Coronavirus

উধাও চেনা ছন্দ, ধন্দে অটিস্টিকেরা

সম্মতিসূচক উত্তর তো আসেইনি, উল্টে প্রবল চিৎকার করে হাত-পা ছুড়তে শুরু করে আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাসিন্দা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোর সিদ্ধার্থ দে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস, দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০৩:২৮
Share:

প্রতীকী ছবি

হাল্কা নীল রং তার প্রিয়। তাই ওই রঙেরই মাস্ক দেখানো হয়েছিল তাকে। বলা হয়েছিল, ‘‘এটা মাস্ক। এখন কয়েক দিন পরতে হবে বাবা। পরে থাকবে তো?’’

Advertisement

সম্মতিসূচক উত্তর তো আসেইনি, উল্টে প্রবল চিৎকার করে হাত-পা ছুড়তে শুরু করে আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাসিন্দা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোর সিদ্ধার্থ দে। এখনও পর্যন্ত তাকে মাস্কের ধারেকাছে নিয়ে যেতে পারেননি অভিভাবকেরা। সিদ্ধার্থর বাবা, ব্যাঙ্ককর্মী শ্যামল দে বলেন, ‘‘এখন মাস্ক কথাটা শুনলেই অস্থির হয়ে উঠছে। আমাকে মাস্ক পরে দেখলেও চিৎকার করছে।’’

কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এটি। করোনা আতঙ্কের এই সময়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষেরা প্রবল সমস্যায় পড়েছেন বলে জানাচ্ছে তাঁদের পরিবার। শহরের একাধিক বিশেষ শিক্ষকের (স্পেশ্যাল এডুকেটর) দাবি, বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যাঁদের, তাঁরা নির্দিষ্ট নিয়মে চলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। যে কোনও বিষয় আগে থেকে জানানো হলে তাঁদের কাজ করতে সুবিধা হয়। কিন্তু গত কয়েক দিনে হঠাৎ করেই বদলে গিয়েছে জগৎ। বন্ধ হয়ে গিয়েছে বিশেষ স্কুল, সমস্ত ধরনের থেরাপি, স্পেশ্যাল এডুকেশন বা ভোকেশনাল ট্রেনিং। সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো বা পার্কে খেলাও এখন বন্ধ।

Advertisement

বছর পনেরোর অটিস্টিক কিশোর দেবায়ন দত্তের পরিবার জানাচ্ছে, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই স্কুলের পোশাক পরে ফেলে সে। কিন্তু গত কয়েক দিন তা করতে না দেওয়ায় বিভ্রান্ত দেবায়ন। তার মা আরতি দত্ত বলেন, ‘‘ছেলেকে এই ছুটির জন্য প্রস্তুত করার সময়টাই পাইনি। তাই সমস্যা হচ্ছে।’’ চৈতালি গামি নামে আর এক অভিভাবক জানান, যে কোনও বড় ছুটির আগে ছবি দেখিয়ে, কবে থেকে ছুটি এবং সেই সময়ে কী করা যায় সে কথা তাঁর মেয়েকে আগাম বলতে হয়। স্পেশ্যাল এডুকেশনের ভাষায় একে ‘সোশ্যাল স্টোরি’ করা বলে। চৈতালি বলেন, ‘‘এ বার নিজেরাই জানতে পারিনি, কী হতে চলেছে। মেয়েকে কী জানাব?’’

লকডাউনের মধ্যেই আবার কোনও কোনও অভিভাবককে কাজে যেতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী সময় ভাগ করে নিচ্ছেন সন্তানের জন্য। মোবাইল-কম্পিউটারে ব্যস্ত থেকে তাদের ‘স্ক্রিন টাইম’ যাতে বেড়ে না-যায়, সেই বিষয়টিও দেখতে হচ্ছে। অটিস্টিক শিশুদের একটা বড় অংশই সামাজিক যোগাযোগে অনিচ্ছুক বা অপারগ। স্ক্রিন টাইমের একমুখী যোগাযোগে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে তারা আরও বেশি করে নিজের মধ্যে গুটিয়ে যেতে পারে।

বিশেষ শিক্ষিকা কাকলি করের পরামর্শ, ‘‘এই ছুটির সময়টায় ওদের আরও বেশি সময় দিন। পাজ়ল জাতীয় বুদ্ধির খেলা খেলুন। পরিবারের ছবি দেখিয়ে কে কোন জন, জানতে চান।’’ অনেক বিশেষ শিক্ষক আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করে বিনামূল্যে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছেন। রান্না করা, কেক বানানো, মজার খেলনা তৈরির পাশাপাশি আঁকা বা হাতের কাজও শেখানো হচ্ছে সেখানে। বিশেষ শিক্ষিকা স্বাতী বসু বলেন, ‘‘কোনও কিছুই কিন্তু জোর করে করানো চলবে না। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওদের এমনিই মন খারাপ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন