প্রতীকী ছবি
চিকিৎসাক্ষেত্রের কর্মী, তবে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন। তা সত্ত্বেও রেহাই মেলেনি।
স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে ওই হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মী নন, এমন লোকজনও নিজেদের এলাকায় কার্যত একঘরে হয়ে গিয়েছেন। এমনকি তাঁদের মধ্যে দু’জনকে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা ফোন করে জানিয়েছেন বাড়ি থেকে না বেরোতে। এক জনকে প্রতিবেশীরা বলেছেন, হাসপাতালমুখো হলে আর এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। আর অপর জনকে বলা হয়েছে, বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে! অভিযোগ, ওই দু’জনের সঙ্গে এমন ব্যবহারকারীদের বিরোধিতা করেননি জনপ্রতিনিধিরাও।
হাসপাতালে কাজ করার ‘অপরাধে’ হেনস্থার শিকার হওয়ার ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়। সম্প্রতি বেলেঘাটা আইডির অ্যাকাউন্টস বিভাগের এক মহিলা কর্মী রানাঘাটের গ্রামে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। সেই ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।
তবে পার্ক সার্কাসের ওই শিশু হাসপাতালের ১৪ জন স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা পজ়িটিভ হওয়ার খবর জানা যায় মঙ্গলবার। অভিযোগ, তার পরেই শুরু হয় ‘হেনস্থা’। ওই হাসপাতালে কর্মরত ওই দুই কর্মী জয়নগর পুরসভা এলাকার বাসিন্দা। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা যে কর্মী, তিনি জরুরি বিভাগের ক্যাশ কাউন্টারে বসেন। বুধবার তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘আজ সকালে পুরসভা থেকে ফোন করে বলা হয়েছে বাড়ির বাইরে না বেরোতে। হাসপাতালে গেলে আর বাড়ি ফিরতে দেওয়া হবে না।’’ অপর কর্মী ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিভাগের কাজকর্ম দেখাশোনা করেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার খবর জানাজানি হতেই রটে যায় যে, আমার করোনা হয়েছে। এর পরে আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়েরা, যাঁরা আশপাশেই থাকেন, আমাকে বাড়ি থেকে না বেরোনোর জন্য জোর করতে থাকেন। আমার মাকে উঠোনে রান্নাঘরে যেতে বারণ করা হয়। পাড়ার লোকজন বলেছেন, কথা না শুনলে বাড়িতে তালা দিয়ে দেওয়া হবে। কাউন্সিলরের স্বামীকে এ নিয়ে কেউ ফোন করলে তিনিও আমাকে বাড়িতে থাকতে বলেন।’’
আরও পড়ুন: মেডিক্যালে শুধুই করোনার চিকিৎসা
ঘটনার কথা স্বীকার করে স্থানীয় কাউন্সিলর বুলবুল ঘোষের স্বামী কুমারেশবাবুর যুক্তি, ‘‘মানুষ ভয় পাচ্ছে। ওই ছেলেটি যে আক্রান্ত নার্সের ঘরে গিয়ে পাখা-আলো ঠিক করেনি, তার নিশ্চয়তা কোথায়? হাসপাতালের যদি ওকে এত দরকার, তা হলে সেখানেই রাখুক।’’
৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান তুষারকান্তি রায়ের বক্তব্য, ‘‘ছেলেটি যেখানে চাকরি করে সেখানে করোনা হয়েছে। এলাকার লোকেরাই তাঁকে হাসপাতালে যেতে বারণ করছেন। জনপ্রতিনিধিদের বলা হচ্ছে কোনও কিছু ঘটলে তার দায়িত্ব নিতে হবে। তা-ও বিষয়টি কী ঘটেছে দেখা হবে।’’
ওই হাসপাতালের অধিকর্তা অপূর্ব ঘোষের অভিযোগ, ‘‘স্থানীয় চিকিৎসকের সঙ্গে কথা না বলে এ ভাবে কাউকে কোয়রান্টিন করার অধিকার কারও নেই। এটা মানুষকে খুশি রেখে ভোটের রাজনীতির সময় নয়। ওই দুই কর্মী হাসপাতালের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কাজ করেন। এ ভাবে চললে তো হাসপাতালই বন্ধ করে দিতে হবে। অসুস্থ শিশুদের নিয়ে বাবা-মায়েরা তখন কোথায় যাবেন?’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)