Coronavirus

কোয়রান্টিন কেন্দ্রে মিলছে জ্বর মাপার কাজ, অভিযোগ আয়ুষ চিকিৎসকদের

আয়ুষ চিকিৎসকদের অভিযোগ, একাধিক কোয়রান্টিন কেন্দ্রে তাঁদের ডিউটি দেওয়া হলেও তাঁদের নিজস্ব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে না দিয়ে, বাধ্য করা হচ্ছে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ দিতে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২০ ০৪:০১
Share:

প্রতীকী ছবি

করোনা-চিকিৎসায় রাজ্যের কয়েক হাজার আয়ুষ চিকিৎসককে রাজ্য সরকার মোটেই সঠিক ভাবে ব্যবহার করছে না। এমনই অভিযোগ করেছেন সরকারি আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ।

Advertisement

আয়ুষ চিকিৎসকদের অভিযোগ, একাধিক কোয়রান্টিন কেন্দ্রে তাঁদের ডিউটি দেওয়া হলেও তাঁদের নিজস্ব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে না দিয়ে, বাধ্য করা হচ্ছে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ দিতে। অর্থাৎ, যে স্বাস্থ্য দফতর এত দিন ক্রসপ্যাথিকে অপরাধ বলে এসেছে, আয়ুষ চিকিৎসকদের ডিউটি করা নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে, তারাই এখন করোনার আবহে নিজেরাই সেই কাজ করছে।

তাঁদের অভিযোগ, করোনা প্রতিরোধে আয়ুর্বেদ বা হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসাপদ্ধতির কথা বলা হলেও তাঁদের সেটা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি অনেক কোয়রান্টিন কেন্দ্রে আয়ুষ চিকিৎসকদের দিয়ে রোগীদের শুধু জ্বর মাপানো হচ্ছে, প্যারাসিটামল, অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ানো হচ্ছে বা স্রেফ ফাইফরমাশ খাটানো হচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: অমিল ন্যাপকিন, ঋতু-সমস্যা আছে অন্তরালেই

রাজ্যে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অল বেঙ্গল বিএএমএস ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে শুরু করে ‘পশ্চিমবঙ্গ আয়ুর্বেদ পরিষদ’ কিংবা ‘অল ইন্ডিয়া হোমিওপ্যাথ স্টুডেন্টস অ্যান্ড ইউথ অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে শুরু করে ‘ন্যাশনাল আয়ুর্বেদ স্টুডেন্টস অ্যান্ড ইউথ অ্যাসোসিয়েশন’—প্রত্যেকে আলাদা-আলাদা ভাবে নবান্ন ও স্বাস্থ্য ভবনে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছে।

ক্ষুব্ধ রাজ্যের আয়ুষ চিকিৎসকদের মতে, স্বাস্থ্য মন্ত্রক কোভিড মোকাবিলায় আয়ুর্বেদের গুরুত্ব স্বীকার করে আলাদা চিকিৎসা বিধি তৈরি করেছে। গুজরাত, কেরল, পঞ্জাব, দিল্লি-সহ দেশের অন্তত ১২টি রাজ্যে করোনার মোকাবিলায় আয়ুষ চিকিৎসা বিধি (প্রোটোকল) তৈরি হয়েছে এবং তাতে অত্যন্ত ভাল ফল মিলেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে প্রতিদিন করোনা-আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও আয়ুর্বেদ বা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকে ব্যবহারের কোনও উৎসাহ নেই।

গত ২৮ মার্চ, ২ এপ্রিল, ২৫ এপ্রিল আলাদা-আলাদা নির্দেশ জারি করে বহু আয়ুষ চিকিৎসককে বিভিন্ন হাসপাতাল ও আয়ুষ ডিসপেন্সারি থেকে রাজারহাট-সহ একাধিক কোয়রান্টিন সেন্টারে এবং ফিভার ক্লিনিকে ডিউটির জন্য তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই চিকিৎসকেরা সেখানে আয়ুর্বেদ বা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতে পারছেন না বলে অভিযোগ।

‘পশ্চিমবঙ্গ আয়ুর্বেদ পরিষদ’ গত এপ্রিলের মাঝামাঝি করোনা প্রতিরোধে একটি চিকিৎসা বিধি তৈরি করে রাজ্যের ডিরেক্টর জেনারেল (আয়ুষ) শরদ দ্বিবেদীকে পাঠায়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্য ভবন থেকে এর কোনও উত্তর আসেনি। ‘অল বেঙ্গল বিএএমএস ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর চেয়ারম্যান পার্থ সরকারের কথায়, ‘‘জ্বর মাপা আর প্যারাসিটামল দেওয়া কি আমাদের কাজ?’’ যদিও শরদ দ্বিবেদীর দাবি, ‘‘ওঁদের তো আয়ুষ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে বারণ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মনে করলে সেখানকার কোয়রান্টিন কেন্দ্রে আয়ুষ চিকিৎসা চালু করতে পারেন।’’

কিন্তু একই কোয়রান্টিন কেন্দ্রে আয়ুষ চিকিৎসক ও অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক উভয়ই থাকলে কী ভাবে চিকিৎসা হবে? কেনই বা আয়ুষ চিকিৎসকদের দিয়ে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ দেওয়ানো হচ্ছে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে? উত্তরে ডিরেক্টর জেনারেল শুধু বলেন, ‘‘এই সব কিছু মুখ্য সচিবকে জিজ্ঞাসা করুন।’’

‘অল ইন্ডিয়া হোমিওপ্যাথিক স্টুডেন্টস অ্যান্ড ইউথ অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে চিকিৎসক কিংশুক গোস্বামী বলেন, ‘‘আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতিতে আর্সেনিক অ্যালবামের মতো ওষুধ আছে যা দিয়ে কলকাতা পুরসভা কোভিডের চিকিৎসা শুরু করেছে। অথচ স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আমরা ব্রাত্য।’’ তিনি জানান, হাওড়া, ট্যাংরা, রাজাবাজার ও মেদিনীপুরে চারটি হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। সেখানে করোনার চিকিৎসার সব পরিকাঠামো রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সরকার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে রোগীদের রাখছে অথচ আমাদের হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে।’’

আরও পড়ুন: দূরত্ব বিধি মেনে পরিষেবা, প্রস্তুতি নিচ্ছে মেট্রো

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন