সহায়তা: সেই তরুণীর বাড়িতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। বৃহস্পতিবার রাতে। নিজস্ব চিত্র।
গভীর রাতে করোনা আক্রান্ত এক সরকারি চিকিৎসকের ভিডিয়ো কলে দেওয়া পরামর্শে প্রাণে বাঁচলেন সোনারপুরের সংক্রমিত এক তরুণী।
বৃহস্পতিবার রাত তখন প্রায় ২টো। সোনারপুর থানা এলাকার কালিকাপুরের বাসিন্দা, করোনা আক্রান্ত শুভ্রা চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হতে শুরু করে। গভীর রাতে সে সময়ে কারও কাছে সাহায্য না পেয়ে শেষে বারুইপুরের চম্পাহাটির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে সাহায্য চায় তাঁর পরিবার। সেই সংস্থার কর্ণধার প্রসেনজিৎ মিস্ত্রি এর পরে যোগাযোগ করেন সরকারি চিকিৎসক ইন্দ্রনীল বর্গীর সঙ্গে। সম্প্রতি ইন্দ্রনীলবাবু নিজেই সংক্রমিত হয়ে বাড়িতে কোয়রান্টিনে রয়েছেন। তা সত্ত্বেও গভীর রাতে প্রসেনজিতের ফোন পেয়ে তিনি ওই তরুণীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপের পরামর্শ দেন।
এর পরে আর সময় নষ্ট না করে অক্সিমিটার, অক্সিজেন সিলিন্ডার, পিপিই কিট-সহ নিজের দলবল নিয়ে ওই তরুণীর বাড়ি পৌঁচ্ছে যান প্রসেনজিৎ। দেখেন, প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে ওই তরুণীর। তখন তাঁরা ইন্দ্রজিৎবাবুকে ভিডিয়ো কল করেন এবং শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করেন। দেখা যায়, ওই তরুণীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে দাঁড়িয়েছে ৮১-তে! চিকিৎসককে সে কথা জানানো হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওই তরুণীকে অক্সিজেন এবং কিছু ওষুধ দেওয়ার পরামর্শ দেন। এর পরে এনআর বিএম মাক্স-র মাধ্যমে তরুণীকে অক্সিজেন দেওয়া শুরু হয়। ধীরে ধীরে তাঁর শ্বাসকষ্ট কমতে থাকে। ভোরের দিকে প্রায় স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন ওই তরুণী।
রাতে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে এক দিকে ভিডিয়ো কলে চিকিৎসকের পরামর্শ এবং সেই অনুযায়ী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যদের সাহায্যেই ওই তরুণী রাতেই বিপদ কাটিয়ে উঠেছেন বলে মনে করছেন তাঁর পরিজনেরা। চিকিৎসক ইন্দ্রনীলবাবুর কথায়, ‘‘আমি সুন্দরবনের নানা জায়গায় সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে কাজ করেছি। গভীর রাতে রোগীর কাছে পৌঁছে যেতাম। রাতে কোনও ফোন আসলে আমিই কথা বলি। নিজে সংক্রমিত হওয়া সত্ত্বেও প্রসেনজিৎবাবুর ফোন পেয়ে তাঁদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছিলাম। এর পরে ভিডিয়ো কলে রোগীকে দেখে তাঁর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী পরামর্শ দিতে থাকি। আমার থেকেও বেশি পারদর্শিতার সঙ্গে কাজ করেছেন ওই সংস্থার সদস্যেরা।’’
আর সংক্রমিত তরুণীর দিদি সুস্মিতা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘ওই রাতে চিকিৎসক এবং প্রসেনজিতের দলের সাহায্য না পেলে বোনের অবস্থার আরও অবনতি হত। প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল।’’
তবে শুক্রবার সকালে ফের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিয়েছিল ওই তরুণীর। সেই সময়ে তাঁকে বারুইপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়েছে বলে পরিবার সূত্রের খবর।