Coronavirus

সংক্রমণ ঠেকাতে ফুটপাতবাসীরা যাবেন কোথায়

করোনাভাইরাস আতঙ্কের জেরে বাজার থেকে উধাও স্যানিটাইজ়ার। এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে হাত পরিষ্কারের জন্য স্যানিটাইজ়ার তাঁরা কোথায় পাবেন— এই প্রশ্নই তুলছেন শহরের ফুটপাতবাসীরা।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ০১:৪৭
Share:

সাবধানি: শিশুর হাতে স্যানিটাইজ়ার দিচ্ছেন ফুটপাতবাসী এক মহিলা। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। নিজস্ব চিত্র

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাতে বসে দু’হাতে মাটি নিয়ে খেলছিল বছর দেড়েকের আজমিরা। দেখতে পেয়েই রে-রে করে ছুটে এলেন মা পার্বতী। মেয়েকে কোলে তুলে বললেন, ‘‘কত বার আর হাত ধোয়াব?’’

Advertisement

এর পরেই মেয়ের হাত ধুইয়ে, কাপড়ের পুঁটলি থেকে স্যানিটাইজ়ার বার করে হাত পরিষ্কার করিয়ে দিলেন তরুণী মা। বললেন, ‘‘কোনও মতে একটা ছোট বোতল জোগাড় করেছি। শেষ হলে আর কোথায় পাব জানি না!’’

করোনাভাইরাস আতঙ্কের জেরে বাজার থেকে উধাও স্যানিটাইজ়ার। এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে হাত পরিষ্কারের জন্য স্যানিটাইজ়ার তাঁরা কোথায় পাবেন— এই প্রশ্নই তুলছেন শহরের ফুটপাতবাসীরা। তাঁদের দাবি, বড়রা সাবান ব্যবহার করলেও শিশুদের বারবার জল দিয়ে হাত ধোয়ালে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে দেশ জুড়ে যখন লকডাউনের ডাক দেওয়া হয়েছে, তখন শহরের ফুটপাতবাসীদের কী হবে? রাস্তার ধারের ফুটপাত ছেড়ে তাঁরা কোথায় যাবেন, উঠছে সেই প্রশ্নও।

Advertisement

শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের ফুটপাতবাসীরা অবশ্য সবটা ভাগ্যের উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। যেমন, উত্তর কলকাতার এক ফুটপাতবাসীর কথায়, ‘‘আমরা এমন ভাবেই তো বছরের পর বছর কাটিয়ে দিলাম। এখন কপালে যা আছে, তা-ই হবে। কিন্তু চিন্তা হচ্ছে বাচ্চাগুলোকে নিয়ে।’’

শহর জুড়ে ফুটপাতবাসীর সংখ্যা কত, সেই নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই প্রশাসনের কোনও স্তরেই। তবে গোটা কলকাতা জুড়ে লক্ষাধিক লোকজন ফুটপাতে থাকেন বলেই জানা যাচ্ছে। কলকাতা পুরসভার দাবি, শহরের নৈশাবাসগুলিতে ফুটপাতবাসীদের রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘শহরে ৩৯টি নৈশাবাস রয়েছে। পুলিশকে বলা হয়েছে, সেখানে ফুটপাতবাসীদের থাকার ব্যবস্থা করতে। কোন নৈশাবাসে কারা থাকছেন, তার তালিকা তৈরি করেও পুরসভাকে দিতে বলা হয়েছে।’’ ফিরহাদ আরও জানান, যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই নৈশাবাসগুলি দেখভাল করে তাদের তরফে ওই ফুটপাতবাসীদের মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার দেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। কিন্তু শহরের ৩৯টি নৈশাবাসের প্রতিটিতে যদি গড়ে দেড়শো জন করেও ফুটপাতবাসী থাকেন, তা হলে প্রায় ছ’হাজার মতো লোকের ব্যবস্থা হবে। সে ক্ষেত্রে বাকিদের কী হবে, সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

সারা দেশেই ফুটপাতবাসীদের জন্য নৈশাবাস তৈরির নির্দেশ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। কলকাতার ফুটপাতবাসীদের সংখ্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত নৈশাবাস তৈরি করতে না-পারার জন্য এর আগে একাধিক বার পুর কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করেছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। পুরসভার অবশ্য যুক্তি, শহরে নৈশাবাস তৈরির পর্যাপ্ত জমির অভাব রয়েছে। তবে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, ফুটপাতে বাচ্চা নিয়ে যে সব বাসিন্দা রয়েছেন তাঁদের শারীরিক অবস্থার দিকে নজর রাখতে পুলিশকে বলা হয়েছে। কারও যদি জ্বর-সর্দি-কাশির মতো কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তবে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের জানাতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে হাসপাতালেও নিয়ে যেতে বলা রয়েছে। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শহরের ফুটপাতবাসীদের নিয়ে কাজ করে। তারা অনেক জায়গাতেই মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার বিলি করেছে। কী ভাবে করোনা সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে হবে, তা-ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সদস্যেরা বোঝাচ্ছেন ফুটপাতবাসীদের।’’

কিন্তু শিশুদের সামলাতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছেন বলে দাবি ফুটপাতবাসী মা-বাবাদের। আর তাই উত্তর কলকাতার ফুটপাতে ইট নিয়ে খেলা করা দুই বালককে ধমক লাগিয়ে তাদের মা বলছেন, ‘‘তোরা কি কথা শুনবি না?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন