Coronavirus

নেট-প্রার্থনায় সংক্রমণ রোধের ডাক

সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ লাগোয়া আর্চবিশপের আবাসের ছোট্ট চ্যাপেলেও একই পরিবেশ। রবিবার সকাল আটটায় সেই জনশূন্য ঘরের কোণ থেকেই ‘মাস’-এর অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলেন আর্চবিশপ টমাস ডি সুজা।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০১:৫০
Share:

জনশূন্য প্রার্থনাকক্ষে বিশপ পরিতোষ ক্যানিং। রবিবার, বিশপ ভবনে। নিজস্ব চিত্র

দল না-বেঁধে আলাদা থাকার সময় এটা। কিন্তু মনে মনে এটাই ‘বিশ্ব সাথে যোগে’ এক হওয়ার মুহূর্ত। আরও গভীর ভাবে পরস্পরের সান্নিধ্যটুকু অনুভবের সময়। খানিকটা এই সুরেই গমগম করছিল কলকাতার রবিবাসরীয় বিশপ ভবন। বিশপ পরিতোষ ক্যানিং গির্জায় যাননি। বিশপ ভবনের প্রার্থনা-কক্ষ থেকেই তাঁর প্রার্থনাসভার আচার-অনুষ্ঠান ছড়িয়ে পড়ল জনে জনে, বাংলায় চার্চ অব নর্থ ইন্ডিয়া-র অন্তর্ভুক্ত খ্রিস্টান সমাজে। ইউটিউবের মাধ্যমে অনেকেই সাক্ষী থাকলেন।

Advertisement

সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ লাগোয়া আর্চবিশপের আবাসের ছোট্ট চ্যাপেলেও একই পরিবেশ। রবিবার সকাল আটটায় সেই জনশূন্য ঘরের কোণ থেকেই ‘মাস’-এর অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলেন আর্চবিশপ টমাস ডি সুজা। ফেসবুক লাইভে দেখা গেল সেই দৃশ্য। শুক্রবার, ঠিক দেড় দিন আগে ভ্যাটিকানে যে ভাবে জনশূন্য সেন্ট পিটার্স স্কোয়ার থেকে সকলের জন্য প্রার্থনা করেছেন পোপ ফ্রান্সিস।

গুড ফ্রাইডের অনুষ্ঠান প্রায় দোরগোড়ায়। খ্রিস্টানদের জন্য অতি পবিত্র মহা উপবাস বা লেন্টের সময়। এই সময়ে অনেকেই নানা কৃচ্ছ্রসাধন করেন। প্রার্থনায় জোর দেন। ইস্টারের রবিবারের দু’টি রবিবার আগে গির্জার প্রার্থনায় ভিড় উপচে পড়ে কলকাতায়। করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের শরিক শহরে এই রবিবার ব্যতিক্রমী থেকে গেল। বিশপ পরিতোষ ক্যানিং বলছিলেন, “দেশের নেতারাই এখন ঈশ্বরের প্রতিনিধি। মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সতর্কতা-বিধি মেনে চলুন। এ ভাবেই করোনাকে হারানো সম্ভব।”

Advertisement

কিন্তু কমতি প্রতিরোধ ক্ষমতা যেখানে করোনাভাইরাসের সামনে মানুষকে আরও বিপন্ন করে তুলতে পারে, সেখানে উপবাস কি সবার জন্য সমান সহনীয় হবে? বিশপ বলেন, ‘‘অবশ্যই শরীর বাঁচিয়ে ধর্মের আচার পালন করবেন।’’ তবে তাঁর মতে, তালাবন্দির আবহে সঙ্কটের কথা ভেবে সংযত খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা ভাল। তা ছাড়া, জিশু সব সময়েই দুর্বল, অভুক্তদের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন। তাঁদের কথা ভুললে চলবে না। বিশপ ক্যানিংয়ের ব্যাখ্যা, “উপবাস বা কৃচ্ছ্রসাধন আসলে আত্মশুদ্ধির জন্য। করোনার সঙ্গে যুদ্ধে যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে, সেটাও এক ধরনের আত্মশুদ্ধি।”

আর্চবিশপের প্রার্থনায় খ্রিস্টান ধর্মের ক্ষমাভিক্ষা বা মার্সির কথা উঠে আসে। বিশ্বের এই সঙ্কটে আরও অহঙ্কারহীন ভাবে ঈশ্বরে সমর্পণে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন আর্চবিশপ। তাঁর মতে, “এই মার্সিও কিন্তু ঈশ্বরের উপরে সব ছেড়ে দিয়ে বসে থাকা নয়। এ হল ভুল সংশোধন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে আমাদের অনেক অভ্যাস শোধরানো প্রয়োজন, সেটা মাথায় রাখতে হবে।”

ইস্টারের গোটা উৎসব-পর্বেই গির্জা বন্ধ থাকছে। তাই অনলাইন উপস্থিতি থাকছে বিশপদের। প্রার্থনার পাশাপাশি কলকাতার ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট সমাজের তরফে দরিদ্রসেবাও চলছে। জমায়েত এড়িয়ে বিভিন্ন গির্জার মাধ্যমে ক্ষুধার্তদের খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন