Coronavirus Lockdown

আনলক-১ শুরু হতেই যানজটে ‘লকড’ কলকাতার বহু রাস্তা

পুলিশের দাবি, বাস খুব কম সংখ্যায় রাস্তায় থাকায় ছোট গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। বেড়েছে বাইকের সংখ্যাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২০ ১৫:৩৪
Share:

লকগেট ফ্লাইওভারে স্তব্ধ যান চলাচল, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা। নিজস্ব চিত্র

১৯ কিলোমিটার পথ পেরোতে সময় লাগছে ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট! আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে, ১ ঘণ্টায় গড়িয়ে গড়িয়ে আর থামতে থামতে যাওয়া যাচ্ছে মেরেকেটে সাড়ে ৬ কিলোমিটার! আনলকডাউনের প্রথম দফা ঘোষণা হওয়ার পর, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন এমনটাই হাল বিটি রোডের। টালা সেতু যান চলাচলের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রথম সপ্তাহের সেই যান যন্ত্রণার দুঃস্বপ্নটা ফিরে এল সোমবার।

Advertisement

কেবল বিটি রোড নয়, তীব্র যানজটে হাঁসফাঁস অবস্থা সায়েন্স সিটি থেকে কামালগাজি পর্যন্ত ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের বিস্তীর্ণ অংশ। প্রচুর গাড়ির চাপে মন্থর বেলেঘাটা মেন রোড থেকে শুরু করে পূর্ব এবং দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন রাস্তা। আর সেই সঙ্গে রাস্তার ধারে ধারে অফিস যাত্রীদের লম্বা লম্বা লাইন সরকারি বাসের জন্য প্রতীক্ষায়। যে লাইন লকডাউনের প্রথম দফায় রেশন দোকানের লাইনকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে কখনও কখনও।

ব্যারাকপুর বা সোদপুর থেকে ডানলপ পর্যস্ত রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি থাকলেও, গাড়ি থেমে যাচ্ছে না। কিন্তু ডানলপ পেরনোর পর দেখা গেল অন্য ছবি। সামনে লম্বা গাড়ির সারি। গড়ে তিন-চার মিনিট দাঁড়িয়ে থাকাপ পর কয়েকশো গজ এগিয়ে ফের থেমে যাচ্ছে গাড়ি। ছবিটা সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত বিটি রোডের কলকাতা অভিমুখের রাস্তার। উল্টো দিকে, অর্থাৎ যে রাস্তাটি ব্যারাকপুরের দিকে যাচ্ছে সেটি তখন অনেক ফাঁকা। গাড়ি যত শ্যামবাজারের দিকে এগোচ্ছে ততই থমকে দাঁড়িয়ে থাকার সময় বেড়ে যাচ্ছে। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কয়েকশো গাড়ির লাইন প্রায় ৮ মিনিট ধরে স্তব্ধ হয়ে রইল। আরও খানিকটা এগোলে লকগেট ফ্লাই ওভারে ওঠার রাস্তা। সেখানে দাঁড়িয়ে যান নিয়ন্ত্রণ করছেন কলকাতা পুলিশের খাকি পোশাকের এক জন হোমগার্ড। অত গাড়ি সামলে রাস্তা সচল রাখতে গলদঘর্ম অবস্থা তাঁর।

Advertisement

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিটি রোডে যানজটের চেহারা। নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: তপ্ত ভারত-চিন সীমান্ত, মধ্যস্থতা করতে চেয়ে টুইট ডোনাল্ড ট্রাম্পের​

আশা করা হয়েছিল উড়ালপুলে একবার উঠতে পারলে গতি বাড়বে গাড়ির। কিন্তু বাস্তবে হল উল্টো। উড়ালপুলেও বারে বারে থমকে গিয়ে প্রায় ১০ মিনিট পরে উড়ালপুলের অন্য পাড়ে গিয়ে দেখা গেল গোটা রাস্তাটাই প্রায় ঘেঁটে ‘ঘ’ হয়ে গিয়েছে। উত্তরমুখী গাড়ি চিৎপুর লেভেল ক্রসিংয়ের রাস্তা ধরার চেষ্টা করছে, তার মধ্যেই দুটো-তিনটে লাইনে উড়ালপুল থেকে গাড়ি ক্ষিরোদ বিদ্যা বিনোদ অ্যাভিনিউতে। তার ফলে উত্তর-দক্ষিণমুখী দুই রাস্তাতেই তীব্র যানজট। শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত সেই যানজট। তার পর থেকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতে অনেকটাই স্বাভাবিক হয় গাড়ির গতি।

উত্তরে মতো দক্ষিণ থেকে যাঁরা বাইপাস ধরে এসেছেন তাঁদেরও দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। অম্বেডকর সেতুর থেকে শুরু হওয়া জ্যামের জের অফিস টাইমে পৌঁছে গিয়েছিল কামালগাজি পর্যন্ত। গাড়ি খুবই মন্থর চলেছে আরও অনেক রাস্তাতেই।

কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক শাখার শীর্ষ আধিকারিকরা এই যানজটের কথা স্বীকার করছেন। বিটি রোডের জ্যামের জন্য তাঁরা দায়ী করেছেন আরজিকর সেতু-র একটি অংশ মেরামতের জন্য বন্ধ থাকা। গত কয়েক দিন ধরেই কাজ চলছে ওই উড়ালপুলে। লকডাউনের মাঝেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল ওই উড়ালপুলের। বিশেষজ্ঞরা অবিলম্বে সেতুর উপর ভার কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাই সেতুর উপরে থাকা অ্যাসফল্টের আস্তরণ চেঁচে তোলা হচ্ছে। টালা সেতু বন্ধ হওয়ার পর, উত্তর শহরতলির মানুষদের সবচেয়ে বড় ভরসা ছিল এই সেতু। সেটি প্রায় বন্ধ থাকায়, পুরো ভিড়টাই গিয়ে পড়ে লকগেট উড়ালপুলে।

আরও পড়ুন: অজস্র ছাড় পঞ্চম দফায়, কিন্তু কলকাতা সচেতন আছে তো?​

পুলিশ কর্তাদের দাবি, বাস বা গণপরিবহণ খুব কম সংখ্যায় রাস্তায় থাকায় ছোট গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বাইকের সংখ্যা। হঠাৎ করে এই গাড়ির সংখ্যার এই বিপুল বৃদ্ধি গোটা শহরেই সামগ্রিক ভাবে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ বলে দাবি পুলিশের। সেই সঙ্গে পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, অনেক জায়গাতেই আমপানে উপড়়ে যাওয়া গাছের ডালপালা রাস্তার পাশে জড়ো করে রাখা রয়েছে। তার ফলে রাস্তার পরিসর সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে জায়গায় জায়গায়।

তবে পুলিশ সূত্রে খবর, পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশও এ দিন রাস্তায় ছিলেন না। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে, ঝড়ে বিকল হয়ে যাওয়া বেশ কিছু সিগন্যাল এবং সিসি ক্যামেরা। অনেক জায়গায় ক্যামেরা অকেজো থাকায় কন্ট্রোল রুম থেকে নজরদারিতে ঘাটতি হচ্ছে এবং জ্যাম সামলাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দেরি হচ্ছে। তবে বাস চালু হলে ছোট গাড়়ি এবং বাইকের ভিড় কমবে বলেই আশা ট্রাফিক পুলিশের।

এ দিনও দেখা গেল শহরের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি বাস ধরার জন্য অফিস যাত্রীদের লম্বা লাইন। সরকারি বাসগুলো নির্দেশিকা অনুযায়ী সিট সংখ্যার বেশি যাত্রী নিচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে জোর করে ওঠার চেষ্টা করছেন দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করে থাকা যাত্রীরা। ফলে বাসচালক এবং কন্ডাক্টরের সঙ্গে শুরু হচ্ছে বচসা। অফিসযাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, সরকারি বাসের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। আর তার সুযোগ নিচ্ছে অটো। অভিযোগ, ইচ্ছে মতো ভাড়া দাবি করছেন অটোচালকরা।

ডানলপে এস ৯-এ বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের লম্বা লাইন। নিজস্ব চিত্র

সব মিলিয়ে, আনলকডাউনের প্রথম দিন, গোটা শহরের মরিয়া হয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টাটাই বেছন্দের কারণ হয়ে দাঁড়াল রাস্তাঘাটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন