব্যাগ ভর্তি ব্যালট নিয়ে আসাই প্রমাণ করে, শাসকদলের লোকেরা বিভিন্ন হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়েছে। বহিরাগতেরা সেগুলি বাক্সে ফেলছে।”

সুদীপ্ত বলেন, “যাঁদের ছবি দেখানো হচ্ছে, তাঁরা ছিলেন কি না খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “দূরের জেলা থেকে ব্যালট জমা দেওয়ার এটাই পদ্ধতি। একসঙ্গে সব এনে জমা করে দেওয়া হয়। সিপিএম আমলে তো ভোটই হত না। ব্যালটও পৌঁছত না চিকিৎসকের কাছে।”

শাসক শিবিরের আর এক প্রার্থী-চিকিৎসক কৌশিক বিশ্বাস বলেন, “এমন স্বচ্ছ নির্বাচন আগে হয়নি। বিজেপি ও সিপিএম প্রার্থীরা হতাশা থেকে মিথ্যা রটাচ্ছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন