Coronavirus

ছোঁয়াচ এড়াতে বায়োমেট্রিক বন্ধ, জ্বর হলেই বাড়িতে ফেরত

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘিরে শহরের তথ্যপ্রযুক্তি এলাকায় আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছে যে বেশির ভাগ সংস্থা কর্মীদের প্রয়োজনে বাড়ি থেকে কাজ করতে বলছে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস ও কাজল গুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২০ ০৩:০৩
Share:

সতর্কতা: সংক্রমণের আশঙ্কা কমাতে সেক্টর ফাইভের অনেক অফিসে বন্ধ হয়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরা। নিজস্ব চিত্র

ছ’তলার বিশাল অফিসঘরের মাঝামাঝি ডেস্কে রাখা কম্পিউটার এড়িয়ে চলেছেন প্রায় সকলেই। সেটির মনিটরের সঙ্গে ঝোলানো কাগজের গায়ে বড় হরফে ইংরেজিতে লেখা, ‘ব্যবহার নিষিদ্ধ’!

Advertisement

সল্টলেক সেক্টর ফাইভের এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কম্পিউটারটি যিনি ব্যবহার করতেন তাঁর জ্বর আসায় বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল দিন কয়েক আগে। আপাতত বাড়িতে থাকা সেই ব্যক্তিকে সুস্থ হওয়ার পরে চিকিৎসকের ছাড়পত্র নিয়ে তবেই কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। কয়েক দিন অব্যবহৃত থাকার পরে শুক্রবার অবশ্য কম্পিউটরটিকে খারাপ যন্ত্রাংশ রাখার ঘরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন মাস্ক এবং গ্লাভস পরা অফিসের নিরাপত্তাকর্মীরা!

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘিরে শহরের তথ্যপ্রযুক্তি এলাকায় আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছে যে বেশির ভাগ সংস্থা কর্মীদের প্রয়োজনে বাড়ি থেকে কাজ করতে বলছে। কাজ চালাতে যাঁদের অফিসে আনানো হচ্ছে, তাঁদের জন্য জারি করা হয়েছে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা। তুলে নেওয়া হয়েছে অফিসে ঢোকার সময়ের কড়াকড়ি। কয়েকটি সংস্থা আবার অফিসের বায়োমেট্রিক হাজিরা ব্যবস্থা তুলে দিয়ে গত সপ্তাহের শুরু থেকেই চালু করেছে হাজিরা খাতা। এমনই এক সংস্থার কর্মী গীতশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার বলেন, ‘‘হাত ছোঁয়ালেই ভাইরাস সংক্রমণের ভয়। খাতায় কলমে তাই এখন হাজিরা হচ্ছে।’’

Advertisement

টিসিএস-এর রাজারহাট ক্যাম্পাসে আবার কাফেটেরিয়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সেখানকার কর্মী শ্রেয়া চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘কাফেটেরিয়াই অফিসের একমাত্র জায়গা, যেখানে সমস্ত প্রকল্পের লোক একসঙ্গে হন। এ ছাড়া অফিসের প্রতিটি তলেই যখন খুশি বেরোনোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। লিফট ব্যবহারও প্রায় নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। যখনই বেরোচ্ছি, শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। গায়ে জ্বর বুঝলেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ সেক্টর ফাইভের এক সংস্থা আবার শরীরের তাপমাত্রা বেশি দেখলে সংশ্লিষ্ট কর্মীর হাতে লাল রঙের ব্যান্ড পরাচ্ছেন। তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকা কর্মীকে পরানো হচ্ছে নীল ব্যান্ড।

ন্যাসকমের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান নিরুপম চৌধুরী জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের কর্মীদের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িতে থেকে কাজ করতে বলেছেন। খুব প্রয়োজন ছাড়া চাকরির সূত্রে ভ্রমণ এবং ব্যবসায়িক বৈঠক এড়িয়ে চলার জন্যও বলা হয়েছে। ন্যাসকমের আর এক কর্তা গগন সবরওয়াল বলেন, ‘‘সব সংস্থাই যত দূর সম্ভব নিজের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলছে।’’

তবে মোট কর্মীর ১৫ শতাংশকে বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা গেলেও সেই সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন হলে কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় অনেকেই। কারণ, সব কাজ করার পরিকাঠামো সকলের বাড়িতে থাকে না। সেক্টর ফাইভের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ‘সেক্টর ফাইভ স্টেক হোল্ডার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সহ সভাপতি কল্যাণ কর বলেন, ‘‘আরও বেশি কর্মীকে বাড়িতে থেকে কাজ চালাতে হলে কী করা হবে, তা দেখতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মুহূর্তে বিভ্রান্তিমূলক অনেক কিছু ঘুরছে। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলে, সচেতনতার প্রচারেরও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’ ওই সংগঠনেরই সভাপতি এস রাধাকৃষ্ণ ণ বলেন, ‘‘সেক্টর ফাইভের সব তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে নিয়ে আগামী সপ্তাহেই একটি বৈঠকের পরিকল্পনা চলছে।’’ সেক্টর ফাইভের প্রশাসনিক সংস্থা ‘নবদিগন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি’-র এক উচ্চ পদস্থ কর্তাও জানিয়েছেন, সচেতনতামূলক শিবির করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে ইতিমধ্যেই আবেদন করেছেন তাঁরা।

সব মিলিয়ে করোনা-মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তির চোখ আপাতত জরুরি তথ্য খোঁজার দিকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন