কনভেয়ার বেল্ট সারানোর কাজ চলছে। রবিবার, কলকাতা বিমানবন্দরে। নিজস্ব চিত্র
যত কাণ্ড কলকাতা বিমানবন্দরের কনভেয়ার বেল্টে! তার জেরে এক দিকে যেমন বিপাকে পড়েছে বহু উড়ান সংস্থা, তেমনই হয়রান হয়েছেন যাত্রীরা। প্রচুর যাত্রীকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছে। কনভেয়ার বেল্ট খারাপ থাকায় যাত্রীদের মালপত্র ট্রলিতে চাপিয়ে ‘লোডার’-দের সাহায্যে বিমানে পৌঁছে দিতে হয়েছে। রবিবার সকালে এই কনভেয়ার বেল্ট নিয়ে বিস্তর ভুগতে হয়েছে ইন্ডিগোকে। অভিযোগ, এই কারণে সকালে তাদের গোটা দু’য়েক উড়ান ছাড়তে দেরি হয়ে যায়।
স্পাইসজেট সূত্রেও জানা গিয়েছে, কনভেয়ার বেল্ট খারাপ থাকায় এ দিন সকালে তাদের দিল্লির উড়ান দেরিতে ছেড়েছে। বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যান্ত্রিক কিছু সমস্যা হচ্ছে। তা কী ভাবে চটজলদি ঠিক করা যায়, তার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ দিন যে সমস্যা হয়েছিল, তা মেটানো গিয়েছে।’’
বিমানবন্দরে প্রতিটি উড়ান সংস্থার চেক-ইন কাউন্টারের সঙ্গে লাগোয়া কনভেয়ার বেল্ট থাকে। যাত্রীর সঙ্গে যে বড় ব্যাগ থাকে, সেটি চেক-ইন কাউন্টারে ওজন করার পরে ওই কনভেয়ার বেল্টের উপরে তুলে দেওয়া হয়। ওই ব্যাগ কনভেয়ার বেল্ট মারফত চলে যায় একতলায় বিমানের কাছে। সেখান থেকে যাত্রীদের ব্যাগ লোডারেরা নিয়ে বিমানের পেটে তুলে দেন। একটি ব্যাগ চেক-ইন কাউন্টার থেকে বিমানের পেটে পৌঁছতে সময় লাগে বড়জোর ১০ মিনিট।
বিশ্বের অন্য বড় বিমানবন্দরে, এমনকি দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুতেও এই কনভেয়ার বেল্টে করে যাওয়ার পথেই যাত্রীর ব্যাগ এক্স-রে হয়ে যায়। একে বলা হয় ‘ইন লাইন’ ব্যবস্থা। কলকাতায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেই সুবিধা থাকলেও অভ্যন্তরীণ উড়ানের ক্ষেত্রে তা নেই। সেই কারণে, যাত্রীদের বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে আলাদা করে ব্যাগ এক্স-রে করিয়ে তবেই তা চেক-ইন কাউন্টারে দিতে হয়।
কলকাতায় প্রতিটি উড়ান সংস্থার জন্য বিভিন্ন আইল্যান্ডে চেক-ইন কাউন্টার করা আছে। যেমন, ‘সি’ আইল্যান্ডে ইন্ডিগোর চেক-ইন কাউন্টার লাগোয়া যে কনভেয়ার বেল্ট রয়েছে, গত বেশ কয়েক দিন ধরে মাঝেমধ্যেই সেটি বিগড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, মাঝে এক দিন চলতে চলতে হঠাৎ কনভেয়ার বেল্ট ছিঁড়েও গিয়েছে। ইন্ডিগোর এক অফিসারের কথায়, ‘‘বেল্টে একসঙ্গে বেশি ব্যাগ দিলেই এই সমস্যা হচ্ছে। খবর পেয়ে ইঞ্জিনিয়ারেরা এসে সারিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু, কিছুক্ষণ বেল্ট চলার পরে আবার তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’’ যতক্ষণ বেল্ট কাজ করছে না, ততক্ষণ যাত্রীদের ব্যাগ ট্রলিতে চাপিয়ে বিমানের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তাতে সময় অনেক বেশি লাগছে।
শুধু ইন্ডিগো নয়, অন্য উড়ান সংস্থারও এই সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এয়ার ইন্ডিয়ার চেক-ইন কাউন্টার রয়েছে ‘ই’ আইল্যান্ডে। সেই উড়ান সংস্থার এক অফিসার জানিয়েছেন, সমস্যা ইদানীং বেড়েছে। গত শনিবারই বিগড়ে যায় এয়ার ইন্ডিয়ার কনভেয়ার বেল্ট। যদিও তার জন্য উড়ান ছাড়তে দেরি হয়নি। ওই অফিসারের কথায়, ‘‘বেল্ট খারাপ হলেও তাড়াতাড়ি যাতে ব্যাগ বিমানে পৌঁছে যায়, তার জন্য আমাদের লোডারদের সঙ্গে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের লোডারেরাও এসে সাহায্য করছেন।’’
২০১৩ সালে কলকাতার নতুন টার্মিনাল চালু হওয়ার পরে প্রথম দিকে সমস্যা হচ্ছিল কনভেয়ার বেল্ট নিয়ে। মাঝেমধ্যেই তা বিগড়ে যাচ্ছিল। তখন বলা হয়েছিল, বেল্টে সেন্সর লাগানো রয়েছে বলে দু’টি ব্যাগের মধ্যে যথেষ্ট ব্যবধান রাখা দরকার। তা না রাখলে বিগড়ে যাবে বেল্ট।