COVID-19

কোভিডের মধ্যেও সফল অস্ত্রোপচার, জীবন পেলেন  দু’জন রোগী

অস্থি বিভাগের ওই দুই রোগীই সুস্থ রয়েছেন।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪৯
Share:

হাসপাতালে পারমিতা নস্কর। নিজস্ব চিত্র ।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ক্রমশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। পরিস্থিতি এমনই যে, ব্রেন ডেথ ঘোষণা হওয়ার পরে পরিজনেরা অঙ্গদান করতে চাইলেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আবার অধিকাংশ হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার কারণে, অন্য চিকিৎসা করাতে যেতেও ভয় পাচ্ছেন রোগীর বাড়ির লোক। এই পরিস্থিতিতে সমস্ত চাপ কাটিয়ে শহরের এক সরকারি হাসপাতাল বাঁচাল দু’জনকে।

Advertisement

সম্প্রতি ওই দুই অস্ত্রোপচারই হয়েছে শহরের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমে। কর্তৃপক্ষ জানান, অস্থি বিভাগের ওই দুই রোগীই সুস্থ রয়েছেন। এক জনের ছুটি হয়ে গেলেও, আর এক জন এখনও হাসপাতালে। তবে শীঘ্র তাঁকেও ছেড়ে দেওয়া হবে। অস্থি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মুকুল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দুই রোগীর মধ্যে এক জন করোনা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও আমরা অস্ত্রোপচার করেছি। আর এক জনের ক্ষেত্রে তা না হলেও পুরো প্রক্রিয়াটি খুব জটিল ছিল। তবে সব বাধা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।’’ এসএসকেএমের উপরে চাপ কমাতে এবং পরিষেবার মাত্রা বাড়াতে সপ্তাহ তিনেক আগেই শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে চালু হয়েছিল অস্থি বিভাগ। কিন্তু বর্তমানে ওই হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা চালু হওয়ার কারণে আপাতত অন্য চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। ফলে ফের চাপ বেড়েছে এসএসকেএমের উপরে।

এসএসকেএম সূত্রের খবর, ১৭ এপ্রিল এক পথ-দুর্ঘটনায় ডান পায়ে মারাত্মক চোট পেয়ে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বুবাই বেরা। কিন্তু সমস্যার মাত্রা দেখে তাঁকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। ঘটনার দু’দিন পরে, ১৯ এপ্রিল
এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে ভর্তি হন ২২ বছরের ওই যুবক। চিকিৎসকেরা জানান, বুবাইয়ের পায়ের হাড় ভেঙেছিল। একই সঙ্গে শিরা-ধমনীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। গত ২০ এপ্রিল তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। পরের দিনই যুবকের কোভিড রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। তখন তাঁকে পাঠানো হয় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে।

Advertisement

চিকিৎসকেরা জানান, কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ওই যুবকের ডান পায়ে চোট পাওয়া অংশের রক্ত সংবহন ক্ষমতা নষ্ট হতে শুরু করেছিল। এর ফলে পায়ে পচন ধরতে শুরু করে। মুকুলবাবু বলেন, ‘‘পায়ের পচন ধরা অংশ বাদ না দিলে ওই যুবককে বাঁচানো মুশকিল হয়ে যেত। তাই কোভিড থাকা অবস্থাতেই শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ওঁর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।’’ গত ২৫ এপ্রিল ছুটি দেওয়া হয়েছে বুবাইকে।

এর পাশাপাশি নতুন জীবন পেয়েছে ১৪ বছরের এক কিশোরীও। ডান পায়ে ফোলা ও যন্ত্রণা, হাঁটতে না পারার সমস্যা নিয়ে কয়েক মাস ধরে এসএসকেএমে চিকিৎসা করাচ্ছিল পারমিতা নস্কর। বায়োপসি করে কিশোরীর পায়ের হাড়ে ক্যানসার ধরা পড়ে। তার পরে হাসপাতালে ভর্তি করে পিইটি বা পেট সিটি স্ক্যান করে দেখা যায়, পারমিতার ডান পায়ের থাইয়ের অংশের হাড়েই ক্যানসারটি বাসা বেঁধেছে। শরীরের অন্যত্র তা ছড়ায়নি। চিকিৎসকেরা জানান, এর পরে পিজি-তেই শুরু হয় কেমোথেরাপি।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই কিশোরীর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়, তার পা বাঁচাতে হবে।
মুকুলবাবু বলেন, ‘‘তখনই ‘টোটাল ফিমোরাল এন্ডোপ্রস্থেসিস’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই অস্ত্রোপচার রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে প্রথম। ওই পদ্ধতিতে পুরো ‘ফিমার বোন’ বদলানোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু টাইটানিয়ামের তৈরি ওই অংশটির দাম প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। তাই আগে হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষের থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়।’’ গত ২৩ এপ্রিল প্রায় ছ’ঘণ্টা ধরে চলে সেই অস্ত্রোপচার। মুকুলবাবু জানান, পারমিতার ডান দিকের থাইয়ের মাংসপেশী কেটে ক্যানসার আক্রান্ত ফিমার বোন ও টিসু বাদ দেওয়া হয়। তার পরে কৃত্রিম অংশটি কোমরের সংযোগস্থল থেকে হাঁটু পর্যন্ত প্রতিস্থাপন করা হয়।

এখন হাসপাতালের শয্যায় বসে প্রিয় সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্পসমগ্র পড়েই সময় কাটছে পারমিতার। তবে নিয়ম করে মা পুতুলদেবীর হাত ধরে হাঁটার অভ্যাসে খামতি রাখছে না দশম শ্রেণির ছাত্রীটি। বলছে, ‘‘দক্ষিণ ২৪ পরগনারনরহরিপুর আমার গ্রাম। কবেআবার সেখানে ফিরব, তারই অপেক্ষায় আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন