‘নিউ নর্ম্যাল’-এ কতটা ধাক্কা খাচ্ছে শিক্ষা?
Coronavirus

বাইরে পড়তে যাওয়াতেও তালা ঝুলিয়েছে করোনাভাইরাস

অতিমারির জেরে শিক্ষা ক্ষেত্রের যে দিকগুলির উপরে সব চেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে, তার অন্যতম হল, ভিন্ দেশে বা রাজ্যে গিয়ে পড়াশোনা বা গবেষণার কাজ। আপাতত সবই বন্ধ।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২০ ০২:২১
Share:

প্রতীকী ছবি

কেউ কলেজ পাশ করার পরে টানা এক বছর দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে এখন ভাবছেন, এ বছরটাও নষ্ট! কেউ রেকর্ড নম্বর নিয়ে সদ্য স্কুল পাশ করেও বুঝতে পারছেন না, ভিন্ রাজ্যের নামী সরকারি কলেজে পড়ার স্বপ্নপূরণ আদৌ হবে কি না! কারও আবার কলেজে পড়াকালীনই পাওয়া আমেরিকায় হাতেকলমে কাজ করতে যাওয়ার সুযোগ আপাতত বাতিল।

Advertisement

অতিমারির জেরে শিক্ষা ক্ষেত্রের যে দিকগুলির উপরে সব চেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে, তার অন্যতম হল, ভিন্ দেশে বা রাজ্যে গিয়ে পড়াশোনা বা গবেষণার কাজ। আপাতত সবই বন্ধ। শিক্ষা মহল জানাচ্ছে, অন্যান্য বছর জুনের মধ্যে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে গিয়ে পড়ুয়াদের ভর্তি-পর্ব প্রায় মিটে যায়। কিন্তু এ বছর বহু নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও প্রবেশিকা পরীক্ষাই নিতে পারেনি। কয়েকটি ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস করিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলেও তা মূলত কিছু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই আবদ্ধ। যদিও ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারাও জানেন না, কবে ক্যাম্পাসে গিয়ে পড়াশোনার সুযোগ মিলবে।

বেঙ্গালুরুর এমনই একটি নামী কলেজে চলতি বছরে ভর্তি হওয়া কলকাতার এক পড়ুয়া বললেন, “জুনের মধ্যে ক্যাম্পাসে চলে যাওয়ার কথা ছিল। এখন কবে যেতে পারব, জানি না। অনলাইন ক্লাস হচ্ছে ঠিকই, তবে পড়া মানে তো শুধুই ক্লাস করা নয়। সারা বছর শিক্ষামূলক নানা কাজকর্ম হয়। সে সব কী করে হবে?”

Advertisement

আশুতোষ কলেজ থেকে গত বছর পাশ করা সুলগ্না ঘোষের ইচ্ছে, জেএনইউ-তে শিল্প ও নান্দনিকতা নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার। এক বছর ধরে প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। সঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা-তেও ভর্তি হন। এখন সবই বন্ধ। তিনি বলেন, “যাদবপুরে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে না। অন্যান্য বার এই সময়ের মধ্যে প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে নেয় জেএনইউ। এ বার কবে হবে, কেউ জানেন না। বছরটা নষ্ট!” একই আক্ষেপ হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া অনেষ্বা চক্রবর্তীর। বায়ো-টেকনোলজির ছাত্রী অনেষ্বা আমেরিকায় তিন মাস হাতেকলমে কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৭ জুনের বিমানের টিকিটও কাটা ছিল। তবে করোনা পরিস্থিতিতে আপাতত তা বাতিল।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানালেন, আগামী এক বছরের মধ্যে এই পরিস্থিতি পাল্টানোর লক্ষণ দেখছেন না তিনি। তাঁর কথায়, “ক্লাসে বসে মুখোমুখি পড়ানো হয়তো আগামী এক বছরেও আর সম্ভব হবে না। তবে তার জন্য সব কিছু অনলাইনে পড়ানোর বিরুদ্ধে আমি। বহু পড়ুয়াই অনলাইনে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। তার চেয়ে ‘ব্লেন্ডেড’ ক্লাসের কথা ভাবা যেতে পারে। বিশ্বের বহু নামী বিশ্ববিদ্যালয় সেই পথে হাঁটার কথা ভাবছে। অর্থাৎ, কোনও এক বর্ষের পড়ুয়াদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে এসে কয়েক দিন রেখে পড়ানোর পরে বাকিটা অনলাইনে করানো যেতে পারে। তাঁরা বেরিয়ে গেলে অন্য বর্ষের পড়ুয়াদের একই ভাবে আনা যেতে পারে। কিন্তু এতেও সমস্যা আছে। তবু পঠনপাঠনে কিছুটা গতি ফিরবে।”

রাজ্যের বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তথা অনেষ্বার মা সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বহু পড়ুয়া বাইরে পড়তে যেতে পারছেন না, যা সার্বিক ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর প্রভাব ফেলছে। যে সব প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পড়াচ্ছে, তাদের দেখতে হবে, অনলাইন ক্লাস করতে পারছেন না যাঁরা, পড়ার বিষয়বস্তু যেন তাঁদের কাছেও কোনও ভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়।”

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া যদিও বললেন, “বাইরে যেতে পারছেন না যাঁরা, তাঁরা এখানেই পড়বেন। অনলাইন পড়াশোনা নিয়ে এত কথা হচ্ছে, কই ফেসবুক করার সময়ে তো কারও সমস্যা হয় বলে শুনি না!”

পড়ুয়াদের আরও একটি সমস্যার কথা জানালেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি কলেজের অধ্যক্ষ। তাঁর মতে, সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন, যাঁরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলি থেকে এ বার পাশ করবেন। তাঁর বক্তব্য, “তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা না হওয়ায় টেস্টের ফলের ভিত্তিতে নম্বর দিতে বলা হয়েছে। বহু কলেজে ঠিকঠাক টেস্ট পরীক্ষাই হয়নি। যে হেতু টেস্টের আগে চূড়ান্ত প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে, তাই তা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অনেকে ভাল করে টেস্টই দেননি। ফলে টেস্টের নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হলে অনেকেই হয়তো অন্যদের থেকে হয়তো পিছিয়ে পড়বেন।” এ নিয়ে অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কেউ মন্তব্য করতে চাননি। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন