Corona

পুর প্রতিনিধি নেই, কোভিডে নাগরিক পরিষেবা কী ভাবে

এ বছর পুরসভা হেল্পলাইন চালু করলেও সেখান থেকে সাহায্য মিলছে না বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২২
Share:

ফাইল চিত্র।

শুক্রবার দুপুর আড়াইটে। কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুমের নম্বরে (০৩৩-২২৮৬১২১২) জানানো হল, “টালা পার্কের কাছের একটি বাড়িতে এক বৃদ্ধ দীর্ঘ ক্ষণ ধরে অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছেন। অ্যাম্বুল্যান্স পাঠান।” ফোনের ওপ্রান্ত থেকে প্রায় ঝাঁঝিয়ে জনৈক কর্মী বলেন, “পুলিশকে বলুন। পুলিশ জানালে তবেই শুনব।” জানানো হয়, পুলিশই পুরসভাকে জানাতে বলেছে। কথোপকথন শেষ হতে না হতেই ওই কর্মী ফোন কেটে দিলেন।

Advertisement

করোনা কালে যার উপরে ‘ভরসা’ করে বুক বাঁধছে আমনাগরিক, সেই কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুমেরই এই হাল! এই পুরসভায় এখন কাউন্সিলর, ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর বলে কেউ নেই। গত বছর লকডাউনে এবং পরবর্তী করোনা আবহে স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরকে ফোন করে সহযোগিতা পেয়েছেন নগরবাসী। এক পুর আধিকারিক বলেন, “কাউন্সিলর বা ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর মধ্যস্থতা
করেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ওই পদ লুপ্ত হওয়ায় পরিষেবা পেতে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন নাগরিক।”

এ বার তাই নাগরিকদের সঙ্গে নিয়েই করোনা-যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। পুর এলাকার অধীনে থাকা বহুতল এবং আবাসনগুলির কমিউনিটি হলে আইসোলেশন সেন্টারের পরিকাঠামো রাখতে অনুরোধ করেছেন কর্তৃপক্ষ। কারণ, আবাসন বা বহুতলের বাসিন্দাদের সংক্রমণের আশঙ্কা নিয়ে বেশি চিন্তিত তাঁরা। কমিউনিটি হলে শয্যা, অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধা-সহ চিকিৎসার পরিকাঠামো থাকলে, সংক্রমিত নিজের আবাসনে এবং পরিবারের কাছাকাছি থাকতে পারবেন। শুক্রবার শহরের প্রতিটি বহুতল এবং আবাসনের সোসাইটি কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে সে কথাই জানিয়েছেন পুর কমিশনার বিনোদ কুমার।

Advertisement

কাউন্সিলর বা ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর না থাকায় পুর প্রশাসন ও নাগরিক সমাজে সেতু বন্ধনের কাজ যে থমকে গিয়েছে, তা পুরসভার কন্ট্রোল রুমে ফোন করে সাহায্য না পাওয়ার একাধিক অভিযোগেই স্পষ্ট। এমনকি অভিযোগ, এখন বহু ক্ষেত্রেই বাড়িতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে আতঙ্কে কেউ সৎকারে এগিয়ে আসছেন না। বৃহস্পতিবার রাত থেকে গরফার একটি বাড়িতে পড়ে থাকা দেহ সে কথাইজানান দেয়। যার প্রেক্ষিতে পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য,“কন্ট্রোল রুমে ফোন এলেই তা গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও কর্মীর বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণ হলে কড়া শাস্তি হবে।” এক বিদায়ী কাউন্সিলর দেবলীনা বসুর কথায়, “গত বছর করোনায় কেউ মারা গেলে সৎকারের জন্য আগে আমাকে ফোন করতেন। সব ব্যবস্থা করতাম। এখন ফোন করলে বড়জোর পুরসভার কন্ট্রোল রুমের নম্বরটা দিয়ে দিতে পারি।’’

কাউন্সিলর বা ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর না থাকায় ভুক্তভোগী বিধাননগর পুরসভার ৪১টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারাও। অভিযোগ, করোনা হলে কোথায়, কী ভাবে যোগাযোগ করা যাবে সেটাই তো ধোঁয়াশা। করোনা নিয়ে প্রচার, সংক্রমিতের বাড়ি এবং সংলগ্ন এলাকা জীবাণুমুক্ত করার কাজ গত বছর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি করাতেন। অ্যাম্বুল্যান্স, শববাহী যান, হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে তাঁদের যে সহযোগিতা পাওয়া যেত এ বার সে সবের কী হবে? প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা।

বিধাননগরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার কথায়, ওয়ার্ডে একাধিক পরিবারকরোনায় আক্রান্ত। কিন্তু জীবাণুনাশের কাজে তৎপরতাই নেই। বিদায়ী কাউন্সিলর অনিতা মণ্ডল জানান, সমস্যা অবশ্যই হচ্ছে। পুর কর্মীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনিও ব্যক্তিগত ভাবে চেষ্টা করছেন। একই বক্তব্য ৩৮ নম্বর এবং ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের দুই বিদায়ী কাউন্সিলর নির্মল দত্ত এবং তুলসী সিংহ রায়ের।

এই সমস্যা নিয়ে সরাসরি মুখ খুললেন না বিধাননগর পুরসভার বিদায়ী মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী। তিনি জানান, রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো সমস্ত পরিষেবা দেওয়ার কাজ চলছে। বাসিন্দাদের সমস্যা তাঁরা আধিকারিকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। আধিকারিকদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পরিষেবা বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। যদিও বাস্তব অন্য কথা বলছে।

প্রশাসকের দ্বারা পরিষেবা পাওয়ার সমস্যা হাওড়াবাসী দীর্ঘদিন ধরেই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। তিন বছর নির্বাচিত পুরবোর্ড নেই সেখানে। প্রশাসকের দায়িত্বে চলছে ৬৬টি ওয়ার্ডের পুরসভা। পুর পরিষেবায় খামতি হচ্ছে বলে অভিযোগও উঠছে। এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন, কোভিডেও কেন পুরসভা নিষ্ক্রিয়?

হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জেলায় ২৪ ঘণ্টায় কোভিডে আক্রান্ত ৭০০মানুষের ৫০০ জনই পুর এলাকার। কিন্তু অভিযোগ, গত বছরের মতো এখনও পর্যন্ত সংক্রমিত রোগীর বাড়ি, জনবহুল এলাকা বা বাজারগুলি জীবাণুমুক্ত করার কাজ শুরু করেনি পুরসভা।

পুরসভার একাধিক চিকিৎসক থাকলেও আক্রান্তদের জন্য চালু হয়নি টেলি-মেডিসিন। গত বছরের মতো এ বছর দল গড়ে ওয়ার্ডগুলিতে চালু হয়নি কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং। অভিযোগ, পুরসভার চিকিৎসক থাকলেও ২২টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ। সেগুলির কয়েকটি প্রতিষেধক প্রদান ও কয়েকটি করোনা পরীক্ষায় ব্যবহার হচ্ছে।

অভিযোগ, গত বছর পুরসভা নিজেই হেল্পলাইন চালু করেছিল। সংক্রমিত ব্যক্তি কোথায় ভর্তি হবেন, কী ওষুধ খাবেন বা বাড়িতে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানোর সব দায়িত্ব নিয়েছিল পুরসভা। অথচ এ বছর পুরসভা হেল্পলাইন চালু করলেও সেখান থেকে সাহায্য মিলছে না বলে অভিযোগ।

অর্থাৎ, মধ্যস্থতাকারীর অভাবে তিন পুরবাসীর পরিষেবা পেতে নাস্তানাবুদ অবস্থা কোভিডে এ বার নতুন সমস্যা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন